অলোক সরকার: জনি বেয়ারস্টোর ক্রিকেট জীবন নিয়ে রোমহর্ষক গল্প আছে। গোড়ালি কয়েক টুকরো হয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা বলেছিলেন, আপনি ক্রিকেট ভুলে যান। আর ফেরা হবে না। বড়জোর হাঁটতে পারবেন! সেই লোক আবার ফিরেছেন। আর যেভাবে গ্যালারিতে বল উড়িয়ে দিলেন, তাতে আগের সব কাহিনি মিথ্যে বলে মনে হচ্ছে। লিমিটেড ওভার ক্রিকেটে স্টোকসরা জনির উপর এত ভরসা কেন করেন বোঝা গেল। এদিন ৪৫ বলে সেঞ্চুরি করে গেলেন। শেষমেশ ৪৮ বলে ১০৮ নট আউট।
কেকেআর (Punjab Kings-KKR) যখন আগে ব্যাট করে ২৬১/৬ তুলে দিয়েছিল, অনেকে ভেবেছিলেন সহজ ম্যাচ। কিন্তু বেয়ারস্টোর কাণ্ড কারখানায় ছবিটা ঘুরে গেল। টি-২০ ম্যাচে বোলাররা পিটুনি খাবেন, এটা সত্যি। কিন্তু এত রান হলে ইডেনের উইকেট নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। পাঁচশো রান উঠে যাচ্ছে ম্যাচে। তাহলে বোলারদের জন্য কী থাকছে! বেয়ারস্টো আগের ক’টা ম্যাচে বাদ পড়েছিলেন। ফেরার জন্য ইডেনকে বেছে নিলেন। বাটলারের পর আর এক বিলিতি ব্যাটার নাইটদের জেতা ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন।
এই জয়ে পাঞ্জাবের বিশেষ কিছু হল না। কেকেআরের হল। পয়েন্ট টেবলে ন’নম্বরে থাকা পাঞ্জাব বড়জোর তিন নম্বর জয় পেল, কিন্তু কেকেআরের চাপ হয়ে গেল। যেহেতু চারের দৌড়ে অনেকগুলো দল গায়ে গায়ে রয়েছে। এদিন অবশ্য শশাঙ্কের কথাও বলতে হবে। ২৮ বলে ৬৮ রান করে গেলেন। পাঞ্জাব নিলামে ভুল করে তাঁকে কিনেছিল। এখন রোজই তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে লজ্জায় ফেলছেন।
মিচেল স্টার্ককে বাইরে রেখে দুষ্মন্ত চামিরাকে খেলাল কেকেআর। কিন্তু এই উইকেটে সুবিধা করতে পারেননি। মুশকিল হচ্ছে যে ইডেনের এবার উইকেট এত পাটা যে বোলারদের কিছু করার নেই। রাজস্থান এখানে বিশাল রান তাড়া করে জিতেছে। পাঞ্জাবও (Punjab Kings-KKR) সেই পথে গেল। বেয়ারস্টো কেকেআর বোলিং নিয়ে যা খুশি করে গেলেন! রোসোউ (২৬) শুধু পাশে সঙ্গ দিয়ে গেলেন। তাতেই তাঁদের ৮ বল বাকি রেখে ৮ উইকেটে জয়ের ভিত তৈরি হয়ে গেল। কেকেআর বোলিং নিয়ে কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন। ব্যাটাররা রান তুলে দিচ্ছে বলে রোগ ধরা পড়ছে না। বোলাররা কিছু করতে পারছেন না। বিপক্ষের স্ট্র্যাটেজি মোটামুটি এই, নারিন আর বরুণকে সামলে দাও। বাকিটা দেখা যাবে।
কেকেআর যেভাবে শুরুতেই ঝড় তুলে দিচ্ছে সব ম্যাচে তাতে পাঞ্জাব কিংস আগে ব্যাট করে নিতে পারত। কিন্তু স্যাম কুরান কিছুতেই বাধা গতের বাইরে গেলেন না। তাতে আবার বেদম পেটালেন নারিন ও সল্ট। ৬ ওভারে পাওয়ার প্লে-র শেষে কেকেআর ছিল ৭৬/০। রাবাডা দুই ওভারে দিলেন ৪৩ রান। আর্শদীপ প্রথম দুই ওভারে দেন ৪৩ রান। কারেন দিলেন প্রথম ওভারে ১৮ রান। এতে যা হল, ইডেনে ২০ ওভারে রেকর্ড ২৬১/৬ উঠে গেল নাইটদের।
আরও পড়ুন- নোটা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মত চাইল শীর্ষ আদালত
আগেরদিন কেকেআর নিয়ে প্রশ্ন শুনে পাঞ্জাবের স্পিন কোচ পাত্তাই দেননি। সুনীল জোশিকে প্রশ্ন করলে তিনি জবাব দেন, অনেক পরিকল্পনা আছে আমাদের। ম্যাচে দেখে নেবেন। তা ইডেন দেখল তাঁদের যাবতীয় পরিকল্পনা। আসলে গণপিটুনি। নারিন আর সল্ট প্রথম বল থেকে এমন উড়িয়ে খেললেন যে রাবাডা, কারেনের মতো আন্তর্জাতিক তারকা দিশেহারা হয়ে পড়েন।
নারিনকে সব বলে চালানোর লাইসেন্স দিয়ে রেখেছেন গৌতম গম্ভীর। তিনি সেটাই করছেন। ফুটওয়ার্কের বিশেষ প্রয়োগ নেই। এদিন হাফ সেঞ্চুরি করে ফেললেন ২৩ বলে। কেকেআর একশো তুলল ৪৮ বলে। পাঞ্জাব অবশ্য দুটো ক্লিয়ার চান্স মিস করেছে। হাতে আসা বল জমাতে পারেননি কিংস ফিল্ডাররা। এই লেবেলের ক্রিকেটে এগুলো অমার্জনীয় অপরাধ।
ফিল সল্ট ২৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি করলেন। ইডেনের এই উইকেটে শুরুতে বল ব্যাটে আসে। পরে স্লো হয়ে যায়। পাঞ্জাব এই হোমওয়ার্ক করে আসেনি। ফলে প্রথম ব্রেক থ্রু করতে ১০.২ ওভার লেগে গেল। নারিন (৭১) যখন আউট হলেন, কেকেআর ১৩৮/১। রাহুল চাহারের বলে নারিনের ক্যাচ নিলেন জনি বেয়ারস্টো।
সল্ট এসে গুরবাজের ছুটি করে দিয়েছেন। এদিন যেমন ৩৭ বলে ৭৫ রান করে ফিরে গেলেন কারেনের বলে। ইংল্যান্ডের সল্ট দুনিয়া জুড়ে টি-২০ লিগ খেলে বেড়ান। কেকেআর তাঁকে দারুণ কিনেছে। আর একটা জিনিসও হয়েছে। গম্ভীররা আন্দ্রে রাসেলকে আগের থেকে উপরে পাঠাচ্ছেন। এদিন ১৫ ওভারে ১৯০ রান উঠে গেল।
কেকেআর রাসেলকে হারাল দলের দুশো রান উঠে যাওয়ার পর। ১২ বলে ২৬ রান। ভেঙ্কটেশ একটা দিক ধরে রেখেছিলেন। এবার শ্রেয়স তার সঙ্গে যোগ দিলেন। শেষমেশ শ্রেয়স যখন ১০ বলে ২৮ করে রাবাডাকে উইকেট দিয়ে গেলেন, কেকেআর আড়াইশোর দোরগোড়ায়। এরপর রিঙ্কু আউট হয়ে যান (৫) খুব দ্রুত। বিশ্বকাপ দল নির্বাচনের আগে রিঙ্কু কিন্তু চাপে থাকলেন। তবে ভেঙ্কটেশ আইয়ার ২৩ বলে ৩৯ রান করে কেকেআরকে শক্ত জমির উপর দাঁড় করিয়ে দিলেন। পাঞ্জাবের জন্য ম্যাচ তখনই কঠিন দেখাচ্ছিল। কিন্তু শেষবেলায় কামাল করলেন বেয়ারস্টো ও শশাঙ্ক সিং।