প্রতিবেদন: শিল্পীর স্বাধীনতা, মতপ্রকাশ ও প্রতিবাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে ফের নির্লজ্জ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ইরানে। সরকার বিরোধিতার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে প্রশ্নের মুখে বিচারব্যবস্থাও। ২০২২-২৩ সালে ইরানে মাহসা আমিনির মৃত্যু ও নারীর পোশাকের স্বাধীনতার দাবিতে চলা বিক্ষোভকে সমর্থন করায় এক র্যাপার শিল্পীকে মৃত্যদন্ডের শাস্তি ইরানের আদালত। গানে গানে সরকার বিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন এবং দুর্নীতি ও দমনপীড়নের প্রতিবাদকারী এই র্যাপ শিল্পীর নাম তুমাজ সালেহি। ইরান তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও নামী র্যাপার সালেহি। তাঁর আইনজীবী আমির রেসিয়ান বলেছেন, এই মৃত্যুদণ্ড জারির বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করল সুপ্রিম কোর্ট
প্রবল সমালোচনার মুখে মুখে কুলুপ এঁটেছে ইরান সরকার। তেহরানে হিজাবকাণ্ডে আটক কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ২০২২ সালে ইরান জুড়ে যে সরকার বিরোধী তুমুল বিক্ষোভ-আন্দোলন হয়, তার সমর্থক ছিলেন প্রখ্যাত র্যাপ শিল্পী তুমাজ সালেহি। তার আইনজীবী জানান, সালেহি তার গানে গানে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সমর্থন করেন এবং তা নিয়ে জনসম্মুখে বিবৃতি দেন। এই কারণে ওই বছরের অক্টোবরে গ্রেফতার হন। গত বছর নভেম্বরে তিনি জামিনে মুক্তি পেলেও কয়েকদিনের মাথায় ফের তাঁকে গ্রেফতার করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ভিডিও পোস্ট করার অভিযোগে। এর আগে ইরানি সুপ্রিম কোর্টের এক রুলিংয়ের কারণে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিতে না পারলেও ২০২৩ সালের জুলাইয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগে সালেহিকে ৬ বছর ৩ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইসফাহানের বিপ্লবী আদালত সালেহির আগের সব অভিযোগ ছাড়াও নতুন কিছু অভিযোগে অভিযুক্ত করে। এসব অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে ওই আদালত। তবে ইরানের বিচার বিভাগ এখনও সাজা নিশ্চিত করেনি। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য সালেহির কাছে ২০ দিন সময় আছে। এই সময়ের মধ্যেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। ২০২২ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হিসেবে সালেহি তাঁর গানের মাধ্যমে ইরানের নেতাদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং ভিন্নমত দমন-পীড়নের সমালোচনা করতেন। ইরান সরকার এক পর্যায়ে তাঁকে যে কোনও গানের কনসার্টে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও সামাজিক মাধ্যমে গান প্রকাশ করেই নিজের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন সালেহি। গানে গানে প্রতিবাদ করে এবার তিনি মৃত্যুদণ্ডের মুখে!