মুম্বই: মেরিন ড্রাইভ ধরে মালাবার হিলসের দিকে এগোতে এগোতে ডানদিকে বাঁক নিলেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম। বাঁ হাতে ভিনু মানকড়ের নামে প্রধান গেট। ভিতরে ঢুকে পড়লে গারওয়ারে প্যাভিলিয়ন। এখানে প্রতিটি খাঁজে, প্রতিটি পাতায় উপচে পড়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের গৌরবের ইতিহাস। আরব সাগরের নোনা হাওয়ায় যা চিরকালীন সজীব, টাটকা। কোনওদিন মোছার নয়।
কয়েশো মিটারের মধ্যে ব্রেবোর্ন স্টেডিয়াম। ক্রিকেট ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার গর্বের নিশান। ২০১১ বিশ্বকাপের আগে ওয়াংখেড়েতে আধুনিকীকরণ হলেও ব্রেবোর্নে সেসবের ছায়া পড়েনি। এখানে আইপিএলের মহা উত্তাপও কখনও এসে পৌঁছয়নি। তাই শুক্রবারের কেকেআর বনাম মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচ নিয়ে ওয়াংখেড়েতে যখন গমগমে উত্তেজনা, তখন নিরুত্তাপে দিন গুজরান চলছে প্রয়াত রাজ সিং দুঙ্গারপুরের সনাতন সিসিআই-তে। এখানে ক্রিকেটের বনেদিয়ানা আজও বিদ্যমান।
ওয়াংখেড়েতে উত্তেজনা না হোক, চাপা কৌতূহল রয়েছে অন্য কারণে। বান্দ্রার মন্নত থেকে ওয়াংখেড়েতে আসতে এক ঘণ্টারও পথ নয়। শাহরুখ (Shahrukh Khan) কি আসবেন নিজের দলের খেলা দেখতে। এমনিতে তিনি আসেন না। বরং বাড়িতে বসে টেনশনে ভোগেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি অন্যরকম। কেকেআর শেষ চার মোটামুটি নিশ্চিত করে ফেলেছে। বাদশা এবার নিশ্চিন্তে খেলা দেখতে আসতে পারেন,। কিন্তু তিনি আসবেন কি না তা নিয়ে মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের কাছে পরিষ্কার কোনও খবর নেই।
মুম্বই আগের ম্যাচে হেরেছে। পয়েন্ট টেবলের দিকে তাকালে কেমন যেন অসম লড়াই মনে হচ্ছে। কলকাতা নাইট রাইডার্স ন’টি ম্যাচ খেলে ছ’টিতে জিতেছে। তাদের পয়েন্ট হল ১২। উল্টোদিকে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এখন একেবারে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে। ১০ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট হল ৬। অর্থাৎ মোটে তিনটি জয়। তাদের নিচে রয়েছে শুধু আরসিবি। কিন্তু মুম্বইয়ের এখান থেকে চারে যাওয়া অসম্ভব মনে হচ্ছে।
আরও পড়ুন- চলুন পাল্টাই, হওয়া বুঝেই ভোল বদল পদ্মশিবিরের
গৌতম গম্ভীর কেকেআরের মেন্টরের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দলটা তেল খাওয়া মেশিনের মতো ছুটছে। শ্রেয়স আইয়ারের নেতৃত্বে একটার পর একটা জয় তুলে এনেছে এনেছে নাইটরা। কিন্তু ব্যাটাররা ভাল করলে বোলিং দুশ্চিন্তায় রেখেছে। মিচেল স্টার্ক অনেক রান দিচ্ছেন। মুম্বই ম্যাচে সাসপেনসনে থাকায় খেলতে পারবেন না হর্ষিত রানা। তাঁর জায়গায় চামিরাকে ফেরানো হয় কি না সেটাই দেখার।
নাইটদের আরেক দায়িত্ব রিঙ্কু সিংয়ের মনোবল অটুট রাখা। বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পেয়ে তিনি ভেঙে পড়েছেন। তাঁর বাদ পড়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। রিঙ্কু এবার আইপিএলে ভাল খেলেননি বলা হচ্ছে। কিন্তু এটাও ঘটনা, পরের দিকে নেমে তিনি খুব বেশি বল পাননি। রিঙ্কুকে ফিনিশার ধরা হয়। এবার তিনি সেভাবে ম্যাচ ফিনিশ করে আসেননি। এই একটা কারণে বিশ্বকাপ দলে তিনি নেই। আর নেই বলে রিঙ্কু নাকি ভেঙে পড়েছেন। তাঁর মনোবল বাড়ানো এখন দলের মস্ত দায়িত্ব।
মুম্বইয়ের এবারের পারফরম্যান্স অনেককে অবাক করেছে। রোহিত শর্মার বদলে বার্দিক পাণ্ডিয়াকে অধিনায়ক করা নিয়ে প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে অলরাউন্ডার হার্দিক কিছুই করতে পারছেন না। তিলক ভার্মা ছাড়া ব্যাটাররাও চূড়ান্ত ব্যার্থ। পাওয়ার প্লে-তে রান উঠছে না। শুধু বুমরা ও কোয়েটজে ভাল বল করছেন। বিশ্বকাপের আগে সূর্যকুমার যাদব ও হার্দিকের দিকে সবার নজর থাকবে। কিন্তু টেবলে নয়ে থাকা এই দল দুইয়ে থাকা কেকেআরের সামনে নিজেদের কতটা উজ্জীবিত করতে পারে সেটাই এখন দেখার বিষয়।