সব উনি করে দিয়েছেন। সবকিছুর গ্যারান্টি উনি দিচ্ছেন। এদিকে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা তলানিতে। দেশে বেকারত্ব বাড়ছে চড়চড়িয়ে। সমান তালে বাড়ছে জিনিসের দাম। বিক্রি হচ্ছে লাভজনক সরকারি সংস্থা। আর উনি/ ওঁরা মিথ্যের জাল দিয়ে আড়াল করতে চাইছে ব্যর্থতার কালো ছবি। এঁদের ভোট দেবেন? তৃতীয় দফার আগে ভেবে দেখতে বললেন ড. মইনুল হাসান
নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রকৃতিতে তাপমাত্রা মাত্রাছাড়া। সেই তাপে বিজেপি নেতাদের মাথা ঘুরে গিয়েছে। অতীতের মতো ‘ডেলি প্যাসেঞ্জারি’ শুরু হয়ে গিয়েছে বিজেপির বড় বড় নেতাদের। প্রধানমন্ত্রী ও গৃহমন্ত্রী তাদের নেতা। সঙ্গে এ রাজ্যের চুনোপুঁটিরাও আছেন। প্রত্যহ আমাদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতিগুলো, কুৎসিত কথাগুলো খবরের কাগজে এবং বৈদ্যুতিন প্রচার মাধ্যমে দেখতে হচ্ছে। ২০১৪ সালে দিল্লিতে সরকার গঠন করে মানুষের প্রাথমিক সমস্যাগুলো সমাধানের কোনও উদ্যোগ নেয়নি বিজেপি সরকার। প্রতি বছরে ২ কোটি চাকরি, খাদ্য নিরাপত্তা, দেশের সম্পত্তি বিদেশ থেকে উদ্ধার এসব প্রতিশ্রুতির কোনওটা কার্যকর হয়নি। বলা হয়েছিল বিদেশের ব্যাঙ্কের ভারতীয়দের ‘কালাধন’ উদ্ধার করে নাগরিকদের ব্যাঙ্কে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। কেউ কেউ এখনও এই অলীক স্বপ্ন বিশ্বাস করেন। কিন্তু সত্য হবে না দেশবাসী জেনে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
সম্প্রতি বিজেপি এই লোকসভাকে কেন্দ্র করে দেশের সামনে বিশাল বড় ইসতেহার দিয়েছে। সেখানে চাকরি কথা নেই। সেখানে অনেক মজার কথা আছে। আবার বলা হয়েছে সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্কে টাকা পাঠানো হবে। সম্প্রতি একটা নির্বাচনী সভাতে গিয়ে বয়স্ক মানুষের কথা শুনলাম। তিনি বলছেন, মোদিজি, আমরা আপনার দেওয়া ১৫ লক্ষ টাকাই এখনও শেষ করে উঠতে পারিনি। আপনি আবার কেন টাকা দেবেন। এবার আপনি বিদায় হলে বাঁচি। বিজেপির কর্মকাণ্ডে তথা ইসতেহারের জবাব এর বেশি আর কি হতে পারে?
প্রধানমন্ত্রী, গৃহমন্ত্রী এবং প্রকাশিত ইসতেহারে নারীদের সম্মান এবং সশক্তিকরণ নিয়ে প্রচুর বাগাড়ম্বর করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক কালের একটি ছবি যা বিশ্বব্যাপী মানুষ দেখেছেন সেটার কথা বলি। সবাই জানেন দেশের প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী শ্রী এল কে আদবানীকে ‘ভারতরত্ন’ সম্মানে ভুষিত করা হয়েছে। আদবানী যেহেতু অসুস্থ তাই তাঁর বাড়িতে তাঁকে সম্মানিত করেন রাষ্ট্রপতিজি। প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। দেখা গেল মাননীয়া রাষ্ট্রপতি আদবানীজির পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আর প্রধানমন্ত্রী দিব্যি চেয়ারে গ্যাট হয়ে বসে আছেন। মাননীয়া রাষ্ট্রপতি কি অতি সাধারণ সম্মান আশা করতে পারেন না? কেন? মহিলা বলে? পিছড়ে বর্গের মানুষ বলে? পৃথিবীর মানুষ এমন আচরণ দেখে হতবাক! তারপর এই বিজেপি দল নারীর সম্মানের কথা বলছে কোন মুখে?
আরও পড়ুন-স্বাধীনতার পর সর্বকালীন নজির! সময়ের আগেই তুঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা
গ্রামীণ মানুষের আয় বাড়ানো যে কোনও সরকারের লক্ষ্য থাকে। সেই কারণে কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানো একান্ত জরুরি। দেশটা কৃষিভিত্তিক দেশ। কিন্তু কৃষিতে বিনিয়োগ নিয়ে কোনও কথা নেই। এখনও দেশের কৃষি আবহাওয়ায় খেয়ালখুশির উপর নির্ভর করে। কখন বন্যা, কখন খরা। সেটা কৃষকের হাতে নেই। এর পরিণাম কীভাবে হবে সেটা বলা হচ্ছে না। বরং বলা হচ্ছে ফসলের সর্বনিম্ন মূল্য বাড়ানো হয়েছে অনেক। কিন্তু এই সময়ে বীজ, কীটনাশক, সারের দাম বড়েছে বহুগুণ। বহুজাতিক সংস্থাগুলো দেশে লুটপাট চালাচ্ছে। সরকারের কােনও হেলদোল নেই। উৎপাদিত ফসল বাজারে সহজে নায্য দামে বেচার কোনও ব্যবস্থা নেই। কতকগুলো গল্প ছড়ানো হচ্ছে মাত্র।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এদেশে সবচাইতে বেশি তরুণ প্রজন্মের বাস। যাদের চোখে স্বপ্ন আছে। বুকে সাহস আছে, হাতে বল আছে। তাদের চাকুরি চায়। কিন্তু কোথায় চাকুরি। দেশের নামী-দামি শিল্প সংস্থাগুলিকে নিলামে তুলে ক্রমে ক্রমে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। লাভজনক সংস্থাগুলোকে প্রথমে নিজেদের পেয়ারের লোকজনদের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর সেটা কিনেই তারা প্রথমে কর্মী নিয়োগ না করে ছাঁটাই করছে। শিক্ষিত বেকার যুুবদের বলা হচ্ছে বাজারে গিয়ে যা হোক কিছু করতে। এই হচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা। তারপর বলা হচ্ছে ‘মোদি হ্যায় তো মুনকিন হ্যায়।’ বলা হচ্ছে, ‘মোদির গ্যারান্টি’।
কোনও জিনিসের গ্যারান্টি মোদি সরকার বিগত ১০ বছরে দিতে পারেনি। চাকরি, স্বাস্থ্য, নারীদের উন্নয়ন, নিম্নবর্গের মানুষদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে আসার কাজ, সংখ্যালঘুদের সম সুযোগের লড়াইকে সাহায্য করা কোনওটাই করতে পারেনি। যারা বছর সরকারে থেকে তৃতীয় বারে সরকারে আশার জন্য ইসতেহার দিয়েছে তাতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের জন্য কোনও উল্লেখযোগ্য প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেনি। এই ভারতে প্রায় কোটি মুসলমান। ইউরোপের প্রায় ৪টি দেশের সমান এই জনসংখ্যা। তাদের সঙ্গে মনোভাব এই। আমাদের পাঠকরা নিশ্চয় জানেন প্রায় ৫০০ প্রার্থী দিয়েছে সারাদেশে। তার মধ্যে ১ জন মুসলমান। এই যাদের মনভাব তারা ইসতেহারে কি কথা বললো সেটা নিয়ে দেশবাসীর কোনও মাথা ব্যথা নেই।
আরও পড়ুন-বৃষ্টির আশায় ঘটা করে ব্যাঙের বিয়ে, পাত পেড়ে বিরিয়ানি
ভারত নাকি বিশ্বনেতার শিরোপা পেয়েছে। ইস্তাহারে সেটা বড়াই করে লেখা হচ্ছে। বিগত কমনওয়েলথ সম্মেলনে-এর সাফল্য নাকি তারই প্রমাণ। সকলে জানেন এই সম্মেলন একটি রুটিন ব্যাপার। প্রতিবছর কোনও না কোনও দেশে হবে এবং সেই দেশ সভাপতিত্ব করবে। এবার হওয়ার কথা ছিল ইতালিতে। মোদিবাবু প্রায় জোর জবরদস্তি করে ভারতে স্থান করলেন। তার অঙ্ক এটাই যে তিনি এই বিষয়টিকে ২০২৪-এর নির্বাচনের প্রচার হিসাবে কাজে লাগাবেন। সেটাই করলেন। এমন কুৎসিত মনোভাব দেশের কোন প্রধানমন্ত্রী অতীতে কোন সময় দেখাবার প্রয়োজন করেননি। এখনকার প্রধানমন্ত্রী এমনই সস্তা। তাদের ইশতেহার হাতে আবার….. পশ্চিমবাংলায় আসতে শুরু করেছেন। বাঁধাবুলি। তারা সব করেছেন। সব করবেন। মানুষকে বোকা বানাবার কড়া কৌশল ঠিক করছেন। গত বিধানসভা নির্বাচনে কত আসনের স্বপ্ন চাউর করেছিলেন। মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন। এবার ও অমনতর অলীক সংখ্যা নিয়ে তারা মাতামাতি করছে। বাংলার মানুষের এই প্রত্যয় আছে যে এই সব মিথ্যা বাগাড়স্বর তারা শেষ করে দেবেন। মোদি যতই গ্যারান্টি দিক। যতই ভাষণ দিক। যত গালভরা অলীক তথ্য ইস্তাহারকে দিক না কেন একলহময় তা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে। কারণ বাংলাবাসীর কাছে আছে দিদির গ্যারান্টি। যা আসলে এ রাজ্যের আপাময় মানুষের।