রহস্যময়ী
রহস্য শব্দটিকে যিনি নিজের জীবনে মূর্ত করে তুলেছিলেন, তিনি অবশ্যই সুচিত্রা সেন। পঞ্চাশ-ষাট সত্তরের দশকের রূপালি পর্দাতেই শুধু নয় তিনি রহস্য জারি রেখেছিলেন ‘প্রণয় পাশা’ ছবির মুক্তির পরবর্তী পর্বেও। এই রহস্যের সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে তাঁর অভূতপূর্ব সংযম। সে-সংযম শিরোনাম না হওয়ার। সে-সংযম তথাকথিত ব্রেকিং নিউজ না হওয়ার। অথচ তিনি যদি চাইতেন তা হলে অনায়াসেই তা তিনি হতে পারতেন। এও এক রহস্যই বটে। খবর তৈরি অথবা খবর উপজীব্য হওয়ার অপরিমেয় প্রতিযোগিতার এই দুরন্ত দিনে তিনি বরাবর এক রহস্য-নির্লিপ্তিতে আদ্যন্ত সমাহিত।
আরও পড়ুন-রহস্য! জলের ট্যাঙ্কে ৩০ বাঁদরের দেহ
আপসহীন জীবন
পেশাদার জীবনের স্বার্থেই নায়িকাদের সে-সময় থেকে আজও নানান আপসের মধ্যে দিয়েই যেতে হয়। কানন দেবী তাঁর ‘সবারে আমি নমি’ নামের আত্মজীবনী গ্রন্থে সেকথা অকপটে স্বীকার করেছেন। সুচিত্রা সেন সেখানেও এক মূর্তিমান রহস্য। নিজের মধ্যে হীনমন্যতার সৃষ্টি হতে পারে এমন কোনও আপস না করে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রের একেবারে শীর্ষে পৌঁছে গেলেন। আপস করতে চাননি বলে তিনি সত্যজিৎ রায় থেকে রাজ কাপুরের অফার ফিরিয়ে দিতে পেরেছেন অনায়াসে। হয়ে গেছেন বাংলা ছবির কিংবদন্তি নায়িকা। বাংলার সিনেমার স্বর্ণযুগ সুচিত্রা সেনের রহস্য-রোমান্সের কাছে চিরঋণী থাকবে। শারীরিক সৌন্দর্যে তিনি অপরূপা, অভিনয় দক্ষতায় তিনি অতুলনীয়া। এই দুইয়ের মিশেলে মহানায়িকাকে বিশ্ববন্দিতা করে তুলতে পেরেছিল। তিনি এই জনপ্রিয়তায় পথভ্রষ্ট হননি। পরিবর্তে নিজের পথ তিনি নিজেই আবিষ্কার করে নিয়েছেন। নায়ক-প্রধান সিনেমা থেকে ধীরে ধীরে সরে গিয়ে নায়িকা-প্রধান চরিত্রে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্বভাবতই মনে পড়বে দীপ জেলে যাই, সাত পাকে বাঁধা, উত্তর ফাল্গুনী, সন্ধ্যা দীপের শিখা, মেঘ কালো, ফরিয়াদ, স্মৃতিটুকু থাক প্রভৃতি ছবির কথা। এই সমস্ত ছবির কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদা বোধের প্রতি তিন দশক জুড়ে সুবিচার করে যাওয়াটা কিন্তু মোটেই খুব সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। কিন্তু মহানায়িকা সে কাজটাকে নিতান্তই সহজ করে দেখাতে পেরেছিলেন। তাঁর অভিনয়শৈলী দিয়ে আপামর বাঙালিকে তিনি আমোদিত করে রেখেছিলেন।
আরও পড়ুন-ঠাকুরনগরে আজ থেকে মতুয়া মেলা সতর্ক প্রশাসন
সংক্ষেপে জীবনকথা
১৯৩১ সালে ৬ এপ্রিল বাংলাদেশের পাবনায় করুণাময় দাশগুপ্ত ও ইন্দিরা দাশগুপ্তের দ্বিতীয় কন্যা সুচিত্রার জন্ম। পিতৃদত্ত নাম রমা। পাবনা হাইস্কুলের রেজিস্টারে তাঁর নাম রমা দাশগুপ্ত। ১৯৪৭ সালে বিবাহ। স্বামী দিবানাথ সেন। গায়িকা হিসেবে পার্ক স্ট্রিটের এক স্টুডিওতে স্বামীর সঙ্গে অডিশন দিতে গিয়েছিলেন। সফল হলেন। তাঁকে অভিনয়ের জন্য সেখান থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়। শ্বশুর আদিনাথ সেন পুত্রবধূকে ছবি করার ব্যাপারে সম্মতি দিলেন। যদিও তাঁর প্রথম অভিনীত ছবি ‘শেষ কোথায়’ কখনও মুক্তি পায়নি। কন্যা মুনমুন সেনের জন্ম ১৯৪৮ সালে। ১৯৫৩ সালে প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সাত নম্বর কয়েদি’। পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্ত। ওই ছবির প্রধান সহকারী পরিচালক নীতীশ রায় রমার পরিবর্তে নতুন নামকরণ করলেন সুচিত্রা। ১৯৫৪ সালে রোম্যান্টিক জুটি হিসেবে সুচিত্রা-উত্তমের প্রতিষ্ঠা হল ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবির মধ্য দিয়ে। ১৯৫৫-তে বম্বে গিয়ে ‘দেবদাস’ ছবির মধ্যে দিয়ে সাড়া ফেলে দিলেন। ১৯৫৮-তে বিবিসির লন্ডন অফিসে প্রোগ্রাম করলেন। ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত হল তাঁর গানের রেকর্ড। এরপর শুধু উন্নতি আর উন্নতি।
অমরত্বের অভীপ্সা
ওঁর জীবনী কে না জানে। কিন্তু আলাদা করে সুচিত্রার ঘুরে তাকানো বা হাসির ভঙ্গি এই প্রজন্মের দর্শকদের কেমন লাগে সে- প্রশ্নটা ভিন্ন। তবে ইতিহাসের খাতিরে সব প্রজন্মকেই কিন্তু মনে রাখতে হবে রিনা ব্রাউনকে। আর শুধু রিনা ব্রাউন বললেও ভুল হয়। সবার মনে রাখতে হবে পান্নাবাইয়ের কথা। রাধার কথা। উত্তমকুমারের ক্যারিশমার বাইরেও তিনি নিজে কতটা পথ একা চলতে পারেন সম্ভবত সেটা জানার অদম্য কৌতূহল তাঁর মধ্যে ছিল। আর তাই কখনও তিনি দীপ জ্বেলে যাই ছবিতে বসন্ত চৌধুরীর বিপরীতে রাধা হয়েছেন। কখনও বিকাশ রায়ের বিপরীতে উত্তর ফাল্গুনীতে দেবযানী ওরফে পান্নাবাই হয়েছেন। যদিও তারও আগে দেবদাস ছবিতে দিলীপ কুমারের বিপরীতে তিনি হয়েছিলেন পার্বতী। শেষের দিকে সঞ্জীব কুমারের বিপরীতে আঁধি ছবিতে তিনি হয়েছিলেন আরতি।
আরও পড়ুন-গণধর্ষিতা হওয়ার অপরাধ! পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হল না ছাত্রীকে
ঝড়ের সঙ্গে পথ চলা
টালিগঞ্জের লড়াইটা সম্ভবত তাঁর কাছে বেশি চ্যালেঞ্জিং ছিল। যখন তিনি তাঁর ক্যারিয়ার শুরু করছেন সেই সময় তিনি দেবকীকুমার বসুর মতো নামকরা পরিচালকের ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য’তে বিষ্ণুপ্রিয়া করেছেন। তাঁর অভিনয় জীবনের বিশেষ মোড় সেখান থেকে।
উত্তমকুমারের সঙ্গে তাঁর স্বর্গীয় রসায়নের অনন্য হাতছানি এড়িয়ে অভিনয় জীবনের বিভিন্ন বাঁকে সুচিত্রা করে ফেলেছিলেন স্মৃতিটুকু থাক, মেঘ কালো, ফরিয়াদ, প্রণয় পাশা, হসপিটালের মতো ছবি।
অভূতপূর্ব রসায়ন
উত্তম-সুচিত্রা জুটির মধ্যে কে বড় শিল্পী এই নিয়ে তাঁদের ভক্তদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক এখনও জমজমাট। কেউ উত্তমকুমারের কথা বলেন। আর কেউ বলেন সুচিত্রার কথা। আবার কেউ কেউ বিশ্লেষণ করে দেখান উত্তম যদি অভিনয়ে এগিয়ে থাকেন, সুচিত্রা তবে এগিয়ে আছেন সৌন্দর্যে। রূপালি পর্দায় তাঁদের কথাবার্তা হাসি-কান্না, প্রেম-বিচ্ছেদ, গান যে মাদকতার মায়াজাল বুনে দিয়েছে তা থেকে দীর্ঘদিন দর্শক বেরিয়ে আসতে পারেননি। সুচিত্রা সেনকে কখনও পাশের বাড়ির মেয়ে বলে ভুল করা যাবে না। অথবা মাটির কাছাকাছি তাঁর অভিনয়ধারা তা-ও বলা যাবে না। কিন্তু তাঁর এমন দীপ্তি ছিল যে দর্শক সিনেমা দেখতে বসে চরিত্রের কাটাছেঁড়ায় মন দিতে পারতেন না। হয়তো সেটাই সুচিত্রা সেনের ইউএসপি। তাছাড়া ৫০, ৬০, ৭০-এর দশক জুড়ে টালিগঞ্জে একমাত্র সুচিত্রা সেনের নামেই বক্স অফিস মাত করার বাজি ধরা যেত।
নিভৃতচারিণী
১৯৭৮ সালে প্রণয় পাশা ছবিতে তাঁর শেষ অবতরণের পর থেকে জনসমক্ষে আসা তিনি ক্রমে-ক্রমে কমিয়ে দিতে দিতে স্বেচ্ছায় নির্বাসন নিয়েছিলেন। অর্থ- যশের বিরাট মোহের থেকে কীভাবে নিজেকে উত্তীর্ণ করা যায়, হাতছানি কীভাবে উপেক্ষা করা যায় তা সুচিত্রা সেনের কাছ থেকে শিক্ষণীয়। উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘প্রিলিউড’ কাব্যগ্রন্থে নির্জন বাসের কথা বলা হয়েছে। তেমনি নিভৃতচারিণী হয়ে উঠেছিলেন সুচিত্রা সেন। ইংরেজি ছবির দুর্ধর্ষ নায়িকা গ্রেটা গার্বোর ‘টরেন্টো’র থেকে শুরু করে বহু ছবিতে তিনি দেখিয়েছেন তাঁর অভিনয়ের দাপট। কিন্তু ১৯৭৮ সালে তিনি ছবির জগৎ থেকে সরে যান। মারা যান ২০১৪ সালে। এই সময়ের মধ্যে তিনি ছিলেন একেবারেই নিভৃতচারিণী। সুচিত্রার সঙ্গে এই ব্যাপারে খানিকটা মিল রয়েছে গ্রেটা গার্বোর। একসময়ের বিখ্যাত সাংবাদিক সরোজ সেনগুপ্ত সুচিত্রা সেনকে তুলনা করেছিলেন ক্যাথরিন হেপবার্নের সঙ্গে। তুলনা করা হত এই কারণে যে, এঁরা দু’জনেই নিজেদের দাপট সর্বদা বজায় রেখে গিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন-পাঠ্যবইতে গেরুয়া সন্ত্রাস, মুছে ফেলা হল বাবরি ধ্বংস, গুজরাট দাঙ্গার ইতিহাস
কৌতুকপ্রিয় সুচিত্রা সেন
‘পথে হল দেরি’ ছবির আউটডোর শ্যুটিংয়ে এক সন্ধ্যায় সুচিত্রা সেন বললেন, ‘‘ঢুলুবাবু, ড্রিঙ্ক না করলে আমরা কাল শ্যুটিং করব না!’’ (ঢুলুবাবু অর্থাৎ অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়)। উত্তমকুমার তাতে সমর্থন জানালেন। ঢুলুবাবু একটা সোফায় বসে পড়েছিলেন। উত্তমকুমার এক পেগ হুইস্কি তাঁকে দিলেন। এক চুমুক মেরে ঢুলুবাবুর মনে হল অ্যালোপ্যাথি কুইনাইন মিক্সচারের মতো। পেটের নাড়ি উঠে আসবার জোগাড়। সকলে ধন্য ধন্য করে উঠলেন। পাশের টেবিলে ছিল লম্বামতো একটা ফুলদানি। কায়দা করে মদটা তাড়াতাড়ি যেই ঢেলে দিয়েছেন, সুচিত্রা সেন বলে উঠলেন— ‘‘ঢুলবাবু এক চুমুকে মেরে দিয়েছেন!’’ উত্তম বললেন—‘‘সর্বনাশ এক্ষুনি ক্লিক করবে। মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। শিগগির শুইয়ে দাও।’’ এ-সম্পর্কে অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের স্বীকারোক্তিটুকু স্মরণ করতেই হয়— ‘‘ফুলদানিতে মদ ঢালা ব্যাপারটা কিন্তু সুচিত্রা দেখেছিলেন। কাউকে কিন্তু বলেননি। তিনি স্রেফ মজা করতেই চেয়েছিলেন। বিপদে ফেলতে নয়। এই শুদ্ধতাবোধ তাঁর অসম্ভব ছিল।’’ আরেকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা যাক। ‘উত্তর ফাল্গুনী’র হিন্দি ভার্সন ‘মমতা’ ছবির শ্যুটিং হচ্ছিল কলকাতাতেই। সেখানে যথারীতি পরিচালক অসিত সেন হিন্দিতে পরিচালনা করছেন। দ্বৈত চরিত্রে রয়েছেন সুচিত্রা সেন। মণীশের চরিত্রে বম্বে থেকে এসেছেন অশোককুমার। চিত্রনাট্যকার কৃষন চন্দর। অশোককুমার লক্ষ্য করলেন সুচিত্রা সেন স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে ডায়লগ দেখছেন আর মাঝে মাঝে পরনের কামিজের গলার কাছ থেকে একটা চিরকুট বার করে দেখছেন, পরে আবার সেই চিরকুটটি ঢুকিয়ে রাখছেন। অশোককুমার বিষয়টি অসিত সেনের নজরে আনলেন এবং বিষয়টির খোঁজ নিতেও বললেন। অসিত সেন সরাসরি সুচিত্রার কাছে গিয়ে বিষয়টির খোঁজখবর করলেন। সুচিত্রা স্পষ্ট জবাব দিলেন, ‘‘উর্দুতে যা সব ভারী ভারী শব্দ রেখেছ স্ক্রিপ্টে তা মুখস্থ করতে গিয়ে বাবার নামটাই ভুলে যাচ্ছি। তাই মাঝে মাঝে চিরকুটে লেখা বাবার নামটা বার করে দেখছি আবার রেখে দিয়ে সংলাপ মুখস্থ করছি!’’ সুচিত্রা সেনের এমন নির্ভেজাল স্বীকারোক্তিতে অসিত সেন ও অশোককুমার হেসেই অস্থির।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
বোম্বাই বিচিত্রা
বিমল রায় সুচিত্রা সেনকে বোম্বেতে প্রথম নিয়ে যান ‘দেবদাস’ ছবির জন্য। পার্বতী চরিত্রটি প্রথমে করবার কথা ছিল মীনাকুমারীর। কিন্তু মীনাকুমারীর স্বামী কমল আমরোহি চাননি যে মীনাকুমারী দিলীপ কুমারের সঙ্গে অভিনয় করুন। ফলে পার্বতীর জন্য নতুন মুখের সন্ধানে ছিলেন বিমল রায়। সেই সময় অজয় কর এবং হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায় বিমল রায়কে বলেন সুচিত্রা সেনকে নিয়ে কাজ করার ব্যাপারে। প্রথম দিনের শ্যুটিংয়ে ফ্লোরে দিলীপকুমার সুচিত্রা সেনকে নমস্কার জানিয়েছিলেন। প্রত্যুত্তরে সুচিত্রাও দিলীপকুমারকে জানিয়েছিলেন নমস্কার। সুচিত্রা সেনের অভিনয়ে মুগ্ধ দিলীপকুমার ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর অকপটে স্বীকার করেছিলেন— ‘‘পার্বতী চরিত্রটি সুচিত্রা সেন জীবন্ত করে তুলেছিলেন তাঁর অসাধারণ অভিনয় গুণে।’’
রাজ খোসলা সুচিত্রা সেনকে বোম্বেতে নিয়ে গেলেন ‘বোম্বাই কা বাবু’ ছবিতে কাজ করবার জন্য। ও হেনরির লেখা একটি ছোটগল্প অবলম্বন করে এই বোম্বাই কা বাবু তৈরি হয়েছিল। সেখানে কিন্তু দেব আনন্দ চেয়েছিলেন নায়িকার ভূমিকায় আসুক মধুবালা এবং সুচিত্রা সেনের হিন্দি উচ্চারণ নিয়ে খানিকটা আপত্তি ছিল তাঁর। কিন্তু পরে সুচিত্রার অভিনয় দেখে দেব আনন্দ মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। বিশেষ করে তাঁদের দু’জনের লিপে যখন গানটি আসছে ‘দিবানা মাস্তানা’ তখন দর্শকেরা অত্যন্ত আপ্লুত হয়েছিলেন। এ-ছবিরই শ্যুটিং চলাকালীন কলকাতায় শ্যুটিং আছে বলে সুচিত্রা সেনকে যখন চলে আসতে হয়েছিল, তাঁর পরবর্তী শ্যুটিংয়ের সময় সকলে ভেবেছিলেন সুচিত্রা সময়মতো এসে পৌঁছতে পারবেন না বোম্বেতে। কিন্তু নির্ধারিত দিনে শ্যুটিংয়ের ফ্লোরে সুচিত্রা সেন হাজির হয়ে গেলেন শ্যুটিং করতে। সুচিত্রা সেন এত সুন্দর অভিনয় করেছিলেন যা প্রত্যেককে মুগ্ধ করেছিল। ধর্মেন্দ্র যখন ‘মমতা’ ছবির কাজ করতে কলকাতা এলেন তখন তিনি বলতে গেলে প্রায় নবাগত ছিলেন। সুচিত্রা সেনের বিপরীতে অভিনয় করতে গিয়ে তিনি খানিকটা নার্ভাস হয়তো ছিলেন। দার্জিলিংয়ে যখন একটি গানের পিকচারাইজেশন হচ্ছে ‘ইন বাহারো মে একেলে’ সুচিত্রা লক্ষ্য করলেন যে নায়ক নার্ভাস হয়েছেন এবং লিপ ঠিক মেলাতে পারছেন না। তিনি তখন যথেষ্ট কো-অপারেশন করলেন নায়কের সঙ্গে। সুচিত্রা ধর্মেন্দ্রকে ডাকতেন ‘ডি’ বলে এবং তিনি কালীঘাটের কালীমন্দিরে ধর্মেন্দ্রকে নিয়ে গিয়েছিলেন পুজো দেওয়াতে। ‘আঁধি’ ছবির শ্যুটিংয়ের সময় পরিচালক গুলজার সুচিত্রা সেনকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতেন। গুলজারের ইউনিটের সকলেই সুচিত্রা সেনকে ‘স্যার’ বলে ডাকতেন এবং সেই স্বীকারোক্তি আমরা গুলজারের মুখেই শুনতে পাই। তিনি দেখেছিলেন,সুচিত্রা সেনকে সকলেই হয় ‘মিসেস সেন’ অথবা ‘ম্যাডাম’ বলে সম্বোধন করতেন, এমনকী প্রখ্যাত গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সুচিত্রা সেনকে ‘মিসেস সেন’ বলতেন। এ-ব্যাপারে গুলজারের মন্তব্যটি অবশ্যই স্মরণযোগ্য। তিনি বলতেন, ‘‘এমন সম্মান একজন অভিনেত্রীর জীবনে অভিনব। নুতন, নার্গিস, সুরাইয়ার মতো অভিনেত্রীরাও এমন সম্মান পাননি যা সুচিত্রা সেন নিজের যোগ্যতায় অর্জন করেছিলেন।’’