প্রতিবেদন : ১৬ মার্চ থেকে ১৬ জুন। তিন মাস ধরে ভোট। ভোট তো নয়, যেন আইপিএল টুর্নামেন্ট! অবলীলায় দেড় মাসের মধ্যে লোকসভা নির্বাচন শেষ করে ফেলা যেত। কিন্তু তা না করে তিনমাস ধরে প্রলম্বিত ভোটের আয়োজনে নির্বাচন কমিশন বুঝিয়ে দিল, তারা বিজেপির অঙ্গুলিহেলনেই চলে। উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দফা বাড়িয়ে বাংলায় ভোট করার পরিকল্পনায় স্পষ্ট চক্রান্ত। বাংলা তৈরি সেই চক্রান্তের জবাব দিতে।
আরও পড়ুন-রাহুর দশা বিজেপির! দল ছাড়লেন প্রতাপ সিং
যত দফা, তত বড় জয় : বাংলায় আবারও সাত দফায় ভোটগ্রহণ। ২০১৯-এও সাত দফায় হয়েছিল। ২০২১-এ আবার তা বাড়িয়ে করা হয়েছিল আট দফা। একুশের বিধানসভা নির্বাচনে কোভিডের দোহাই দিয়ে ৮ দফায় নির্বাচন করেছিল কমিশন। তার জবাব বিজেপিকে হাতেনাতে দিয়েছিলেন মানুষ। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনেও জবাব দিতে তৈরি বাংলা। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, এক দফা ভোট হোক বা সাত দফা, আমরাই জিতব। একুশে আট দফা ভোট করেছিল করেছিল, হারিয়েছি। এবারও আরও বেশি করে হারাব।
আরও পড়ুন-শিক্ষিকাদের পোশাক নিয়ে হুলিয়া জারি গেরুয়া সরকারের, মহারাষ্ট্রে যেন তালিবানি ফতোয়া
দফা বাড়লে ভোট কমে : মনস্তত্ত্ববিদরা বলছেন, যত ভোটকে প্রলম্বিত করা যাবে, ততই মানুষের আগ্রহ কমবে। যত দফা ভোট ততই ভোট পড়ার হার কম। মানুষ আগ্রহ হারায় ভোট নিয়ে। বিজেপি ভোটের দফা বাড়িয়ে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া দমানোর চেষ্টা করছে। ভোট শতাংশের হার কমাতে চাইছে। মানুষকে ভোটদান থেকে বিরত রেখে ফায়দা তোলার নোংরা খেলা রয়েছে ভোটের এই দফাবৃদ্ধিতে।
পোলিং কমাতেই সাত দফা : তৃণমূলও অভিযোগ করেছে, পোলিং কমাতেই এই সাত দফা ভোটের চিত্রনাট্য রচনা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে কেন্দ্রের বিজেপি এই কাজ করেছে। মানুষ ফুঁসছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে। বাংলার মানুষের সঙ্গে বঞ্চনা করেছে কেন্দ্র। ভোটবাক্সে তার জবাব দিতে তৈরি তারা। মানুষের এই ক্ষোভ ও বহিপ্রকাশকে দমিয়ে রাখতেই ভোটের দফা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তিনমাস ধরে ভোট ভোট খেলায় বিজেপির লক্ষ্য মানুষের ক্ষোভ থিতিয়ে দেওয়া। বিজেপির এই চক্রান্তের বিরুদ্ধেই গর্জে উঠেছে তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও আইএনটিটিইউসির রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-যোগী পুলিশকে ডোন্ট কেয়ার! রাজার হালে জেলে দিন কাটাচ্ছে দাগি অপরাধী
একুশে কোভিড, এবার : চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য আরও বলেন, কোভিডের দোহাই দিয়ে একুশের বিধানসভা ভোট ৮ দফায় করেছিল বিজেপি। ২৪-এও ৭ দফায় ভোট করছে, এবার তাহলে কী কারণ দর্শাবে কমিশন? ১ দফায় ভোট হলে অনেক বেশি ভোট পড়ে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ভোটদান আটকাতেই কি তাহলে এই চক্রান্ত? এই চক্রান্তের জবাব মানুষ ভোটবাক্সেই দেবে। তা না হলে ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন ৭ দফায় ভোটগ্রহণ করা হত না। মনে রাখা উচিত, ১৬ মার্চ ভোট ঘোষণার পরই লাগু হয়ে গেল আদর্শ আচরণ বিধি। ভোট শেষ হবে ১ জুন। তারপর ১৬ জুনের মধ্যে হবে নতুন সরকারের শপথ। এই তিন মাস কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হবে না। অথচ অর্ধেক দিনেই পুরো ভোট পর্ব সেরে ফেলে মানুষকে পরিষেবা দেওয়া যেত।
গুজরাট ১ দফা, বাংলা ৭ : গুজরাটে যেখানে ১ দফায় ভোট, বাংলায় কেন ৭ দফায় ভোট? প্রশ্ন উঠেছে ঠিক সেখানেই। গুজরাটে ২৬টি আসন, বাংলায় ৪২ আসন। তার জন্য ৭ দফায় ভোট করতে হবে! এক দফায় যদি না হয়, দু-দফায় হতে পারত। সাত দফা কেন? তামিলনাড়ুতে ৩৯টি আসন, কেরলে ২০টি আসন, অন্ধপ্রদেশে ২৫ আসন, সেখানেও এক দফা। তাহলে বাংলায় কেন সাত দফা?
আরও পড়ুন-ভাল থাক পোষ্য
তা হলে উত্তরপ্রদেশ : বাংলার সঙ্গে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারে ৭ দফায় ভোটগ্রহণ করা হবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন, বাংলা ও বিহারে যেখানে ৭ দফায় ভোট হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশে তো তাহলে ভোট হওয়া উচিত ১৪ দফায়। নতুবা, উত্তরপ্রদেশে ৭ দফা ভোট হলে বাংলা বা বিহারে ভোট হতে পারে বড়জোর ৩ বা ৪ দফায়। উত্তরপ্রদেশে যেখানে ৮০টি লোকসভা কেন্দ্র, বাংলায় সেখানে মাত্র ৪২টি কেন্দ্র। অর্থাৎ অর্ধেক। ভোটারও উত্তরপ্রদেশের অর্ধেক। তাহলে কেন এই বিমাতৃসুলভ সিদ্ধান্ত, সে প্রশ্ন তুলছে বাংলা, প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষই। বাংলার মতো বিহারের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তাহলে কি সাত দফায় ভোট করে বাংলা ও বিহারে কেন্দ্রীয় শাসকদলকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়াই নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্য? বাংলায় ৭ দফা ভোট ঘোষণাতেই স্পষ্ট, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।