প্রতিবেদন : কেন্দ্রে সরকার বদল হলে তাঁতের ওপর থেকে জিএসটি তুলে দেব। রবিবার নদিয়ার দলীয় প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর সমর্থনে করা জনসভা থেকে বললেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, বিজেপি সরকার তাঁতের কাঁচা সুতোর উপরও জিএসটি বসিয়েছে। এই জেলার সাড়ে তিন লক্ষ তাঁত শ্রমিককে প্রচণ্ড অসুবিধের মধ্যে পড়তে হয়েছে। এঁদের অনেকে এই পেশা ছেড়ে টোটো চালাচ্ছেন, কেউ অটো চালাচ্ছেন। আমি বলছি, এবার কেন্দ্রে সরকার বদলাবে আর তাঁত শ্রমিকদের জিএসটি শূন্য করব। কোনও জিএসটি দিতে হবে না। এরই সঙ্গে এদিন মঞ্চে একটি বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে অভিষেক বলেন, গত ৭ মার্চ রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছিল, শ্রমিকদের সমবায়ের অধীনে এনে তাদেরকে ঋণ দেবে সরকার। তাদের আর মহাজন এবং শাড়ির মালিকদের কাছে ঋণ চাইতে যেতে হবে না। এরপরই বিজেপির বর্তমান সাংসদ জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, এখানে পাঁচ বছর তিনি সাংসদ অথচ যখন কেন্দ্রীয় সরকার জিএসটি চাপাল তাঁতের সুতোর উপর তখন এখানকার সাংসদ একটাও চিঠি লিখেছেন কেন্দ্রকে জিএসটি তুলে নেওয়ার জন্য? লেখেননি। একইসঙ্গে এদিন বাংলা-বিরোধী বিজেপিকে সরানোর ডাক দিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে এবার বিজেপির পতন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন-কিশোরের ঘূর্ণিতে জয়ী গুজরাট
আগামী ১৩ মে এখানে ভোট। এটা একটা ঐতিহাসিক দিন। ওইদিন বাংলায় পরিবর্তন হয়েছিল। এবার রানাঘাটেও পরিবর্তন হোক। ওইদিন ইভিএম-এ বোতাম টিপে বাংলা-বিরোধী স্বৈরাচারী বিজেপিকে সরিয়ে দিন। রবিবার দলীয় প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারীর সমর্থনে রানাঘাটে জনসভা থেকে ডাক দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, বিজেপি এখান থেকে আপনাদের ভোট নিয়েছে কিন্তু গত পাঁচ বছরে কোনও কাজ করেনি। বিজেপির দুর্বৃত্তদের ছুঁড়ে ফেলে দিন। এই সভা থেকে একাধিক ইস্যুতে বিজেপিকে তুলোধোনা করেছেন অভিষেক। জনজাতিদের হেনস্থা : মাত্র দু’দিন আগে জগন্নাথ সরকার ও তাঁর দলবল একটি আদিবাসী ছেলেকে বেদম মেরেছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। এই ঘটনার উল্লেখ করে অভিষেকের তোপ, এরা আদিবাসী জনজাতি গোষ্ঠীকেও ছাড়ছে না। তাদের হেনস্থা করছে। অপমান করছে।
মতুয়াদের ঠিকাদার : সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর মঞ্চে ছিলেন। তাঁকে দেখিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, সদ্য রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন। শপথ নিতে গিয়ে হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুরের নাম বলায় মাঝপথে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়েছে। রামের নামে শপথ নিলে অসুবিধে নেই কিন্তু হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে শপথ নিলেই বিজেপির সমস্যা, তোপ অভিষেকের। ঠাকুরবাড়ির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শান্তনু ঠাকুর আমাকে ঠাকুরবাড়িতে ঢুকতে বাধা দিয়েছে। সে কি মতুয়াদের ধারক ও বাহক? তখন বলেছিলাম মানুষ এর প্রতিবাদ করবে। ঠিক ভোটের বাক্সে তাঁরা বুঝিয়ে দিয়েছেন। এবারও মানুষ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করবে ইভিএম-এর মধ্যে দিয়ে।
আরও পড়ুন-এনআরসি নিয়ে রানাঘাট থেকে কেন্দ্রকে তোপ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের
মঞ্চে অডিও : কোচবিহারের বিজেপি নেত্রীর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধের হুমকি ভাষণ শুনিয়ে অভিষেক বলেন, এই হচ্ছে বিজেপির রূপ। বলছে ৩৫টা আসন পেলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেব। এদের ভোট দেবেন?
সিএএ-এনআরসি তোপ : এদিন সিএএ ও এনআরসি নিয়ে তোপ দাগেন অভিষেক। বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, যারা সিএএ-তে আবেদন করবে তাদের সাতদিনের মধ্যে নাগরিকত্ব দিক। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানাক তারা এনআরসি করবে না। যদি এটা করা হয় অভিষেক সিএএকে সমর্থন করবে।
প্রধানমন্ত্রীর ট্রেলার : জনসভায় দাঁড়িয়ে আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির কথা তুলে ধরে অভিষেক বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলছেন গত ১০ বছরে ট্রেলার দেখেছেন, এবার পুরো সিনেমা দেখবেন। ট্রেলারের নমুনা হল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি। তেল, রান্নার গ্যাসের ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি-সহ একাধিক উদাহরণ তুলে ধরে অভিষেকে বলেন, ২০১৪ থেকে ২০২১ পর্যন্ত এই হল প্রধানমন্ত্রীর ট্রেলার। এই ট্রেলার দেখার পর কি আর সিনেমা দেখবেন আপনারা? উপস্থিত জনতা উত্তর দেয়, না, আমরা সিনেমা দেখতে চাই না। অভিষেক বলেন, মোদির মিথ্যে গ্যারান্টিতে আর বিশ্বাস করবেন না। বাংলায় দিদির গ্যারান্টি রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারই উন্নয়ন করেছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিয়েছে, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী দিদিই দিয়েছেন।