প্রতিবেদন : সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ লাগু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ক্ষোভ-বিক্ষোভ-প্রতিবাদ শুরু দেশজুড়ে। এবার এই আইনে স্থগিতাদেশ জারির আবেদন জানিয়ে মামলা দায়ের হল সুপ্রিম কোর্টে। শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে ভারতীয় মুসলিম লিগ ও আরও কয়েকটি সংগঠন। মামলাকারীদের আবেদন, প্রধান বিচারপতির এজলাসে যেন এই মামলার দ্রুত শুনানি হয়। আইনে বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠী সম্পর্কে বৈষম্যের মনোভাব নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন-রাজ্যে রাজ্যে প্রতিবাদের ঝড়, জ্বলছে বিজেপির অসম, বন্ধ
সামনেই লোকসভা নির্বাচন। তার আগে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতা ও একাধিক ক্ষোভের আঁচ থেকে নজর ঘোরাতেই সোমবার দেশজুড়ে কার্যকর হয়েছে সিএএ। প্রায় সাড়ে চার বছর পর ঝোলা থেকে সিএএ বের করে তা কার্যকর করার ঘোষণাতেই বিজেপির সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি স্পষ্ট। লোকসভা ভোটের মুখে ধর্মের ভিত্তিতে মেরুকরণ তীব্র করতে সিএএ-কে হাতিয়ার করতে চায় বিজেপি। নাগরিকত্ব আইন লাগু হওয়ার পর এই প্রশ্নও উঠছে, এতদিন কেন এই আইন নিয়ে উচ্চবাচ্য করেনি মোদি সরকার? বিরোধীদের অভিযোগ, ভোট রাজনীতির অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতেই এই আইন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
আরও পড়ুন-টিকাই হল বর্ম
এদিকে মঙ্গলবার থেকে চালু হয়ে গিয়েছে সিএএ সংক্রান্ত পোর্টাল। সেই পোর্টাল থেকেই আবেদন করা যাবে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম লিগের আবেদন, সিএএ কার্যকরের নির্দেশে যেন স্থগিতাদেশ দেয় সর্বোচ্চ আদালত। মামলাকারীদের তরফে বলা হয়েছে, এই নাগরিকত্ব আইন অসাংবিধানিক। ধর্মের ভিত্তিতে এখানে নাগরিকত্বের অর্থ তৈরি করা হয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে ভাগাভাগির কথা বলা হয়েছে, তাই এই আইন আদতে বৈষম্যমূলক এবং একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের নীতির বিরোধী।
আরও পড়ুন-রাজ্যে রাজ্যে প্রতিবাদের ঝড়, জ্বলছে বিজেপির অসম, বন্ধ
মুসলিম লিগের বক্তব্য, এই আইনে অ-মুসলিমদের নাগরিকত্ব প্রদানে দ্রুত পদক্ষেপ করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি আইনে মুসলিম সমাজের বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ধর্মের ভিত্তিতে এই আইন কার্যকর হলে তাতে দেশের সাংবিধানিক কাঠামো লঙ্ঘিত হবে। ধর্মনিরপেক্ষতার মূলে আঘাত করবে এই আইন। তাই সিএএ নিয়ে চূড়ান্ত রায় ঘোষণার আগে পর্যন্ত শীর্ষ আদালত এই আইন কার্যকর করা আটকে দিক। তাহলে তা দেশের পক্ষে সার্বিকভাবে ভাল হবে। নাগরিকত্ব আইন, পাসপোর্ট আইনে মুসলিম সমাজের মানুষের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ না করার আবেদনও জানিয়েছে মুসলিম লিগ।
আরও পড়ুন-ভুয়ো ভোটার নিয়ে মুখ পুড়ল গদ্দারের
এদিকে সিএএ সংক্রান্ত মামলাগুলি ২০২২ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত, বিচারপতি রবীন্দ্র ভট্ট, বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চে বিচারাধীন ছিল। প্রধান বিচারপতি অবসরগ্রহণের পর এই মামলাগুলি বর্তমানে বিচারপতি পঙ্কজ মিত্তালের বেঞ্চে বিচারাধীন। সোমবার থেকে চালু হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের অধীনে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, পার্সি ধর্মের লোকেরা নাগরিকত্ব পাবে। কিন্তু সেখানে মুসলিমদের সম্পূর্ণ বাদ রাখা হয়েছে। এই নিয়েই বিবাদ শুরু এবং ধর্মীয় বিভাজনের অভিযোগ। দিল্লিতে ইতিমধ্যে একাধিক জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। সিএএ ঘিরে অগ্নিগর্ভ অসম, বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিতাদেশের আবেদন জানানো হয়েছে। আরও কিছু সংগঠন এই আইনের বিরোধিতা করে মামলাকারীদের সঙ্গে যুক্ত হবেন বলে খবর।