প্রতিবেদন : বাংলার উন্নয়ন দেখে ওরা হিংসায় জ্বলছে। তাই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করছে বাংলার বিরুদ্ধে। বঞ্চনা করছে। এনআরসির ভয় দেখাচ্ছে। শনিবার মালদহের গাজোল ও মানিকচকে জোড়া সভা থেকে গর্জে উঠলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata banerjee)। বাংলার মানুষকে অভয় দিয়ে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন, বাংলায় ওরা কিছু করতে পারবে না। কারণ বাংলায় আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছি। নেত্রী বলেন, বাংলার সঙ্গে এত বঞ্চনা! বাংলায় আবার ৩৫০-এরও বেশি টিম পাঠিয়েছে। কিন্তু কোনও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছ? এখন আবার বলছে এনআরসি-সিএএ-ইউসিসি করবে। কিছু করতে পারবে না। জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা গতবার বিজেপিকে জিতিয়েছিলেন। তাদের শুধু জিজ্ঞাসা করুন, বিগত পাঁচ বছরে কী কাজ করেছেন। আপনাদের একশো দিনের টাকা নিয়ে বিজেপির সাংসদ একবারও সরব হয়েছেন?
ওরা গদ্দারদের বন্ধু : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মনে রাখবেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে একটাই পার্টি, তা হল তৃণমূল। আপনাদের জন্য জীবন দিতেও তারা প্রস্তুত। আমরা কখনও বিজেপির কাছে মাথা নত করি না। সিপিএম আর কংগ্রেস আই এখানে বিজেপির ভাই ভাই। ওরা কেরলে দস্তি করছে আর এখানে মস্তি করছে। এরাও আপনাদের প্রাপ্য আদায়ের কথা বলেনি। শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালিগালাজ করে। বাংলার সিপিএম-কংগ্রেসকে বিশ্বাস করি না। ওরা গদ্দারদের বন্ধু। বিজেপির প্ল্যান হল, কিছু ভোট কংগ্রেস, কিছু ভোট সিপিএম কাটুক। আর ওরা জিতে যাক। তা আর হবে না। মানুষ এবার তোমাদের বিদায় করে দেবে।
জীবন দিতেও তৈরি : তৃণমূল নেত্রীর কথায়, অসমে যখন এনআরসি হয়েছিল, আমি টিম পাঠিয়েছিলাম। মমতাবালা ঠাকুর, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ডেরেক ও’ব্রায়েনদের গুয়াহাটিতে আটকে দিয়েছিল। তাদের অসমে ঢুকতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এখন আবার এনআরসি করবে বলছে। আপনারা কি চান এনআরসি হোক, চান সিএএ হোক, ইউসিসি লাগু হোক, আপনারা চান? ধর্মে ধর্মে লড়াই আর বিভাজন করতে চায় বিজেপি। কিন্তু আমরা জীবন দেওয়ার জন্য তৈরি থাকব। তবু এনআরসি-সিএএ-ইউসিসি করতে দেব না।
নো ভোট টু বিজেপি : তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, দেশটাকে বাঁচাতে হবে। তাই এবার ওদের মুখ বন্ধ করে দিন। মনে রাখবেন, মোদি জিতলে আর ভোট হবে না। ওঁরা চান, সারা দেশে একটাই নেতা থাকবেন, বাকিটা জেলখানা। আপনারা চান তো, দেশটা বাঁচুক। মানুষ বিচার পাক। তাহলে আওয়াজ তুলুন, নো ভোট টু বিজেপি। আর সেক্ষেত্রে বিকল্প একটাই প্রতীক, তা হল জোড়াফুল। সবাই জোড়া ফুলে ভোট দিন। আমরা আপনাদের জন্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো লড়াই করব, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেব।
আরও পড়ুন- ইটাহারে অভিষেকের রোড শো-এ জনপ্লাবন
ওরা বাংলা বিরোধী : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন উন্নয়নের খতিয়ান দিয়ে বলেন, কেন বিজেপিকে ভোট দেবেন। ওরা বাংলার হয়ে কথা বলে না। ওরা বাংলা বিরোধী। ওরা নারী বিরোধী, আদিবাসী-দলিত বিরোধী, সংখ্যালঘু বিরোধী। ওরা মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়, ২০০ চার্চ পুড়িয়ে দেয়। বিলকিস আজও কাঁদছেন, হাথরস এখনও বিচার পায়নি, বিচার পাননি স্বাক্ষী মালিকরাও। তাহলে কেন বিজেপিকে ভোট? ব্লকে ব্লকে আওয়াজ তুলুন, বিজেপি চোর, বিজেপি লুটেরা, বিজেপি জুমলাবাজ, বিজেপি সবার পকেট কেটেছে, বিজেপি কুৎসিত কথার ভাণ্ডার। বিজেপি জঘন্য আর সিপিএম নগণ্য। বাম-কংগ্রেস নিজেরা নিজেদের কাছেই বরেণ্য। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তিনি বলেন, কংগ্রেস যেখানে যেখানে লড়াই করছে ভাল করে লড়াই করুক, পুরো মদত দেব। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কাটতে যেন না আসে।
প্রসূন-শাহনওয়াজকে ভোট দিন : তৃণমূল নেত্রী বলেন, প্রসূনকে ভোটটা দিয়ে দেখুন, ও এখানে আপনাদের জন্য পড়ে থাকবে। আপনাদের কথা বলবে। আমার আর এক প্রার্থী আছেন শাহনওয়াজ ভাই। ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নামী ছাত্র। সব ছেড়ে এখানে এসেছেন মালদহের মানুষকে ভালবেসে। ওরা আপনাদের কথা বলবে সংসদে। আমরা যত বেশি সাংসদ নিয়ে দিল্লি যাব, তত বেশি দিল্লি থেকে কাজ করতে পারব। বাংলার প্রাপ্য আদায় করব। বিজেপি আর ক্ষমতায় আসবে না। আমরাই সরকার চালাব।
বিজেপির সমীক্ষা ভুয়ো : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata banerjee) বলেন, ভোটের আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে যে সমীক্ষা করা হচ্ছে, তা ভুয়ো। কোনও সমীক্ষা বিশ্বাস করবেন না। সব বিজেপি টাকা দিয়ে করিয়েছে। বিধানসভায় ২০০ আসন পাবে বলেছিল, পায়নি। এবার ৪০০ পাবে বলছে। এবার ২০০-ও পাবে না। আগে ২০০ পেয়ে দেখাও, তারপর সাঁতার কেটো। বিজেপি এবার হারবে।
এত দিন ধরে ভোট কেন : বাংলায় সাত দফা ভোট নিয়ে এদিন ফের সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, কাঠফাটা রোদের সময় প্রতিবার ভোট ফেলা হয়। অন্যান্য বার তবু মে মাসের মধ্যে ভোট শেষ হয়ে যায়। এবার জুন অবধি চলবে। কাকে সুবিধা করিয়ে দেওয়ার জন্য এই পরিকল্পনা? আসলে মানুষের কষ্ট বোঝে না বিজেপি। ওরা সারা দেশে ঘুরে বেড়াবে, পার্টির হয়ে প্রচার করবে। আমাদের হোটেল ভাড়া করে থাকতে হয়। মোদি প্লেন ব্যবহার করেন। সব সুবিধা নেন। তাই ওনার কী? মানুষেরই কষ্ট!