প্রতিবেদন : আদৌ কি বাস্তবসম্মত ছিল নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত? নাকি নেপথ্যে ছিল অন্য কোনও রহস্য? অন্য কোনও বিশেষ উদ্দেশ্য? এই প্রশ্নের উত্তর আজও দিতে পারেনি মোদি এবং তাঁর গেরুয়া সরকার। কালো টাকা উদ্ধারের অজুহাতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এবার মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় তুললেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি। বাতিল হয়ে যাওয়া টাকার ৯৮% যদি রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ফিরে আসে, তাহলে কালো টাকা উদ্ধার হল কই? প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বি ভি নাগরত্না। তিনি মনে করেন, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত যেভাবে নেওয়া হয়েছিল তা মোটেই যথাযথ ছিল না। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল খুব তাড়াহুড়ো করে। অনেকে বলেন সেইসময়ের অর্থমন্ত্রীরও আদৌ জানা ছিল না বিষয়টা। একইসঙ্গে কিছুক্ষেত্রে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করলেন বিচারপতি নাগরত্না। তাঁর স্পষ্ট অভিমত, কোনও রাজনৈতিক দলের কথায় নয়, সংবিধান মেনে কাজ করুন রাজ্যপালরা। বুঝিয়ে দিলেন, কোনও রাজনৈতিক দলের কথায় বিল আটকে রাখবেন না। সংবিধানের নির্দেশ পালন করুন।
আরও পড়ুন-কালবৈশাখীর তাণ্ডব, ভেঙে পড়ল গুয়াহাটি বিমানবন্দরের একাংশ, বন্ধ প্রবেশপথ
২০১৬ সালে মোদি সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়। ডিভিশন বেঞ্চের পাঁচ সদস্যের একজন হয়ে সেই মামলা শুনেছিলেন বিচারপতি নাগরত্না। তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন, যদিও পরে সুপ্রিম কোর্টে এটি পাশ হয়ে যায়। এত বছর পর ফিরে এল সেই প্রসঙ্গ। হায়দরাবাদের একটি আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে মোদি সরকারকে কাঠগড়ায় তুললেন বিচারপতি।
বি ভি নাগরত্না বলছেন, সেই সময় অনেকের মনে হয়েছিল, নোট বাতিল ভাল সিদ্ধান্ত। এটি কালো টাকা সাদা করার প্রয়োজনীয় পন্থা হতে পারে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল, হিসাববহির্ভূত টাকা সরকারের খাতায় ঢুকে যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে আয়কর দফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, সেই সময়ে এই বিষয়টি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রীও জানতেন না। হিসেব বলছে সেই সময় বাতিল হওয়া ৯৮ শতাংশ নোট ফিরে এসেছে। তাহলে কালো টাকা উদ্ধার হল কই? এরপরই আসরে নেমেছে বিরোধীরা। তাঁদের কথায়, বিচারপতি নিজেই বলে দিচ্ছেন নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। আসলে এইসব ভাঁওতা দিয়ে বিজেপি নিজেদের পকেট ভরার চেষ্টা করেছে বলেই অভিযোগ তাঁদের।
আরও পড়ুন-ভেস্তে গেল গেরুয়া পরিকল্পনা, তোলা হল না ১০ হাজার কোটির বন্ড
নোট বাতিলের যৌক্তিকতার পাশাপাশি রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বি ভি নাগরত্না। যেভাবে রাজ্যপালদের বিভিন্ন বিতর্কিত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আদালতে মামলা হচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষের মনে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এটা ভাল লক্ষণ নয় বলেই মত তাঁর। কোনও রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয় বরং সংবিধান মেনে রাজ্যপালদের কাজ করার পরামর্শ দিলেন বিচারপতি।