প্রতিবেদন : ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ইভিএম খারাপের সমস্যা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানায় নির্বাচন কমিশন। সম্প্রতি এক আরটিআই আধিকারিক দ্বারা প্রাপ্ত নথির ভিত্তিতে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের ছয় মাস আগে জেলা পর্যায়ে জেলা নির্বাচন অফিসারের (ডিইও) তত্ত্বাবধানে ইঞ্জিনিয়ারদের দ্বারা ইভিএম পরীক্ষা হয়। সেখানে ব্যাপকভাবে সমস্যা ধরা পড়ে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে ২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্যাপকভাবে ইভিএমে সমস্যার অভিযোগ তোলা হয়েছিল বিরোধীদের তরফে। আর তা উড়িয়ে দেয় মোদি সরকার।
আরও পড়ুন-মানুষ যাতে ভোট না দিতে পারে বাতিল করা হচ্ছে আধার! অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রীর
নিয়ম অনুযায়ী, প্রাথমিক পরীক্ষা বা এফএলসি চলাকালীন ইভিএম-এর কোনও অংশে ত্রুটি দেখা দিলে তা মেরামতের জন্য প্রস্তুতকারক, ভারত ইলেকট্রনিক্স লিমিটেড (বিইএল) বা ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের কাছে ফেরত পাঠানো হয়। তবে এক্ষেত্রে সেই নিয়ম যথাযথভাবে পালিত হয়নি। কমনওয়েলথ হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভের ডিরেক্টর ভেঙ্কটেশ নায়েকের আরটিআই-এর অধীনে প্রাপ্ত নথিগুলিতে দেখা গিয়েছে, এফএলসি প্রক্রিয়া চলাকালীন ভিভিপ্যাট এবং নিয়ন্ত্রণ ইউনিটগুলির ভুলভ্রান্তির বহু অভিযোগ এসেছিল রাজ্যগুলি থেকে। নির্বাচনের একেবারে মুখে ইভিএমে প্রার্থীদের নাম এবং নির্বাচনী প্রতীক দেওয়া হলেও সমস্যা অব্যাহত ছিল।
আরও পড়ুন-রাজ্যে নির্যাতিতাদের অভিযোগ গ্রহণ-চিকিৎসার জন্য আরও দুটি ওয়ান স্টপ সেন্টার
শুধু তাই নয়, ইভিএম মেশিনের এমন গুরুতর সমস্যার অভিযোগ জানিয়ে নাগাল্যান্ড, অরুণাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, কর্নাটক এবং কেরল-সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচন কমিশনের তরফে দিল্লির নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানানো হয়। তবে সেই অভিযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তরফে। প্রাথমিক পরীক্ষা বা এফএলসি চলাকালীন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ইভিএমে ত্রুটি দেখা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, ১ নভেম্বর, ২০১৮-এ উত্তরাখণ্ডের সহকারী সিইও-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত প্রথম-স্তরের(এফএলসি) পরীক্ষার স্ট্যাটাস রিপোর্ট, কন্ট্রোল ইউনিটের ইভিএম সমস্যার হার ছিল ৩৪ শতাংশ। ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮-এ, দিল্লির সিইও-এর কার্যালয় দক্ষিণ, উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্ব জেলাগুলিতে অনুষ্ঠিত এফএলসি চলাকালীন ভিভিপ্যাটে ব্যাপক সমস্যা চিহ্নিত করে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছিল এবং অতিরিক্ত মেশিনগুলির সঙ্গে তা বদল করতে চেয়েছিল। একইভাবে, আন্দামানের সিইওর কার্যালয় ২০১৯ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন কমিশনের কাছে অতিরিক্ত ভিভিপ্যাটগুলির জন্য একই অনুরোধ জানিয়ে বলেছিল যে প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতার জন্য ব্যবহৃত অর্ধেকেরও বেশি ভিভিপ্যাট খারাপ। কর্নাটকের সিইও লোকসভা নির্বাচনের খুব কাছাকাছি সময়ে ১১ এপ্রিল ২০১৯-এ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন এবং জানিয়েছিলেন যে প্রথম স্তরের প্রযুক্তিগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও, ১২ শতাংশ ভিভিপ্যাট খারাপ। কেরলের মতো রাজ্যেও ১৪ শতাংশ যন্ত্র খারাপ ছিল। শুধু লোকসভা নির্বাচন নয়, তার পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনগুলিতেও একই সমস্যায় ভুক্তভোগী ছিল পাঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য। তবে সমস্যা এত গুরুতর হওয়া সত্ত্বেও বিষয়টিকে দিব্যি এড়িয়ে গিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন।