প্রতিবেদন : মহানদীর তীরে জ্বলল মশাল। পিছিয়ে পড়েও বদলার ডার্বি জিতে সুপার কাপের সেমিফাইনালে চলে গেল ইস্টবেঙ্গল (East Bengal- Mohun Bagan)। বিদায় মোহনবাগানের। ভুবনেশ্বরে সবুজ-মেরুনকে ৩-১ গোলে দুরমুশ করে মরশুমের তৃতীয় ডার্বি রাঙিয়ে দিল লাল-হলুদ ব্রিগেড। জোড়া গোলে ডার্বির নায়ক ক্লেটন সিলভা। ডুরান্ডে মরশুম শুরুর ডার্বির নায়ক নন্দকুমারও এদিন গোল পেলেন। প্রথম ২০ মিনিট ছাড়া ম্যাচের বাকি সময় নিখুঁত ফুটবল উপহার দিলেন কার্লেস কুয়াদ্রাতের ছেলেরা। অন্যদিকে, প্রথম সারির ৯ ফুটবলার না থাকার অভাব টের পেল মোহনবাগান। তবু সব বিদেশি থাকা সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গলকে টেক্কা দিতে পারেনি তারা। হেক্টর ইয়ুস্তের গোলে শুরুতে এগিয়ে গিয়েও ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি মোহনবাগান। কোচের দায়িত্ব ফিরে পাওয়া অ্যান্তোনিও লোপেজ হাবাস ছিলেন গ্যালারিতে। বেঞ্চে থাকা ক্লিফোর্ড মিরান্ডার কোনও স্ট্র্যাটেজিই কাজ করেনি।
ভুবনেশ্বরে দুই প্রধানের সমর্থকদের ঢল নেমেছিল। কলকাতা থেকে প্রচুর সমর্থক এসেছিল প্রিয় দলের জয় দেখতে। সবুজ-মেরুন আবির আর আতশবাজিতে ম্যাচ শুরুর আগেই রঙিন হয়েছিল কলিঙ্গ স্টেডিয়াম চত্বর। কম যাননি লাল-হলুদ সমর্থকরাও। ম্যাচের পর ছবিটা বদলে যায়। মরশুমে দ্বিতীয়বার ডার্বি জিতে কলিঙ্গের দখল নেয় লাল-হলুদ জনতা।
আরও পড়ুন- মৃত অগ্নিবীরের প্রাপ্য সম্মান চান শোকার্ত বাবা
ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজার পর গ্যালারির ফোকাস শুধুই কলিঙ্গের সবুজ মাঠে। টানটান উত্তেজনার মধ্যে ম্যাচ শুরুর দু’মিনিটের মধ্যে আর্মান্দো সাদিকুর শট জালে। মোহনবাগান সমর্থকরা উচ্ছ্বাসে মাতলেও ততক্ষণে অফসাইডের ফ্ল্যাগ উঠেছে সহকারী রোফারির হাতে।
খেলার প্রথম ২০ মিনিট মোহনবাগানের প্রাধান্য ছিল। প্রধমার্ধের বাকি সময়টা লাল-হলুদের (East Bengal- Mohun Bagan)। লাগাতার আক্রমণের ফসল তুলে ১৯ মিনিটে এগিয়ে যায় সবুজ-মেরুন। পরপর কর্নার পায় হাবাসের দল। পঞ্চম কর্নার থেকে গোল করেন হেক্টর। দিমিত্রির কর্নার ফ্লিক করে বল জালে জড়ান মোহন ডিফেন্ডার। ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার প্রভসুখন সিং গিলের কিছু করার ছিল না। পিছিয়ে পড়ে আক্রমণে ঝাঁজ বাড়ায় ইস্টবেঙ্গল। ম্যাচে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল কুয়াদ্রাতের দল। মোহনবাগান গোলকিপার আর্শ আনোয়ার কোনওরকমে বল বাঁচান। ফিরতি বলে গোল করতে পারেননি নন্দকুমার। এরপর একের পর এক আক্রমণ তুলে এনে মোহনবাগান রক্ষণ কাঁপিয়ে দেন ক্লেটন সিলভারা।
বিপক্ষের নড়বড়ে রক্ষণের সুযোগ নিয়ে ২৫ মিনিটে গোল শোধ করে ইস্টবেঙ্গল। বক্সের বাইরে বল পেয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে গোল করেন ক্লেটন। ডার্বিতে ব্রাজিলীয় স্ট্রাইকারের প্রথম গোল। এই গোলের পরেই ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি তারা। এই সময় মাঝমাঠে খেলা নিয়ন্ত্রণ করেন লাল-হলুদের সৌভিক, বোরহা, সাউল ক্রেসপোরা। লাল-হলুদের দাপটের মধ্যেই বিরতির আগে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিল মোহনবাগান। কিয়ানের শট নেওয়া আটকাতে গিয়ে বল হাতে লাগান হিজাজি। পেনাল্টি পাওয়ার পর পেত্রাতোস প্রথমে গোল করেছিলেন। কিন্তু দিমিত্রিকে ফের শট নিতে হয়। কারণ তিনি শট মারার আগেই হুগো বুমোস বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন। দিমিত্রির দ্বিতীয় শট পোস্টে লাগে।
আক্রমণ-প্রতিআক্রমণে দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হলেও ইস্টবেঙ্গলের আধিপত্য বজায় থাকে ম্যাচের বাকি সময়ে। ৬৩ মিনিটে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। মোহনবাগান ডিফেন্ডার রবি রানার ভুলে বল পেয়ে যান বোরহা। তাঁর শট পোস্টে লেগে ফেরার পথে নন্দকুমার ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দেন। ডুরান্ড কাপে গ্রুপ পর্বের ডার্বিতে গোল করেছিলেন নন্দ। টানা আট ডার্বি হারের পর জয়ের স্বাদ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ফের একবার বড় ম্যাচে গোল তাঁর।
পিছিয়ে পড়ে গোল শোধে মরিয়া হয় মোহনবাগান। কিন্তু ফাইনাল থার্ডে গিয়ে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন সবুজ-মেরুন ফুটবলাররা। ৮০ মিনিটে আবারও ভুল বাগান রক্ষণ এবং গোলকিপার আর্শের। হিজাজির হেড মোহন গোলকিপার ঠিকমতো ধরতে পারেননি। বল আর্শের হাত থেকে ফসকে যায়। ফিরতি বল পেয়েই তা গোলে পরিণত করেন ক্লেটন। ম্যাচে তাঁর দ্বিতীয় গোল। যোগ করা আট মিনিট সময়েও দাপট দেখায় ইস্টবেঙ্গল। স্কোরলাইন ৫-১ হতেই পারত। পরিবর্ত হিসেবে নামা বিষ্ণু ও অজয় ছেত্রীর শট বাঁচান মোহনবাগান গোলকিপার।