দেবশ্রী মজুমদার, শান্তিনিকেতন: এবছর অদ্ভুত সমাপতন। আজ সরস্বতী পুজো। আবার প্রেমদিবসও। প্রেমের জন্য একটা আস্ত দিন। বিশ্বভারতীতে কোনও মূর্তিপুজো হয় না। তাই ছুটি থাকে। এমনিতেই সরস্বতী পুজোর দিন বাঙালির অঘোষিত প্রেমের দিন। একটু ভাল লাগা থেকে আলতো স্পর্শ আর চুপিসারে অঞ্জলির একটি ফুল টুক করে শাড়ির আঁচলে ফেলে দেওয়া, এটাই হল সরস্বতী পুজোর বিশেষ অনুভূতি। এর কোনও ভাষা হয় না। তবে এই দিনে গোবলয়ে ফতোয়া জারি হয়, কেউ কেউ প্রেমদেবতার দিকে খড়্গহস্ত হয়।
আরও পড়ুন-ছেলেবেলার স্কুলের সরস্বতী গড়া আজও প্রাক্তনী অতনুর নেশা
বিশ্বভারতীতেও প্রেমের অচলায়তন আজও ভাঙেনি। গ্রিটিংস কার্ড বা এসএমএস নয়, প্রতিবারের মতো আজও প্রেমপত্র লেখারই দৃশ্য দেখা যাবে বিশ্বভারতীতে। যথারীতি কলাভবনের সামনে রাখা হবে লেটারবক্স। যেমন প্রতি বছরই থাকে। আর তাতেই ফেলা হবে সেই সব প্রেমপত্র। এটাই রীতি তপোবনে। নিয়ম অনুযায়ী, সন্ধেয় শিক্ষক-ছাত্র মিলে জোরে জোরে পড়া হবে সেইসব প্রেমপত্র। আসলে ব্যস্ততার যুগে মানুষ প্রেমপত্র লিখতে ভুলে গেছে। তাই প্রেমপত্র নিয়ে সাহিত্য আর হয় না। বিশ্বভারতীর কলাভবনের এই প্রচেষ্টা কিন্তু যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ অবশ্য এব্যাপারে নাক গলান না কখনওই। চালচলনে যতই কেতা থাকুক না কেন, পছন্দের মেয়েটির হাতে চিঠি দিতে গিয়ে অনেক মহান প্রেমিকও ক্যাবলা হয়ে যায়। গোবেচারা বাঙালির সম্বল তাই সরস্বতী পুজো। মন্ত্র একটাই, বছরের একটি দিনে যতটা পার ঝুঁকি নিয়ে ফেল। ১৪ ফেব্রুয়ারি যখন আলাদা মাহাত্ম্য পায়নি, তখনও এর চল ছিল। এক্ষেত্রে সরাসরি প্রপোজ করার ঝক্কি পোহাতে হয় না প্রেমিক-প্রেমিকাদের। কলাভবনের এক ছাত্রী জানান, সামনে রাখা লেটারবক্সে চিঠি ফেলে যায় সবাই। ওই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র জানান, ‘পরস্পরের মন জানতে এই পদ্ধতি খুব কাজে লাগে।’ বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের মতে এতে অত ঝুটঝামেলা থাকে না। একে অন্যের মন জানা যায়। তবে এক পড়ুয়ার কথায়, ‘যে সব বন্ধুরা প্রেম করে, তাদের হয়ে অনেক সময় আমরাই চিঠি লিখে দিই। তারপর সন্ধেয় সেই চিঠি সকলের সামনে জোরে জোরে পড়া হয়। বেশ মজাই হয়।’