বসন্ত এসে গেছে। উড়ান চাইছে মনের ডানা? খুব দূরে যাওয়ার সময় নেই? কাছেপিঠে দিন দুয়েকের জন্য ঘুরে আসতে চান? আদর্শ জায়গা হতে পারে খয়রাবেড়া। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি ব্লকের এই অফবিট পর্যটন কেন্দ্রটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। অযোধ্যা পাহাড় থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরে। একটা সময় খয়রাবেড়া ছিল অযোধ্যা পাহাড়ের সাইট সিয়িং। পর্যটকরা গাড়ি নিয়ে যেতেন। ঘণ্টাখানেকের জন্য ঘুরে আসতেন। এখন আক্ষরিক অর্থেই একটি উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পেয়েছে।
খয়রাবেড়ায় পায়ে পায়ে ছড়িয়ে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার। উঁচু উঁচু ঢেউ খেলানো পাহাড়। সঙ্গে জলাধারের নীল জলরাশি। চারপাশ জুড়ে ঘন জঙ্গল। চোখের সামনে এমন ল্যান্ডস্কেপ ভেসে উঠলে যে কেউ ছুটে যেতে চাইবেন।
আরও পড়ুন-সময়ের আগেই ইডি দফতরে দেব
অনেকেই ট্রেক করেন। দল বেঁধে। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ দিয়ে হাঁটতে দারুণ লাগে। বনাঞ্চলে চরে বেড়ায় বহু প্রাণী। চলার পথে বন্যশূকর, হায়না, চিতল হরিণ, গোল্ডেন জ্যাকেল, খরগোশ এমনকী বুনো হাতিরও মুখোমুখি হয়ে যেতে পারেন। বন্যপ্রাণীদের বিরক্ত না করাই ভালো। তাতে বিপদ কম।
চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। শুধু কানে আসে পাখির কলকাকলি। মন আনন্দে ভরে যায় পাহাড়, জঙ্গল আর তাদের কোলে থাকা বিশালায়তনের শান্ত জলাধার দেখে। অপূর্ব তার সৌন্দর্য। জলাধারে বোটিং এবং মাছ ধরার ব্যবস্থা রয়েছে।
খয়রাবেড়ায় তিনটি কটেজ এবং সাতটি স্থায়ী তাঁবু সমৃদ্ধ অ্যাডভেঞ্চার ক্যাম্প রয়েছে। ক্যাম্পের অদুরেই পাহাড়সারি। নাম চেংটাবুরু। তারই কোলে অবস্থিত অবসরযাপনের এই অপরূপ লোকেশন। পরিধি কয়েক একর। সীমানা বরাবর রয়েছে প্রচুর শাকসবজি এবং ফলের গাছ। বেরোনো যায় লাগোয়া জঙ্গল ভ্রমণে। চোখে পড়ে বেশ কিছু আঙুরের গাছ আর ধবধবে সাদা পাতাবাহার গাছ পয়েনসেটিয়া।
এখানকার রিসর্টে রয়েছে ছৌ নাচ দেখার সুযোগ। বাড়তি পাওনা হতে পারে বাউল গান। সন্ধ্যা নামলেই খয়রাবেড়া লেকের পাশ থেকে মাটির সুর ভেসে আসে। পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। তাঁদের কেউ কেউ গাইড। দিনভর সাইট সিয়িং করে এসে বাউল গান আর বাঁশির সুরে রিসর্ট-এ বসেই পর্যটকরা পুরুলিয়ার লোকশিল্পে ডুবে দিতে পারেন। এ ছাড়াও রিসর্টে আছে বাস্কেটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন খেলার সুযোগ। অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে মোটামুটি সারা বছর ভিড় লেগেই থাকে। বিশেষত শীতের ঠিক পরের সময়। বসন্তের শুরুতে। না থাকে গরম, না থাকে শীত। উপভোগ্য সময়।
আরও পড়ুন-নন্দীগ্রামে বিজেপির গুন্ডামি, নিগৃহীতাকে নিয়ে থানায় কুণাল
আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে অন্যতম মামুডি। ঘুরে আসতে পারেন। পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের ঝালদা সার্কিটের অন্তর্গত ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম এটা। ঘন জঙ্গলের মাঝে নিরিবিলি, নিস্তব্ধ পরিবেশ। কিছুটা রহস্যময়। এমনিতে পুরুলিয়া পর্যটকদের কাছে অজানা না হলেও মামুডি এখনো সেভাবে ভ্রমণপিপাসুদের ছোঁয়া পায়নি। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। এখানকার আকর্ষণ অজস্র পাহাড়ি ঝরনা, উত্তর ও দক্ষিণ দুই দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া দুটি পাহাড়ি নদী সাহারজোড় ও রুপাই। কয়েক পা এগোলেই গজাবুরু, দক্ষিণবঙ্গের সর্বোচ্চ পাহাড় চেংটাবুরু ও হাতি পাহাড়। মাইলখানেক দূরে অযোধ্যা পাহাড়ের সেরা দুটি অফবিট ঝরনা পিটিদিরি ও মাছকান্দা। বিরল প্রজাতির পশু-পাখি ও ঝাঁকে ঝাঁকে ময়ূর ময়ূরীর দল মামুডিকে করে তুলেছে স্বর্গীয় সৌন্দর্যের ঠিকানা। বসন্ত দিনে জায়গাটা পলাশের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। ঘন জঙ্গলে আম, জাম, কাঁঠাল, মহুয়া, কেন্দু, পিয়াল প্রভৃতি ফল ও ফুলের সমারোহ। নিস্তব্ধতাই যাদের প্রথম পছন্দ, তাঁরা ঘুরে আসতেই পারেন। মোটামুটি এপ্রিল মাস পর্যন্ত যাওয়া যায়।
মামুডির পাশাপাশি খয়রাবেড় থেকে ঘুরে আসা যায় মার্বেল লেক, বামনি ফলস, ঠুড়গা ফলস, ঠুড়গা ড্যাম, চড়িদা মুখোশ গ্রাম প্রভৃতি জায়গায়। মন ভালো হয়ে যাবে। দূর হয়ে যাবে সমস্ত ক্লান্তি।
আরও পড়ুন-গদ্দারের খালিস্তানি মন্তব্যের প্রতিবাদে গর্জে উঠল বাংলা
কীভাবে যাবেন?
আছে রেল যোগাযোগ। হাওড়া বা কলকাতা থেকে রেলপথে পুরুলিয়া। দূরত্ব ৩২২ কিলোমিটার। পুরুলিয়ার জন্য কলকাতা থেকে নিয়মিত ট্রেন পাওয়া যায়। সেগুলো হল চক্রধরপুর এক্সপ্রেস, রূপসীবাংলা এক্সপ্রেস, হাওড়া পুরুলিয়া এক্সপ্রেস ইত্যাদি। পুরুলিয়া থেকে খয়রাবেড়া যেতে হয় গাড়িতে। একটা জায়গা পর্যন্ত বাসেও যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
খয়রাবেড়ায় আছে রিসর্ট। সেখানে থাকা যায়। আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল। পাশাপাশি আছে কিছু তাঁবু। এ-ছাড়াও আশেপাশের অঞ্চলে আছে কয়েকটি হোটেল এবং অতিথিশালা। থাকা যায় সেখানেও।