আধুনিক বিশ্ব জুড়ে শুধুই ‘কেকারব’। প্রেম, বিচ্ছেদ, এনগেজমেন্ট, ডেটিং, মেহেন্দি, সঙ্গীত, বিয়ে, পৈতে, অন্নপ্রাশন, গৃহপ্রবেশ, ডিভোর্স, নতুন জয়েনিং, ফেয়ারওয়েল, পার্টি, মিটিং, সেমিনার, পুজো, উৎসব, অনুষ্ঠান, শুভ মহরত— যে কোনও সেলিব্রেশন মানেই এখন কেক। কোথা থেকে এল এই কেক। পৃথিবীর প্রথম সেলিব্রেটি পেস্ট্রি শেফ ছিলেন ফ্রান্সের অ্যান্টনি করিম। আর আজ ঘরে ঘরে কমবেশি একজন কেক আর্টিস্ট খুঁজলে খুব সহজেই মিলে যাবে। এখন সবাই ট্যালেন্টেড। আর এ-যুগের কেক মানেই ডিজাইনার, আর্টিস্টিক এবং কাস্টমাইজড। কিন্তু কেক-শিল্পী এবং তাঁদের তৈরি ক’টা কেকই বা লাইমলাইটে আসে।
আরও পড়ুন-দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাত, গোয়ায় আপ- কংগ্রেস জোট চূড়ান্ত
যদিও ডিজাইনার কেকদের কম্পিটিশন বিদেশে আগে থেকেই ছিল। ভারতেও দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু শহরে কেক ফেস্ট, কম্পিটিশন নতুন নয়। কিন্তু কলকাতা কিংবা এই রাজ্যে কেক উৎসবের কথা শোনা যায়নি। এবার সেই অভিনব উদ্যোগে এগিয়ে এলেন কেক শিল্পী আতিকুর রহমান। তাঁরই উদ্যোগে আগামী ৩০ এবং ৩১ মার্চ কলকাতার বুকে প্রথমবার আয়োজিত হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল কেক উৎসব এবং প্রতিযোগিতা।
পেশায় আইটি কর্মী আতিকুর ২০১৬ সাল থেকে কেক বেকিং শুরু করেন। মূলত তাঁর জব প্রোফাইল ওয়েবসাইট ডিজাইনিং এবং অ্যাপ্লিকেশন ডিজাইনিং। তখন সুন্দর সুন্দর কেক দেখে তাঁর মনে হত কী করে বানায় সবাই এত সুন্দর সব কেক। এরপর প্রায় সাত-আট বছর গ্রাফিক্স ডিজাইনিং-এ কাজ করার সুবাদে ডিজাইনিং সম্পর্কিত একটা স্বচ্ছ ধারণা গড়ে উঠেছিল। প্যাশনের খাতিরে সব ছেড়েছুড়ে কেক বেকিং-এর জগতে হাতেখড়ি নিয়েছিলেন নিজেই। প্রথাগত কোনও প্রশিক্ষণ ছিল না শুধু ইচ্ছাশক্তির বলে একটা সময় হয়ে ওঠেন পুরোদস্তুর কেক আর্টিস্ট। একটা কেক তিনি দ্বিতীয়বার তৈরি করেন না। আতিকুর রহমান শুধু এক্সক্লুসিভ কেক ডিজাইনার নন, একজন দক্ষ প্রশিক্ষক। শুধু কলকাতা নয়, সারা ভারত এমনকী বাইরের রাজ্যের বাইরে থেকে তাঁর কাছে আর্টিস্টিক কেক তৈরি শিখতে আসে ছেলেমেয়েরা। এই সময় থেকেই এই শহরে কেক ফেস্টিভ্যাল করবেন বলে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছিলেন। কারণ কোনও বড় প্ল্যাটফর্ম এখানে ছিল না যার মাধ্যমে প্রতিভাবান কেক শিল্পী এবং তাঁদের কেক লাইমলাইটে আসতে পারে।
আরও পড়ুন-সন্দেশখালি একনজরে, রাজ্য সরকার ও দলের পদক্ষেপ
তাঁর প্রচেষ্টায় এবং ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহে অবশেষে সফল হলেন তিনি। কলকাতার রাজকুটিরে অনুষ্ঠিত হবে এই কেক উৎসব। এটা মূলত ডিসপ্লে ওনলি কম্পিটিশন। কেক শিল্পীরা বাড়িতে কেক তৈরি এনে এই প্ল্যাটফর্মে ডিসপ্লে করবেন। সেই কেকের সঙ্গে কেক তৈরির ছয় থেকে দশটা স্টেপের ছবিও তুলে এখানে রাখতে হবে। যাতে কেকটি কোন পদ্ধতিতে তৈরি হয়েছে সেটা বোঝা যায়। সঙ্গে থাকবে একটা নোটবুক। যে নোটবুকে কোন কোন টেকনিক ব্যবহার করে কেকটি তৈরি হয়েছে এবং কোন থিমে সেটা লিখে রাখতে হবে।
ডিসপ্লে ওনলি কম্পিটিশনে শিল্পীরা কেক বাড়ি থেকে তৈরি করে আনেন সুতরাং কেকটা যে তিনিই বানাচ্ছেন তার কোনও প্রমাণ নেই। তাই কেকটি যিনি বা যাঁরা তৈরি করছেন তাঁর কোনও নাম-পরিচয় থাকবে না। অর্থাৎ এখানে প্রতিযোগী হল সেই কেকটি। পুরস্কৃত হবে কেক। শুধু একটা করে রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকবে। কেক তো নিজে হাতে প্রাইজ নিতে পারবে না তাই যাঁর নামে রেজিস্ট্রেশন অর্থাৎ এবার যিনি ওই কেকটি বানিয়েছেন তিনি এসে কেকটির হয়ে পুরস্কারটি নেবেন। ডিসপ্লে ওনলি কম্পিটিশন করার মূল কারণ কম্পিটিশনে এমন ধরনের এক্সক্লুসিভ কেক থাকবে যা একদিনে বানানো সম্ভব নয়, তিন-চারদিন লেগে যায়। ফ্লাওয়ার শো-এর মতোই বিষয়টা। অর্থাৎ যে কেকটি ডিসপ্লে করা হয়েছে তা নির্দিষ্ট ক্রাইটেরিয়া মেনে প্রপার ভাবে তৈরি হয়েছে কি না। যা চাওয়া হয়েছে সেই শর্ত পূরণ হয়েছে কি না এটাই প্রাইজ জিতে নেওয়ার আসল শর্ত। এগুলোর ওপর ভিত্তি করে কেকটির বিচার করবেন জাজরা।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
সারা পৃথিবীতে কেকের ডিসপ্লে ওনলি কম্পিটিশন হয়। কিন্তু কলকাতায় প্রথম এই আন্তর্জাতিক কেক ফেস্ট। এই প্রতিযোগিতার দুদিন, প্রতিযোগিতা ছাড়াও থাকবে অনেক কিছু। প্রথমদিন এখানে থাকবে কেক নিয়ে ওয়র্কশপ, মিলবে কেকের নানা মেটিরিয়াল যা হয়তো সচরাচর কেউ পান না। চাইলে এখান থেকে কিনে নিতে পারবেন। এছাড়া থাকবে বিচারকদের তৈরি নানা আর্টিস্টিক কেকও। যেগুলো অবশ্য প্রতিযোগিতার বাইরে। থাকবে বিভিন্ন স্টল। ক্যুইজ কনটেস্ট থাকবে আর থাকবে শো স্টপার কেক। একটা গোটা মানুষ বা গোটা গাছ, এডিবল ফ্লাওয়ারের বোকে হবে এই অনুষ্ঠানের শো স্টপার।
প্রতিযোগিতায় থাকবেন বারো জন আন্তর্জাতিক মানের বিচারকমণ্ডলী। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ পেয়েছেন গোল্ড অ্যাওয়ার্ডও। হেড জাজ হিসেবে থাকছেন বেঙ্গালুরুর নামী কেক আর্টির্স্ট স্যামি রামাচন্দ্রণ, দিভ্যা শরাফ, শ্বেতা ডালমিয়া, ২০২৩-এর মাস্টার শেফ ইন্ডিয়ার চতুর্থ স্থানাধিকারী সুরেশ থাপা এবং ২০২২ মাস্টার শেফ ইন্ডিয়ার টপ ফোর কনটেস্টেন্ট গুরকিরাত সিং-সহ আরও অনেকে।
কেকের বারোটি ক্যাটাগরি বা বিভাগ নিয়ে এই প্রতিযোগিতাটি হবে। এই বিভাগে থাকবে
ওয়েডিং কেক
সেলিব্রেশন কেক
ফ্লোরাল অ্যারেঞ্জমেন্ট। কেকের রিয়্যালিস্টিক ফুল তৈরি করতে হবে এই বিভাগের অংশগ্রহণকারীদের।
ফোর স্টেজেস অফ প্ল্যান্ট। একটা ফনড্যান্ট দিয়ে গাছের চারটে ভাগকে সুস্পষ্ট করে ফুটিয়ে তুলতে হবে।
হ্যান্ডপেন্টেড কেক। কেকের ওপর পেন্টিং করতে হবে।
থ্রি ডি স্টাইলের কেক।
বাস্ট কেক। নামকরা ব্যক্তিত্ব হোক বা যে কোন মানুষের রিয়্যালিস্টিক হাফবাস্ট ফটোর মতো কেক দিয়ে বানাতে হবে।
ডেকরেটিভ কাপ কেকস।
ক্রিম কেক। শুধু ক্রিম দিয়েই তৈরি করতে হবে এই কেক। অন্য কোনও কিছু ব্যবহার করা যাবে না।
(দুটোর ক্ষেত্রেই ইনোভেটিভ বিষয়টাকেই গুরুত্ব দেওয়া হবে।)
রয়্যাল আইসিং ডেকরেটেড কেক।
হেলদি বেক। ময়দা এবং চিনি ছাড়া তৈরি করতে হবে এই কেক।
সারা দেশ থেকে ২০০-র ওপর কেক এখানে অংশ নেবে এই প্রতিযোগিতায়। ইনস্টা, ফেসবুক-এ দেওয়া ফোন নম্বরে কল করে ফি দিয়ে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তাঁদের একটা নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে। সেটাই কেকের নম্বর। প্রতিযোগিতার শেষে পুরস্কার দেওয়ার পর ওপেন টু অল করে দেওয়া হবে সবার জন্য।
আরও পড়ুন-সহজ আশ্রমে মহিলাদের ডোকরা ওয়ার্কশপ
প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় দিন একটা রাম্প (ramp) শো-এর আয়োজন করা হয়েছে। ফনডান্ট, কেক, এডিবল ফ্লাওয়ার দিয়ে তৈরি সামগ্রী যেমন ফুল, ফল, বই, পেন হাতে বা গায়ে ডিসপ্লে করে মডেলরা মার্জার সরণিতে হাঁটবেন। কেক দিয়ে তৈরি এই সব এক্সক্লুসিভ মেটিরিয়াল যাঁরা তৈরি করেছেন সেইসব শিল্পীও উপস্থিত থাকবেন। ওইদিনও থাকবে বিভিন্ন ওয়র্কশপ, ডেমনস্ট্রেশন। এছাড়া দ্বিতীয় দিন উপস্থিত থাকবেন বিনোদন, খেলা এবং রাজনীতি জগতের জ্ঞানী-গুণিজনেরা।