প্রতিবেদন: অলিখিতভাবে চলছিলই গত এক দশক ধরে। এবারে দূরদর্শনের (Doordarshan- Logo) নির্লজ্জ গেরুয়াকরণের উদ্যোগ একেবারে স্পষ্ট হয়ে উঠল দিনের আলোর মতোই। লোকসভা নির্বাচনের একবারে দোরগোড়ায় এসে কেন্দ্রের মালিকানাধীন ডিডি নিউজ চ্যানেলের রংও এবারে গেরুয়া হয়ে গেল মোদি-সরকারের ইচ্ছায়। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে গেল প্রসারভারতীর স্বশাসনের যথার্থতা নিয়ে। লক্ষণীয়, ত্রিবর্ণ জাতীয় পতাকার অন্যতম রং গেরুয়া হলেও এই রং মূলত প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে থাকে বিজেপিই। একান্ত নিজেদের রং বলে প্রচারও করে থাকে। কিন্তু এবারে আশ্চর্যজনকভাবে স্বশাসিত দূরদর্শনের ঐতিহ্যশালী নিউজ চ্যানেলের লোগোর রংও বদলে দিল তারা। স্বাভাবিকভাবেই বিস্মিত আমজনতা। নিন্দা এবং সমালোচনার ঝড় উঠেছে দেশজুড়ে। ১৬ এপ্রিল থেকেই বদলেছে লোগোর রং (Doordarshan- Logo)। লালচে থেকে গেরুয়া। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, একদিকে রামনবমী, অন্যদিকে দেশের সাধারণ নির্বাচন— গেরুয়াকরণের জন্য ঠিক এই সময়টিকেই কেন বেছে নেওয়া হল? উত্তরটাও খুবই সহজ, নিজেদের জনবিচ্ছিন্নতা রুখতে মরিয়া প্রয়াস গেরুয়া শিবিরের। সরকারি চ্যানেলের মাধ্যমে গেরুয়া রং ছড়িয়ে দিয়ে পায়ের নিচে আলগা হয়ে যাওয়া জমি সামান্য হলেও যদি কিছুটা ফিরে পাওয়া যায়—এই বাসনায়। কিন্তু বিরোধীদের প্রশ্ন, মোদির ১০ বছরের জমানায় এই সরকারি নিউজচ্যানেলকে যেভাবে নিজেদের স্বার্থে একতরফাভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে তো দর্শক-সংখ্যা প্রায় মাইক্রোস্কোপিক হয়ে যেতে চলেছে। এখন লোগোর রং বদলে অনিবার্য ভরাডুবি কি আর সামাল দেওয়া সম্ভব?
আরও পড়ুন- রাজ্যপালের অস্বাস্থ্যকর অনভিপ্রেত অপচেষ্টা
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, একসময় এই বিজেপিই দূরদর্শনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে মুখর ছিল। নিউজচ্যানেলের সরকারঘেঁষা নীতির বিরুদ্ধে সমালোচনার ঝড় তুলেছিল তারা। বলা হয়েছিল, বিরোধীদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে না দূরদর্শন। আজ সেই পথেরই নির্লজ্জ পথিক গেরুয়া-নেতৃত্ব। মনে করা যেতে পারে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের কথা, যে নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদি। আশ্চর্যজনকভাবে মোদিরই সাক্ষাৎকার সেন্সর করে সম্প্রচার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল বিজেপির পক্ষ থেকে। মোদি নিজে ট্যুইট করে এব্যাপারে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। কংগ্রেসের তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী মণীশ তেওয়ারি পাল্টা জবাবে মন্তব্য করেছিলেন, ডিডি-র স্বায়ত্তশাসন এবং সম্পাদকীয় সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করেছে সংসদও।
কিন্তু ক্ষমতায় এসে লজ্জা-ঘেন্নার মাথা খেয়ে সেই দূরদর্শনকেই নিজেদের স্বার্থে একতরফাভাবে ব্যবহারের খেলায় মেতে উঠেছে নরেন্দ্র মোদির দল। একের পর এক সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে অপছন্দের অফিসারদের। শাস্তিও দেওয়া হচ্ছে। মূল্যবোধের ধুয়ো তুলে খবরে নতুন জীবন আনার নামে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে মানুষকে। আসলে এসবই ভারতের গেরুয়াকরণের লক্ষ্যে। কিন্তু সমালোচনা এবং নিন্দার ঝড়ে নিশ্চিতভাবেই থমকে দাঁড়াতে হবে গেরুয়া-ব্রিগেডকে।