পিন্টু ভট্টাচার্য: ব্যাগের চেনটা খুলে ভিতরের প্যাকেটটা ঠিকঠাক আছে কি না আর একবার দেখে নিয়ে রাজীববাবু বাড়ির পিছনের দরজা দিয়ে বাইরে বেরোলেন। চারপাশে ভাল করে তাকিয়ে দেখলেন, কেউ নেই নিশ্চিত হয়ে দরজায় তালা লাগালেন, তারপর দক্ষিণ দিকের কাঁচামিঠে আমগাছটার তলা দিয়ে বেরিয়ে আসলেন সামনের রাস্তায়। সদর দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করা, বাইরে তালা লাগানো নেই বলে প্রতিবেশীরা কেউ দেখলে আন্দাজ করতে পারবে না রাজীববাবু বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। গত বুধবারে এই বুদ্ধিটা মাথায় আসেনি। সামনের দরজায় তালা দিয়ে বেরিয়েছিলেন। সেটাই নজর করেছিল বিমানবাবুর বউমা। বিমানবাবুর বাড়ি রাজীববাবুর বাড়ির সামনেই, রাস্তার উল্টোপিঠে। ওদের বাড়ির দোতলার বারান্দা থেকে রাজীববাবুর বাড়ির সামনের দরজাটা স্পষ্ট দেখা যায়। সেখান থেকেই নিশ্চয় বিমানবাবুর বউমা খেয়াল করেছিল সারা দুপুর রাজীববাবু্র বাড়িতে তালা দেওয়া, মানে রাজীববাবু বাড়িতে নেই। মেয়েটা এমনিতে খারাপ নয় কিন্তু ভীষণ কৌতূহল। লোকের বাড়ির হাঁড়ির খবর জানার খুব আগ্রহ। সেই আগ্রহের বশেই সম্ভবত পরের দিন সকালে বাড়ির সামনে রাজীববাবুকে দেখে ওপরের বারান্দা থেকে চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল— কাকু, কাল সারা দুপুর বাড়িতে তালা দেওয়া দেখলাম। কোথাও গিয়েছিলেন?
ভাগ্যিস দেবিকা তখন বাথরুমে ছিল। কথাটা ঠিকমতো কানে যায়নি। গেলে আর রক্ষে রাখত না। অফিস যাওয়া বন্ধ করে তার পিছনে লেগে পড়ত, প্রশ্নে প্রশ্নে জেরবার করত। চেঁচিয়ে শুধু বাড়ি নয়, পাড়াই মাথায় করে ফেলত।
তার জন্য অবশ্য দেবিকাকে দোষ দেওয়া যায় না। রাজীববাবুর বয়স ষাট পেরিয়েছে। সুগার আছে, প্রেসার আছে, মাস তিনেক আগে স্ট্রোক হয়ে হসপিটালে চারদিন আইসিইউতে থেকে এসেছেন। সেই লোক চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুরে সারা দুপুর বাড়ির বাইরে ছিল শুনলে কোন স্ত্রীর মাথার ঠিক থাকে?
রাজীববাবু সেটা বিলক্ষণ বোঝেন। নিজের শরীর নিয়ে যে তাঁর চিন্তা নেই তাও নয়। কিন্তু সারাটা দিন বিরাট তিনতলা বাড়িতে একা একা থাকতে তাঁর দমবন্ধ হয়ে আসে। দেবিকা অফিসে বেরিয়ে যায় সকাল সাড়ে ন’টায়, বাড়ি ফিরতে সাড়ে পাঁচটা। রান্নার মেয়েটা রান্নাবান্না করে চলে যায় সাড়ে দশটায়। তারপর থেকে রাজীববাবু বাড়িতে সম্পূর্ণ একা। সময় আর কাটতে চায় না। সারাজীবন সরকারি উচ্চপদে চাকরি করেছেন। উচ্চপদ মানেই গুরুদায়িত্ব আর গুরুদায়িত্ব মানেই নিরবচ্ছিন্ন ব্যস্ততা। বন্ধুবান্ধব যা ছিল ব্যস্ততার কারণে তাদের সঙ্গে দূরত্ব বিস্তর বেড়ে গিয়েছে। চাকরজীবনে তাঁদের খোঁজ নেওয়ার সময় পাননি, বরং কেউ খোঁজখবর নিলে মনে মনে বিরক্ত বোধ করেছেন, এখন নতুন করে যোগাযোগ করতে গেলে তাঁরা উল্টো অর্থ করবেন এটাই স্বাভাবিক। চাকরি যতদিন ছিল সময় কাটানোর চিন্তা রাজীববাবুকে করতে হয়নি, বরং সময় পেতেন না। সমস্যা শুরু হল রিটায়ারমেন্টের পর। চাকরি থাকাকালীন যে দিনগুলোকে খুব ছোট বলে মনে হত, রিটায়ারমেন্টের পর সেগুলোই কীভাবে যেন অত্যন্ত দীর্ঘ হয়ে গেল। দুপুরগুলো যে এত বিরক্তিকর রকমের লম্বা তিনি জানতেনই না। প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটা মিনিট এমনকী প্রতিটা সেকেন্ডও যে এতটা দীর্ঘ হতে পারে সে-সম্পর্কে রাজীববাবুর কোনও ধারণাই ছিল না।
যন্ত্রণা আরও বাড়ল সারাটা দুপুর বাড়িতে একা একা কাটাতে হওয়ায়। সারা বাড়ি ঘুরে সময় কাটানোর উপায় খুঁজতে লাগলেন। বইয়ের র্যাক থেকে একটা বই টেনে নিয়ে পড়তে চেষ্টা করলেন, মন বসাতে পারলেন না। টিভি খুলে চ্যানেল সার্ফ করলেন কিছুক্ষণ, একটা প্রোগ্রামও পছন্দ হল না। মোবাইল নিয়ে একটু খুটখাট করলেন, একটু সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করলেন, তা-ও বেশিক্ষণ ভাল লাগল না। মনটা কীসের জন্যে যেন ছটফট করতে লাগল। আরও কিছুক্ষণ বাড়ির মধ্যে ওপর-নিচে ঘোরাঘুরি করে বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন। ঘুম এল না, পরিবর্তে শৈশব ভিড় করে এল মাথার মধ্যে। আর শৈশব আসতেই এসে গেল রানুও। রানুর কথা মাথায় আসতেই রাজীববাবু বিছানায় উঠে বসলেন, তারপর মোবাইলটা টেনে নিয়ে ডায়াল করতে শুরু করলেন। রানুর নাম্বার তাঁর মোবাইলে সেভ করা আছে।
ছোটবেলায় কত স্কুল-ছুটির দুপুর একসঙ্গে কাটিয়েছেন দু’জনে। মায়ের দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস ছিল। স্কুলে ছুটি থাকলে মা দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর রাজীববাবুকে পাশে নিয়ে শুয়ে পড়তেন। বলতেন— একটু ঘুমিয়ে নে। বাইরে বেরোবি না। রাজীব অবশ্য ঘুমাতেন না, মটকা মেরে পড়ে থাকতেন। মা ঘুমিয়ে পড়লেই নিঃশব্দে ঘরের দরজা খুলে পা টিপে-টিপে বাইরে বেরিয়ে চলে যেতেন রানুদের ঘরের জানলায়। ফিসফিস করে বলতেন— রানু, খেলতে যাবি? রাজীবের অপেক্ষাতেই থাকত রানু। দরজা খুলে চলে আসত সেও। তারপর দু’জনে মিলে চলে যেতেন বাড়ির পিছনের আমবাগানে। চোত-বোশেখের তীব্র গরমের দুপুরেও বেশ ঠান্ডা থাকত বাগান। বাঁশের মাচা-করা ছিল আমবাগানে। সেই মাচায় বসে গল্প করতেন দু’জনে, কোনওদিন আমগাছের ছায়ায় মাটিতে দাগ কেটে খেলতেন এক্কা-দোক্কা। মাঝে মাঝে টিপু আর মিলি এসে যোগ দিত তাদের সঙ্গে। সেদিন হত ধরাধরি খেলা। কী ভালই না ছিল সেসব দিনগুলো। শৈশবের সেই সাথীদের যদি এই কর্মহীন অবসরের দিনগুলোতে কাছে পাওয়া যেত, অবসাদ আর একাকিত্ব কাছে ঘেঁষার কোনও সুযোগই পেত না। টিপু আর মিলির সঙ্গে যোগাযোগ নেই বহুদিন, তবে রানুর সঙ্গে আছে। সেটা থাকারই কথা।
দুপুরগুলো একা কাটে রানুরও। রানুর একটাই ছেলে। ছেলে, ছেলের বউ দুজনেই চাকরি করে, নাতি স্কুলে যায়। দুপুরগুলো সেই ছোটবেলার মতো যদি দু’জনে একসঙ্গে কাটাতে পারতেন, মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়ার মতো দেবিকার চোখ ফাঁকি দিয়ে, জীবনের আবার নতুন অর্থ খুঁজে পাওয়া যেত।
রানুকে ডায়াল করতে করতেই এসব কথা ভাবছিলেন রাজীববাবু। দু’তিনবার রিং হতেই ফোনটা ধরে রানু বললেন— হঠাৎ ভরদুপুরে তলব যে? কী ব্যাপার?
—তোর সঙ্গে গল্প করতে ইচ্ছে হল।
—তাহলে আমাদের বাড়িতে চলে আয়। ফোনে আর ক’টা কথা হবে?
—যেতে তো ইচ্ছে করছে খুবই, কিন্তু আজ আর সময় হবে না। কাল যাব?
—কাল? না, কাল থাক। পরশু দুপুরে আয়। কাল স্কুলে ছুটি আছে। বউমা বাড়িতে থাকবে, বাবুও। মন-খুলে কথা বলা যাবে না।
সেদিন রানুর বাড়ি গিয়েছিলেন রাজীববাবু, দেবিকাকে লুকিয়েই। দেবিকাকে জানালে যেতে দিত না কিছুতেই। ভরদুপুরে তো নয়ই, একা একাও নয়। বাধ্য হয়েই দেবিকার কাছে সবটা গোপন রাখতে হয়েছিল। ফিরতেও হয়েছিল দেবিকা বাড়ি ফেরার আগেই। সেদিন তাই বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। তবে পরের দিনের প্ল্যানটা সেরে ফেলেছিলেন। মাঝের কয়েকদিন দু’জনে মিলে ফোনে আলোচনা করে পরিকল্পনাটা নিখুঁত করেছেন। দুই তরফেরই কেউ যাতে জানতে না পারে তার জন্য সবরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থার কথা ভেবে নিয়েছেন। বিষয়টা ফাঁস হয়ে গেলে মুখ দেখানোর আর উপায় থাকবে না।
আরও পড়ুন: সুন্দরবন
সেই পরিকল্পনামতোই আজ বেরোনো, ভরদুপুরে চৈত্রের কাঠফাটা রোদ্দুর মাথায় নিয়ে। বাড়ির সামনের রাস্তায় এসে হাতের ব্যাগের চেনটা খুলে ভিতরের পলিথিনের প্যাকেট এবং প্যাকেটের ভিতরের জিনিসগুলো ঠিকঠাক আছে কি না আরেকবার দেখে নিলেন। বয়স হয়েছে, সব বিষয়েই আজকাল বড় টেনশন হয়। গুরুত্বপূর্ণ কাজের দায়িত্ব চাপলে তো আর কথাই নেই, টেনশন দ্বিগুণ হয়ে যায়। মনে হয় কাজটা করতে হয়তো ভুলই করে ফেলবেন। আর আজ যদি প্যাকেটের জিনিসগুলো নিয়ে যেতে ভুল করে ফেলেন তাহলে সব পরিকল্পনাটাই বানচাল হয়ে যাবে। বারবার তাই দেখে নেওয়া। সব ঠিকঠাক আছে দেখে নিয়ে বড় রাস্তার মোড়ে এসে দাঁড়ালেন রাজীববাবু। চেনা টোটোয় ওঠা যাবে না, দেবিকাকে বলে দিতে পারে। কয়েকটা চেনা টোটো ছাড়ার পর অচেনা টোটোয় উঠে বসে বললেন— স্টেশন। টোটো স্টেশনের রাস্তা ধরল।
চারিদিকে আগুনের হলকা বইছে। রাস্তায় লোক চলাচল বিশেষ নেই। ট্রেনও বেশ ফাঁকা। দুটো মাত্র স্টেশন। তবুও আধঘণ্টার যাত্রাতেই গরমে বেশ কাহিল হয়ে পড়লেন রাজীববাবু। স্টেশনে নেমে ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বার করলেন। ঠান্ডা জল নিয়েছিলেন, এখন অনেকটা গরম হয়ে গিয়েছে। সেই জলই ঢকঢক করে খানিকটা খেয়ে প্ল্যাটফর্মের বাইরে এসে টোটোয় উঠে বললেন— গঙ্গার ঘাট। টোটোওয়ালা দ্বিতীয় কোনও যাত্রী পাওয়ার আশা নেই দেখে টোটো স্টার্ট করল। রাজীববাবু ব্যাগের চেনটা খুলে আর একবার দেখে নিলেন প্যাকেটটা ঠিকঠাক আছে কি না।
রানু ঘাটের ধারেই ছাতা মাথায় দিয়ে দাঁড়িয়েছিল। রানুর এই গুণটা চিরকালই বড় ভাল লাগে রাজীববাবুর, নিজে অপেক্ষা করবে কিন্তু কাউকে কখনও তার জন্য অপেক্ষা করাবে না। ষাটে পৌঁছেও অভ্যাসটা ঠিক বজায় রেখেছে। টোটোর ভাড়া মিটিয়ে রানুর কাছে গিয়ে বললেন— কতক্ষণ এসেছিস?
—মিনিট দশেক— উত্তর দিল রানু। তারপর জিজ্ঞেস করল— পার্কটা কোনদিকে?
—উত্তরদিকে। মিনিট পাঁচেক লাগবে হেঁটে গেলে।
বলে হাঁটতে শুরু করলেন গঙ্গার পাড় বরাবর। রানু তাঁকে অনুসরণ করল। পার্কটা রাজীববাবুই বেছেছেন। রানু চেয়েছিল একটা আমবাগান, যেরকম আমবাগানে ছোটবেলায় তাঁরা খেলা করতেন। রাজীববাবু অনেক ভেবেও কাছাকাছি তেমন কোনও আমবাগান দেখেছেন বলে মনে করতে পারলেন না, তবে ভাবতে ভাবতে এই পার্কটার কথা মনে পড়ে গেল। বছর তিনেক আগে ডিসেম্বর মাসে কলিগদের সঙ্গে এখানে পিকনিক করতে এসেছিলেন। তখনই দেখেছিলেন পার্কটার মধ্যে একটা মোটা গুঁড়িওয়ালা বড়সড় আমগাছ আছে। গাছের নিচে বাঁশের মাচা না থাকলেও গুঁড়িটাকে ঘিরে গোল করে সিমেন্টের বেদি করা আছে বসার জন্য। ওই বেদিতে দু’জনে বসলে পুরোটা না হলেও ছোটবেলার আমেজ অনেকটাই ফিরে পাওয়া যাবে। কতবছর যে তারা দু’জন এভাবে ভরদুপুরে বাগানে বসে গল্প করেননি! ভাবতেই একটা আলাদা রোমাঞ্চ হচ্ছিল রাজীববাবুর। এই রোমাঞ্চের অনুভূতিটাই গত সাতদিন ধরে কোথায় যেন নির্বাসিত করে দিয়েছে সমস্ত একাকীত্ববোধকে।
পার্কের গেটের কাছে পৌঁছে দুটো টিকিট কেটে দু’জনে ঢুকে পড়লেন পার্কের মধ্যে। বেশ বড়সড় পার্ক। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রায় প্রতিদিনই অনেকগুলো করে পার্টি আসে পিকনিক করতে। ভাল ভিড় হয়। এখন প্রায় ফাঁকাই। অল্পবয়সি কিছু ছেলেমেয়ে স্কুল-কলেজ কেটে এসেছে নিরিবিলিতে প্রিয়জনকে নিয়ে সময় কাটাতে। জোড়ায় জোড়ায় বসে আছে গাছের আড়ালে। বেশিরভাগেরই নজরে পড়ল না রানু আর রাজীববাবুর উপস্থিতি। দু’-একটি পেয়ার কৌতুক আর বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকাল তাঁদের দিকে। রাজীববাবু অবশ্য সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করলেন না। তাঁকে চিনতে পারবে এমন ছেলেমেয়ে এখানে থাকার সম্ভাবনা বিশেষ নেই। থাকলেও তাদের পক্ষে দেবিকাকে কিছু বলা সম্ভব হবে না, তাহলে নিজেদেরই ধরা পড়তে হবে।
একটু খুঁজতেই আমগাছটা পেয়ে গেলেন রাজীববাবু। এই ভ্যাপসা গরমেও বেশ ঠান্ডা আছে জায়গাটা। গোড়ার সিমেন্টের বেদিটা ফাঁকাই আছে। সম্ভবত একেবারে প্রকাশ্যে বলে কোনও জোড়া সেটি দখল করেনি। রানু আর রাজীববাবু বেদিতে বসে পড়লেন। ঝোপ-ঝাড়ের আড়াল তাদের দরকার নেই। গাছটা ভাল করে দেখতে দেখতে খুশিতে উচ্ছ্বসিত রানু কাঁধের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট জিনিস বার করে বললেন— ঝিনুক। অনেক কষ্টে জোগাড় করেছি।
রাজীববাবুর মুখে হাসি ফুটে উঠল। এতটা তিনি আশা করেননি। ঝিনুকটা হাতে নিয়ে দেখলেন অমসৃণ মেঝেতে ঘষে মাঝখানটা ফুটো করে ধারালো করা হয়েছে। একেবারে ছোটবেলার মতো। আর তর সইল না রাজীববাবুর। ব্যাগ থেকে পলিথিনের প্যাকেটটা বার করে মেঝের ওপর উপুড় করতে করতে বললেন— তুই আমের কুশি আনতে বলেছিলি। দেখ, এর মধ্যেই কত বড় হয়েছে। আমাদের কাঁচামিঠে গাছের। টক হবে না।
—টক হলেও অসুবিধে নেই। এই দেখ কী এনেছি। এটার কথা মনে আছে তোর? বলে ছোট্ট একটা কাগজের মোড়ক খুলে মেলে ধরলেন রাজীববাবুর সামনে। লালচে সাদা গুঁড়োটা চোখের সামনে দেখে জিভে জল চলে এল রাজীববাবুর। নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল— ঝাল-নুন!
—ঠিক ধরেছিস। মা নুন আর শুকনো লঙ্কা ভেজে একসঙ্গে বেটে তৈরি করত। আমি কাল তৈরি করেছি। ছোটবেলায় কাঁচা আমে মাখিয়ে কত খেয়েছি বল! বলতে বলতে সুড়ুত করে জিভের জল টানল রানু।
তারপর প্রবল উৎসাহে ঝিনুক দিয়ে কচি আমের খোসা ছাড়িয়ে ঝাল-নুন মাখিয়ে খেতে খেতে একসঙ্গে ছেলেবেলা কাটানো দুই ষাটোর্ধ্ব খুড়তুতো-জেঠতুতো ভাইবোন বার্ধক্যের একাকীত্ব কাটাতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলেন শৈশবে ফেরার।