মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করার ১০৮টি কারণ আছে। কিন্তু অন্যতম প্রধান কারণ একটাই। তিনি এবং তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস কথা দিলে কথা রাখে।
হ্যাঁ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদি কোনও প্রতিশ্রুতি দেন, তবে সেটা তাঁরা পূরণ করেন। সে রেকর্ড তাঁদের রয়েছে।
আরও পড়ুন-আসন নেই, প্রার্থী আছে, অসমের তালিকায় অজস্র ভুল, বিপাকে বিজেপি
মনে পড়ছে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের কথা। কৃষকবন্ধুর টাকা দ্বিগুণ করা হবে, চালু হবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড। রেশন পৌঁছে যাবে মানুষের দুয়ারে। একুশের ভোটে এমনই ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতি। বিরোধীরা বলেছিল, সব ধাপ্পা। এত টাকা আসবে কোথা থেকে? মানুষের মধ্যেও ছিল সংশয়। কারণ এমন প্রকল্প আগে দেখেনি বাংলা। তবে, সমালোচকদের মুখে ছাই দিয়ে প্রতিটি প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাতেই জন্মেছিল বিশ্বাস, কথা দিলে তা রাখেন মমতা।
আর এবার? এবার ১০০ দিনের বকেয়া মেটানোর ঘোষণামাত্র উঠেছিল সেই একই প্রশ্ন, এত টাকা আসবে কোথা থেকে? তার উত্তর মুখ্যমন্ত্রী মুখে দেননি। কাজে করে দেখালেন। শুরু হয়েছে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে তাঁদের হকের টাকা পাঠানো। আর এসব দেখে গ্রামের মানুষ কী বলছে? ‘মমতা শুধু কথাই রাখেন না, সঙ্কটকালে তিনিই গরিবের ত্রাতা।’
আরও পড়ুন-আসন নেই, প্রার্থী আছে, অসমের তালিকায় অজস্র ভুল, বিপাকে বিজেপি
এই সুবিধাপ্রাপ্তদের তালিকায় নাকি কেবল তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা? এমন একটা কথা বাজারে চাউর করার চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদি, গদ্দার অধিকারী, অবলাকান্ত মজুমদারের দলবল।
তাঁদের সবিনয়ে জানাই একটা ঘটনার কথা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা। নিছক গুজব বা রটনা নয়।
২০২৩ সাল পর্যন্ত সোনাঝুরি পঞ্চায়েত ছিল রাম-বাম জোটের দখলে। সেই সময়ের ১০০ দিনের কাজের টাকাও বকেয়া ছিল। এবার মিটছে। তবে, বেনিফিসিয়ারির তালিকা সামনে আসতেই শুরু হয়েছে হইচই। তৎকালীন বিজেপির পঞ্চায়েত সদস্য অজয় সেনের নাম রয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি স্কিমে। একাধিক জায়গায় রয়েছে সিদ্ধার্থ সেনের নাম। সিদ্ধার্থবাবু হলেন চাকদা গ্রামসভা আসনে বিজেপির পরাজিত প্রার্থীর স্বামী। তিনি অবশ্য অ্যাকাউন্ট চেক করেননি। তাই টাকা ঢুকেছে কি না বলতে পারেননি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের। তবে অনেক ভেবে জানিয়েছেন, হাজার ১৪/১৫ টাকা পাব।
বেনিফিসিয়ারির তালিকা প্রকাশ্যে আসায় দেখা যাচ্ছে, যে অজয়বাবু ছিলেন পঞ্চায়েত সদস্য, বেনিফিসিয়ারির তালিকায় তাঁর নাম। তাও আবার কমপক্ষে পাঁচ জায়গায়। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, এক ঝুড়ি মাটি না ফেলেও কেন বিজেপি নেতা-কর্মীদের অ্যাকাউন্টে ঢুকছে এত টাকা? অজয়বাবু গাওনা গাইছেন, ব্লক অফিসের ভিতরে একটি হাপা সংস্কারের ইট, বালি, সিমেন্টের টাকা তিনিই নাকি দিয়েছিলেন। সেই টাকা ঘুরপথে ‘মজুরি’ হয়ে তাঁর অ্যাকাউন্টে ঢুকছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বিজেপির অনুগ্রহপুষ্ট দালাল, এ এক ভয়ানক সত্য। সেই চঞ্চলরঞ্জনবাবু বলছেন, গরিব মানুষের আটকে থাকা হকের টাকা মিটিয়ে দেওয়াটা নাকি ‘নির্বাচনী ঘুষ’।
আরও পড়ুন-‘বিনা যুদ্ধে তৃণমূলকে উপহার,’ বিজেপির প্রার্থী তালিকা প্রকাশে কটাক্ষ দেবাংশুর
তাই নাকি! তাহলে কী চাইছিলেন উনি? ১০০ দিনের বকেয়া মজুরি না মিটিয়ে রাজ্য সরকার আদালতে যাক। আদালত থেকে নিয়ে আসুক মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ। সেটা করলে কী হত? গরিব, খেটেখাওয়া মানুষের দুর্ভোগ আরও কিছুটা লম্বা হত। কিন্তু রাজনীতির ইস্যুটা জিইয়ে রাখা যেত। নিয়োগ প্রক্রিয়ার মতো বকেয়া মজুরির বিষয়টি ঝুলে থাকলে গরিবদের উসকে দেওয়া কিঞ্চিৎ সহজ হত। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ায় সেই রাস্তাটা বন্ধ হয়ে গেল। এভাবে একের পর এক ইস্যু হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় হতাশা বাড়ছে বিরোধী শিবিরে। শিবরাত্রির সলতের মতো জ্বলছিল সন্দেশখালি। মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান গ্রেপ্তার হওয়ায় সেটাও গেল। কিন্তু গদি বাঁচাতে মোদি তা ছাড়বেন কেন? মোদিজির দশ বছরের রাজত্বে দেশের ধনী শিল্পপতিদের ঋণ মকুবের পরিমাণ ১৫ লক্ষ কোটি টাকা। এটাই কি ‘গরিবে’র প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা? সে জায়গায় দাঁড়িয়ে কোন মুখে উনি গরিবের মসিহা সাজার ন্যাকামি করেন, কে জানে!
আবার বলি, মোদি অ্যান্ড কোং-এর বিরোধিতা করার ১০৯টা কারণ আছে। তবে অন্যতম প্রধান কারণ একটাই।
মোদি পক্ষ রাজধর্ম পালনে অনিচ্ছুক। তাঁদের যাবতীয় রাজধর্ম পালন সংক্রান্ত বড় বড় লেকচার বাংলার বুকে দাঁড়িয়ে।
এক-আধটা নয়, অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায় এই বিষয়ে।
আরও পড়ুন-‘ক্রিকেট দেখছিলেন দুই চালক’, অন্ধ্রের ট্রেন দুর্ঘটনায় বিবৃতি রেলমন্ত্রীর
মণিপুর জ্বলছে মাসের পর মাস। কয়েক দফায় ভারত ভ্রমণে বেরলেও প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার সময় পাননি। বিশেষ কোনও বাক্যও খরচ করেননি উত্তর-পূর্বের এই অগ্নিগর্ভ রাজ্যের জন্য। সেখানকার নারীর সম্ভ্রম লুট নিয়ে, প্রকাশ্যে খুনখারাপি নিয়ে। এটাই তাঁর রাজধর্ম।
কাশ্মীর ভেঙে দু’টুকরো করা হয়েছে, সন্ত্রাস কমেনি। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিরোধী নেতা-নেত্রীদের নজরবন্দি করে রাখা হয়েছে। আজও সেখানে বিধানসভা ভোট হয়নি, শান্তিও ফেরেনি। এটাও তাঁর রাজধর্ম।
সন্দেশখালি নিয়ে আরামবাগে, কৃষ্ণনগরে তিনি সোচ্চার। কিন্তু বিলকিস বানো, হাতরাসের নির্যাতিতাকে নিয়ে বিস্ময়কর মৌনতা! ঢাকঢোল বাজিয়ে নোট বাতিল করেও কেন কালো টাকার দৌরাত্ম্য ঠেকানো গেল না, তা নিয়ে তাঁর আশ্চর্যজনক নীরবতা। গুজরাত দাঙ্গার সময় থেকেই মোদিজির রাজধর্মের অভিমুখ সাম্প্রদায়িক বিভাজনের মতোই মাটির চরিত্র অনুযায়ী বদলে যায়। যা দেখে সাধারণের ভ্রম হয়। চোদ্দো সালের প্রতিশ্রুতি ছিল দাউদকে ফেরানোর। বছরে দু’কোটি চাকরির। মাফিয়া ডনকে ফেরানো যায়নি। চাকরিও হয়নি। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা দূরঅস্ত্ ১৫ টাকাও ঢোকেনি। সেই রাজধর্মে ডাহা ফেল করলেও বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করে, দল ভেঙে গ্যারান্টির মালা পরিয়ে দিব্যি চলছে ভারত শাসন। সংখ্যালঘু হয়েও পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলে তিনি তাঁর রাজধর্মকে নিমেষে ঘুম পাড়িয়ে ক্ষমতা দখলে ওস্তাদ।
এই দুষ্টের বিদায় নিশ্চিত করতে দিকে দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করুন।