অবৈধ মুহূর্ত— দুই ভারত
তখন প্রদোষকাল। সন্ধ্যা নামছে ধীরে ধীরে। পুণ্য জাহ্নবী নদীর তীরে সূর্যবন্দনায় এক অজ্ঞাতকুল পুত্র। মাতা কুন্তীর সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন গোত্রহীন সুতপূত্র— ‘কে গো মাতো তুমি!’ সেদিন মাতা কুন্তী দিতে পারেননি তাঁর অবৈধ সন্তানের পরিচয়। অবিবাহিত কুন্তীর গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন সূর্য-পুত্র কর্ণ।
দুপুর তখন আড়াইটে, অগাস্ট মাসের আঠাশ তারিখ। সময়টা ২০২২ সাল, নয়ডার সেক্টর ৯৩-তে চোখের সামনে মাত্র ৯ সেকেন্ডে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল চল্লিশ তলার গগনচুম্বী সুপার টেক টুইন টাওয়ার। এই জোড়া বহুতলের একটির নাম অ্যাপেক্স অন্যটির নাম সিয়ানে। অ্যাপেক্সের উচ্চতা ১০০ মিটার সিয়ানের উচ্চতা ৯৭ মিটার। কুতুবমিনারের চেয়েও লম্বা এই যমজ টাওয়ার। মুম্বই এবং দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি সংস্থা নিমেষে ভেঙে ফেলে অবৈধ ন’শোটি ফ্ল্যাট।
আরও পড়ুন-অবৈধ ইস্তাহার
প্রাচীন ভারত থেকে আধুনিক ভারত— অবৈধতার মানচিত্র এমনভাবেই আঁকা হয়েছে। সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবেশ ভেদরেখা টেনেছে বৈধ আর অবৈধর মাঝে। জীবন থেকে জীবিকা বন্দি হয়েছে বৈধ-অবৈধর ঘেরাটোপে। পরকীয়া শব্দটাই ছিল অচল। সব নারী সব পুরুষই ছিল সকলের। তখন অবাধ সম্পর্কের যুগ।
যা নেই ভারতে তা নেই ভারতে
বসুদেবের দুই স্ত্রী— দেবকী ও রোহিণী। দেবকীর এক ভাই কংস। এক অবৈধ সঙ্গমের পরিণামে কংসের জন্ম হয়। সে-যুগের ধর্ম ও ঐতিহ্য ছিল যে কীভাবে একটি শিশুর জন্ম হল তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন উঠত না, শিশুটির জন্মদাত্রী মা যদি নির্দিষ্ট কোনও গোষ্ঠীভুক্ত হয়ে থাকেন, শিশুটিও সেই গোষ্ঠীর বৈধ অংশ হয়ে উঠবে। কিন্তু যাদবরা কংসকে প্রত্যাখ্যান করলেন। তাঁরা কংসকে অবৈধ সন্তান বলে ডাকতে লাগলেন। একজন মহান যোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও প্রথমে অবৈধ পরিচয়ে লড়াই শুরু করলেন।
মহাভারতের মহর্ষি উদ্দালক আর তাঁর পুত্র শ্বেতকেতুর কথা বলতেই হয়। শিশু শ্বেতকেতু আর স্বামী উদ্দালকের সামনে দিয়ে স্ত্রী চলে যাচ্ছেন অন্য এক ব্রাহ্মণের সঙ্গে বিহারে। শ্বেতকেতু অস্থির, উদ্দালোক নির্বিকার। ভাবছেন স্ত্রী যাচ্ছেন তাতে ক্ষতি নেই, তবে ফিরলেই হল! অস্থির শিশুপুত্রকে সান্ত্বনা জানিয়ে বলেছেন এটাই স্ত্রী জাতির ধর্ম। সে-সময় অর্থাৎ বৈদিক যুগে গো-ধর্ম বলে একটা কথা প্রচলিত ছিল, গো-ধর্ম মানে গরুকে যত্রতত্র বিহার করা। তবে তখনও সংস্কৃত রসশাস্ত্রে স্বকীয়-পরকিয়া পার্থক্য করা হয়নি।
পুরাণে মহাকাব্যে বৈধ-অবৈধ সীমারেখা আঁকা হয়নি প্রাচীন ভারতে। রাক্ষস, অসুর, গান্ধর্ব— যে মতেই বিয়ে হোক না কেন পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে কখনও নারীকে সম্পূর্ণ মান্যতা দেওয়া হয়নি, নারীর উপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য নেই পুরুষেরও। কামনা এবং ভালবাসাকে বৈধ-অবৈধর গণ্ডির মধ্যে বেঁধে রাখা হয়নি। বৃহস্পতির স্ত্রী তারাকে হরণ করে নিয়ে গিয়েছে চন্দ্র, সপ্তর্ষির স্ত্রীদের নিয়েছে অগ্নিদেব, ভৃগুর স্ত্রী পুলোমাকে নিজের করে নিয়েছে রাক্ষস আবার অন্যদিকে বান্ধবী দেবযানীর স্বামী যযাতিকে নিজের করে নিয়েছে শর্মিষ্ঠা।
আরও পড়ুন-পাতায় পাতায় পরকীয়া
প্রাচীন গ্রিসের অবৈধ রীতি
গ্রিক পুরাণেও এর ব্যতিক্রম নয় প্রেমের দেবী আফ্রোদিতি। স্বামী হেফাস্টাস থাকা সত্ত্বেও আফ্রোদিতি প্রেম করছেন যুদ্ধের দেবতা এ্যারেস এবং বার্তাবহনের দেবতা হার্মিসের সঙ্গে। স্ত্রীর অবৈধ প্রেমে বেজায় চটলেন হেফাস্টাস। তৈরি করলেন হাত পাতলেন প্রেমিক যুগল আফ্রোদিতি এবং অ্যারেসকে হাতেনাতে ধরার, সেই ফাঁদে আটকে পড়লেন আফ্রোদিতি ও তাঁর প্রেমিক। এদিকে জরীপ পুরাণে অবৈধ প্রেমে মানুষ ও দেবতা মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছে। অ্যাডোনিস এবং অ্যাংকাইসিজ হয়ে উঠেছেন দেবি টাইটানের প্রেমিক। পরের স্বামী এবং প্রেমিকের দিকে নজর দিয়েছেন অন্য দেবীরাও। সূর্যের দেবতা ইওস, টাইটান আস্ত্রেউসের বিবাহিত স্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও সিফালাসের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছেন একই সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন অ্যারেসের সঙ্গেও। আবার পাতালের দেবতা হেডিসের স্ত্রী দেবী পার্সিফোনে সম্পর্ক তৈরি করছেন অ্যাডোনিসের সঙ্গে। হেসিওডের থিওগনি, হোমারের ইলিয়াড অডিসি আর ভার্জিলের ইনিদেতে এমন নানা অবৈধ সম্পর্কের কথকথা।
অবৈধ ফ্রেমে দুই দেবরাজ
গ্রিক আর বৈদিক— দুই ভৌগোলিক দূরত্বের আখ্যানে দুই দেবরাজ পরনারী গ্রহণে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। জিউস আর ইন্দ্র দু’জনেই অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন বারবার। গৌতমের স্ত্রী অহল্যা, দেবশর্মার স্ত্রী রুচির প্রতি ইন্দ্রের আসক্তি গোপন ছিল না। অন্যদিকে স্পার্টার রাজা টিন্ডারিউসের স্ত্রী লিডা ছিল জিউসের প্রেমিকা। আবার গ্রিক দেব পোসাইডনও পরস্ত্রীর প্রতি কম আসক্ত ছিলেন না। তবে তাতে তাদের দেবত্ব বিন্দুমাত্র কমেনি। একই ভাবে বাইবেলেও পরস্ত্রী বাথসেবার প্রেমে পড়েছেন ডেভিড।
আরও পড়ুন-৫ বছর রান্নার গ্যাস বিনামূল্যে দিন! ফের অভিষেকের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন মোদি সরকার
কলঙ্কিনী রাধা ও ক্লিওপেট্রা
আজকের দিনে ভালবাসার অর্থই যে অবৈধ প্রেম মধ্য যুগে সাহিত্যে তার অবাধ বিচলন। পুরুষেরা সামাজিক রীতিনীতিতে বেঁধে রেখেছেন নারীকে। স্বামী ছাড়া অন্য পুরুষের দিকে তাকানোও তখন ছিল পাপ। অথচ মঙ্গলকাব্যে স্ত্রী লহনাকে রেখে দিব্যি খুল্লনাকে বিয়ে করেছে ধনপতি সওদাগর। ঘরে স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও চিতোরের রাজা রত্ন সেন সিঙ্গলের সুন্দরী রাজকুমারী পদ্মাবতীকে বিয়ে করেছেন ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের আখ্যানে। বারবার মধ্যযুগে সমজের শক্ত শিকল ভেঙেছে অবৈধতার আখ্যান। প্রায় সব দেশের সাহিত্যেই অবৈধ প্রেমের জয়জয়কার। শিরি ফরহাদ, ইউসুফ জোলেখা কোনও কাব্যেরই নায়িকা সোকিয়া নয়। আর বৈষ্ণব পদাবলির পরতে পরতে রাধার আকুতি প্রতি পদে বাধা উপেক্ষা করে তবু রাধা অভিসারে চলে, অপেক্ষা করে বাঁশির। কালার প্রতি এই প্রেম শুধু দেহে নয় মনেও। বৈষ্ণব কাব্যের এই অবৈধ প্রেমই নিকশিত হেম। যমুনার তীরই হোক আর পারস্যের গোলাপ বাগান অবৈধতার স্বরলিপি তৈরি করছেন বাদশা খুসরুর স্ত্রী শিরীর ফরহাদের জন্য। আর সাগরপারে ইউরোপে তখন সাহিত্যে চলছে অবৈধবন্দনা। রাজা আর্থারের স্ত্রী রানি গুইনিভেরার সঙ্গে স্যার ল্যান্সলোটের প্রেম। অন্যদিকে তৃস্তান ও ইসল্টের অবৈধ প্রেমের গল্প ভুবন বিখ্যাত। আবার শেক্সপিয়র অ্যান্তোনিও-ক্লিওপেট্রা প্রেমকে বৈধতার সীমায় আঁকেননি। তাই অ্যান্তোনিও বিয়ে করেছেন অক্টভিয়াকে। আবার ফিরেও এসেছেন ক্লিওপেট্রার কাছে। বিবাহিত অ্যান্তোনিওকে ভালবাসতে সংকোচ দেখায়নি ক্লিওপেট্রা।
আরও পড়ুন-কাল থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু মুখ্যমন্ত্রীর
সুপ্রিম বৈধতা
মোহাম্মদ ইলিয়াস আলি বিয়ে করেন ভাল্লিয়াম্মাকে। তাঁদের সন্তানের নাম দেন সামসুদ্দিন। ইলিয়াসের মৃত্যুর পর সামসুদ্দিন বঞ্চিত হন বাবার সম্পত্তি থেকে। ইলিয়াসের পরিবার দাবি করেন সামসুদ্দিন অবৈধ সন্তান। কারণ ইসলামের আইন ভেঙে ইলিয়াস হিন্দু নারীকে বিয়ে করেছেন। অবৈধ বিয়ের ফলে যে সন্তানের জন্ম হয়েছে তাও অবৈধ। সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মামলা সুপ্রিম কোর্টে যায়। ২০১৯-এর ২২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, এই বিয়ে নিয়মিত বা বৈধ নয় তবে বিয়ের পর যে সন্তানের জন্ম হয়েছে সেই সন্তান বৈধ। রায়ে আদালত আরও বলে, ওই সন্তান যেহেতু বৈধ তাই বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার তার রয়েছে। বিচারপতি এন ভি রামানা এবং মোহন এম শান্তনা গৌদারের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, একজন মুসলিম পুরুষ যদি আগুনের উপাসক অথবা পৌত্তলিকতায় বিশ্বাসী এমন কোনও নারীকে বিয়ে করে সেই বিয়ে নিয়মিত নয়। তবে কোনওভাবেই বেআইনিও নয়। বাবার সম্পত্তির দাবি সেই তাদের সন্তান করতে পারেন। বৈধ-অবৈধর সীমারেখা ব্যাখ্যা করে সুপ্রিম কোর্ট সামাজিক বিজ্ঞানের অন্য ছবি তুলে ধরে। তাই সমাজে অবৈধ শব্দের ব্যবহারে কিছুটা শিথিলতা আসে।
দেশে দেশে অবৈধ
ইংল্যান্ডের দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট এক সমীক্ষায় বিভিন্ন দেশের অবৈধ সম্পর্কের ছবি তুলে ধরেছে। যার শীর্ষে রয়েছে থাইল্যান্ড। অবশ্য বাকি দেশগুলির অবস্থান ইউরোপের সীমানায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিবাহিত দম্পতিদের মধ্যে সমীক্ষা করে দ্য রিচেস্ট ও ম্যাচ ডট কম। সমীক্ষার শীর্ষে থাইল্যান্ড। প্রায় ৫৬ শতাংশ দম্পতি অবৈধ সম্পর্কে যুক্ত। পিছিয়ে নেই ডেনমার্ক ও ইতালিও। ডেনমার্কের ৪৬ শতাংশ দম্পতি বিবাহবহির্ভূত অবৈধ সম্পর্কে জড়িত। ৪৫ শতাংশ মানুষ অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে ক্যাসোনোভা খ্যাত ইতালিতে। একই সীমারেখায় দাঁড়িয়ে রয়েছে জার্মানিরাও। ফ্রান্স, নরওয়ে অবৈধ সম্পর্কের ইনডেক্স খুব একটা কমাতে পারেনি, প্রায় পিছু পিছু চলছে বেলজিয়াম, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও ফিনল্যান্ড।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর জন্য আশীর্বাদ চেয়ে শুরু হোয়াটসঅ্যাপ প্রচার
খেলার দুনিয়ার অবৈধ ডোপিং
অলিম্পিকে ভারোত্তোলন, অ্যাথলিট, স্প্রিন্টার, ম্যারাথনার, তিরন্দাজ, শুটার— প্রায় প্রতিটি ক্রীড়াবিদই প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাওয়ার জন্যে ড্রাগ ব্যবহার করে। ফলে তারা দক্ষতা ও উৎকর্ষতার শিখরে পৌঁছে যায়। অবৈধ ড্রাগে কার্যক্ষমতা ও বুদ্ধির বৃদ্ধি পায়। ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি ডোপিং এজেন্সি কয়েক বছর আগেই নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকা প্রকাশ করেছে। সিনথেটিক অ্যানাবোলিক স্টেরয়েড ব্যবহার করে তারা শক্তি ও কার্যক্ষমতা বহুদূর বাড়াতে পারে। বিভিন্ন ধরনের উদ্দীপক (অ্যামফিটামাইন) ব্যবহার করছে ফুটবলার থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত অ্যাথলিটরা। ফলে তাঁদের স্নায়ুতন্ত্র উদ্দীপিত হচ্ছে। তবে রক্তের ডোপিং ক্রীড়া জগতের অবৈধতার মানচিত্রে নতুন সংযোজন। অবৈধ এই ডোপিং এড়িয়ে চলার জন্যে বিভিন্ন ধরনের এজেন্ট ব্যবহার করে যাতে ইউরিন আউটপুট বারে বারে হয়, শরীর থেকে অবৈধ ওষুধের মাত্রা কমতে থাকে। এই মাস্কিং এজেন্টের সাহায্যে অবৈধ ডোপিং করেও অনেকে পরীক্ষকদের চোখে ধুলো দেয়। অনেকে আবার মেদ কমানোর জন্য ড্রাগের ব্যবহার করেন। ক্রীড়াবিদরা অবৈধ ভাবে হিউম্যান গ্রোথ হরমোন, পেপটাইড হরমোন, বিতাব্লকার এইগুলো ব্যবহার করেন।
অবৈধ ড্রাগ ও খেলার দুনিয়া
অবৈধ এই ডোপিং খেলাধুলার জগতে প্রায় রুটিন হয়ে উঠেছে। ক্রীড়াবিদরা ধরা পড়লেই নানা বিশ্বাস-অবিশ্বাসের কথা বলতে থাকেন। পেরুর জাতীয় ফুটবল একাদশের ক্যাপ্টেন পাওলো গেরেরো অবৈধ কোকেন ব্যবহার করার জন্য রাশিয়ার বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছেন। জার্মানির বিটারবাউম্যান ১৯৯২-এর অলিম্পিকে ৫০০০ মিটার দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হলেও পড়ে তাঁর ড্রাগ টেস্টে নান্ড্রোলন ধরা পড়ে। ১৯৯৯ সালে বাউমানকে এই অবৈধ ড্রাগ ব্যবহারের কারণে দু’বছরের জন্য ব্যান করা হয়। এবারে অলিম্পিকে গাঁজার গল্প। অলিম্পিকের ইতিহাসে স্নো বোর্ডিং-এ প্রথম সোনা জেতেন ক্যানাডার রস রেবাগলিয়াতি। ১৯৯৮ সালে জেতার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তার স্যাম্পেলে গাঁজা পাওয়া যায়। তারপর সাময়িকভাবে তাঁকে ডিসকোয়ালিফাই করা হয়। তবে অবৈধ ডোপিং হওয়া সত্ত্বেও ছাড় পেয়েছেন অনেকে। সম্ভবত এইটাই খেলাধুলায় প্রথম অবৈধ ডোপিং-এর ঘটনা। ১৯০৪ সালে সেন্ট লুইসের ম্যারাথনে ট্রেনাররা মার্কিন দৌড়বিদ টমাস হিক্সকে স্ট্রিকনিন এবং ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে খাইয়েছিলেন। হিক্স রেসে যেতেন ঠিকই যদিও ফিনিশিং লাইনে অচেতন হয়ে পড়েন। তখন ডোপিং-এর নিয়মকানুন ছিল না। তাই অবৈধ ডোপিং করেও বিজয়ী হন হিক্স। ডেনিস মিচেল ১৯৯২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে রিলেতে সোনা যেতেন। কিন্তু ছয় বছর পর তাঁর শরীরে অবৈধ টেস্টোস্টেরন পাওয়া যায়। মিচেল দাবি করেন তাঁর নমুনা সংগ্রহের আগে পাঁচ বোতল বিয়ার এবং স্ত্রীর সঙ্গে চারবার সঙ্গমে লিপ্ত হয়েছিলেন। মার্কিন ট্রেক অ্যান্ড ফিল্ড অথরিটি এটা মেনে নিলেও আইএএএ সেটা মেনে নেয়নি। তবে খেলাধুলার জগতে ঠোঁটের মলম থেকে বিপত্তির মুখে পড়েছিলেন নরওয়ের স্কি খেলোয়াড় তেরেজা ইউহাগ। অ্যানবলিক স্টেরয়েডের জন্যে দেড় বছরের জন্য তাঁকে ব্যান্ড করা হয় ফলে। তিনি অংশ নিতে পারেননি শীতকালীন অলিম্পিকে। ইউহাগের দাবি ঠোঁট না ফাটার একটি মলম ব্যবহার করেই তাঁর এই বিপদ। পরে অবশ্য তাঁর চিকিৎসক পদত্যাগও করেন। জার্মানির মহিলা শর্টপার্টার ক্রিগার (হাইডি) এমন অবৈধ স্টেরয়েডের ব্যবহার করেছিল যে শারীরিকভাবে সে ট্রান্সজেন্ডারে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। তবে বিশ্ব ক্রিকেটের কিংবদন্তি ঘূর্ণি বোলার শেন ওয়ার্নকে ২০০৩ সালে এক বছরের জন্যে নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ তাঁর নমুনায় ডিউরেটিক পাওয়া গেছিল। তবে ওয়ার্ন অবশ্য বলেছিলেন তাঁর মা নাকি তাঁকে ওজন কমানোর জন্য ওই পথ্যটি খেতে দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-জল ব্যবহারে জরিমানা বেঙ্গালুরুতে
অবৈধ অনুপ্রবেশ
অবৈধ শব্দটা শুধু মাত্র খেলার জগতে ডোপিং মানচিত্রে আটকে নেই। বিভিন্ন দেশের সীমান্তে চলছে অবৈধ অনুপ্রবেশ। হাজার হাজার উদ্বাস্তু ও শরণার্থীরা আশ্রয় নিচ্ছেন অন্য দেশে। দেশ ভাগের মানচিত্রে বাঙালির কাছে এই ছবি অতি-পরিচিত। আবার ভারত বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তেও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়ে ভাবছে রাষ্ট্রসংঘও। তবে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয়, বিশ্বের নানা দেশে অবৈধভাবে ঢুকছে নানা অস্ত্র। অবৈধ এসব অস্ত্র ব্যবহার করছে সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি ও ডাকাতরা। অবৈধ অস্ত্রপাচারের মানচিত্রে দিশাহারা সীমান্তরক্ষীরা।
অবৈধ সাইবার হানা
এখন অবৈধ কাজকর্মের সেরা ঠিকানা সাইবার। প্রতি মুহূর্তে এই ডিজিটাল নাগরিকরা আশঙ্কায় রয়েছে হ্যাকিং-এর। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত তথ্য কুক্ষিগত করছে হ্যাকাররা। অবৈধ হ্যাকিংয়ে বিশ্ব শোর মাচিয়েছে উইকিলিকস। তবে অ্যান্টি ভাইরাসের মতো হ্যাকারদের প্রতিরোধ করার জন্য বাজারে এসেছে বৈধ হ্যাকাররা— এথিক্যাল হ্যাকার। এই এথিক্যাল বা হোয়াইট হ্যাকাররা কোম্পানির সাইবার নিরাপত্তায় দুর্বলতা খুঁজে বের করে। জগৎ জুড়ে অবৈধ হ্যাকারদের রুখে দিতে এখন এদের রমরমা।
অবৈধ বলে আদৌ কিছু হয় কি না, এ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। সম্পর্ক থেকে সমাজ সাহিত্য থেকে সময় জুড়ে রয়েছে অবৈধতার হাতছানি। কিন্তু যে প্রশ্নটার উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি— কে ঠিক করবে কোনটা অবৈধ, সময়, দেশ, রাষ্ট্র নাকি ব্যক্তি! কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড় তাদের স্বাধীনতা কি বন্ধক রাখবে বৈধতার আলমারিতে?