চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: ঠিক ১৮ দিন আগে এই যুবভারতীতেই মোহনবাগানের কাছে হেরে আইএসএল লিগ-শিল্ড হারিয়েছিল মুম্বই সিটি এফসি। সেদিন দিমিত্রি পেত্রাতস, জেসন কামিন্স, মনবীর সিংরা যখন মাঠে উৎসব করছিলেন, তখন একরাশ হতাশা বুকে নিয়ে যুবভারতীর টানেল দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরেছিল পিটার ক্র্যাটকির ছেলেরা। বদলা বোধহয় এভাবেই নিতে হয়। গ্যালারির শব্দব্রহ্ম থামিয়ে ফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে ২-১-এর বদলা ৩-১-এ নিয়ে দ্বিতীয়বার আইএসএল কাপ জিতল মুম্বই। রীতিমতো দাপট দেখিয়ে জয়। আগ্রাসী ফুটবলে মনবীর সিং, লিস্টন কোলাসো, দিমিত্রি পেত্রাতসদের দাঁড়াতেই দেননি লালিয়ানজুয়ালা ছাঙতে, অপুইয়া, বিক্রমপ্রতাপ সিংরা।
মোহনবাগানের স্বপ্নভঙ্গ। ত্রিমুকুট জিতে ইতিহাস গড়া হল না। জেসন কামিন্সের গোলে এগিয়ে থেকেও হারের যন্ত্রণা। ভাগ্য ভাল, মুম্বই প্রচুর গোল নষ্ট করল। না হলে আরও বড় হারের লজ্জা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হত লিগ-শিল্ড জয়ীদের। মুম্বইয়ের হয়ে তিনটি গোল করেন জর্জ পেরেরা দিয়াজ, বিপিন সিং ও জাকুব ভোজটাস।
আরও পড়ুন-১০০ দিনের কাজে সবংয়ের মাদুরশিল্পীরা কেন্দ্রের টাকা থেকে বঞ্চিত, পাশে মুখ্যমন্ত্রী
বিজয়োৎসবের মধ্যেই হতাশ শুভাশিস বোস, দিমিত্রি, জনি কাউকোদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গেলেন নগুয়েরা, বিপিনরা। আইএসএলের ইতিহাসে সফল কোচ আন্তনিও লোপেজ হাবাসের হাত ধরে প্রথমবার আইএসএলে দ্বিমুকুট আর মরশুমে ত্রিমুকুট জয়ের স্বপ্নপূরণও হল না। অপেক্ষা বাড়ল। অভিশপ্ত পরিসংখ্যানও অক্ষত রইল। এর আগে ঘরের মাঠে কোনও টিম আইএসএল ফাইনাল জেতেনি। টানা দ্বিতীয়বার খেতাবও জেতেনি কেউ। শুধু তাই নয়, এই মুম্বইয়ের বিরুদ্ধেই ২০২১ সালে আইএসএল ফাইনালে এগিয়ে থেকেও খেতাব হাতছাড়া করেছিল হাবাসের মোহনবাগান। এবার জবাব দেওয়ার সুযোগ হারালেন বাগানের স্প্যানিশ বস।
প্রথম ২০ মিনিট এলোমেলো ফুটবল। দু’দলই যেন নিজেদের মেপে নিতে চাইছিল। রক্ষণাত্মক খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টাও ছিল মোহনবাগানের।
ছাঙতেকে কভারিংয়ে রেখেছিলেন শুভাশিসরা। হাবাস সেমিফাইনালের দল অপরিবর্তিত রেখেই টিম নামিয়েছিলেন। মুম্বই কার্ড সমস্যায় বাইরে থাকা ইওয়েল ভ্যান নিফের জায়গায় আলবার্ত নগুয়েরাকে খেলায়। তবে মাঠে নিফের জায়গাটা অপারেট করেন জয়েস রানে। প্রথম কুড়ি মিনিট পর মুম্বই খেলাটা ধরে ফেলে। বাকি সময় জুড়ে তাদেরই দাপট। ৩১ মিনিটেই গোল করে এগিয়ে যেতে পারত মুম্বই। ছাঙতের বাঁ-পায়ের নাগাল পাননি গোলকিপার বিশাল। বাগানের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল। বল ক্রসবারে লেগে ফেরে। সবুজ-মেরুন রক্ষণ তখন বেশ চাপে। ৩৮ মিনিটে মোহনবাগানকে বাঁচিয়ে দেয় সেই পোস্ট। বিক্রমপ্রতাপের থেকে বল পেয়ে শরীর ঘুরিয়ে শট মারেন ছাঙতে। বিশাল নাগাল পাননি। বল পোস্টে লেগে ফিরলে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় বাগান ডিফেন্ডাররা তা প্রতিহত করেন।
আরও পড়ুন-ভোট-যুদ্ধ : দেওয়াল থেকে ওয়াল
বিরতির মিনিট দুয়েক আগে ৪৩ মিনিটে খেলার গতির বিপরীতে গোল করে এগিয়ে যায় মোহনবাগান। বক্সের বাইরে থেকে গোল লক্ষ্য করে জোরালো শট মারেন দিমিত্রি। মুম্বই কিপার লাচেনপা প্ৰথম পোস্টে দাঁড়িয়ে বল পুরোপুরি ক্লিয়ার করতে পারেননি। ফিরতি বল লক্ষ্য করে বাঁ-পায়ের টোকায় গোল করেন বাগানের ‘ফক্স ইন দ্য বক্স’ কামিন্স। আইএসএলে ১২ নম্বর গোল অস্ট্রেলীয় বিশ্বকাপারের।
বিরতির পর খেলায় সমতা ফেরাতে মরিয়া হয়ে ওঠে মুম্বই। ৫৪ মিনিটে ১-১ করে ফেলে তারা। নগুয়েরার বাড়ানো বল ধরে বক্সে ঢোকেন পেরেরা দিয়াজ। সামনে থেকেও বল কাড়তে পারেননি মনবীর। দিয়াজের শট গোলে ঢুকছিল। হেক্টর চেষ্টা করেও বের করতে পারেননি। বল জালে জড়িয়ে যায়।
ক্লান্তি, এই সময় দু’দলই কয়েকটি পরিবর্তন করে। দীপক, থাপাকে তুলে কিয়ান নাসিরি ও সাহাল সামাদকে নামান হাবাস। মুম্বই কোচ ক্র্যাটকি চোট পাওয়া দিয়াজ, নগুয়েরা ও জয়েস রানেকে তুলে নামান বিপিন সিং, জাকুব ও বিনীত রাইকে। সুপার সাব বিপিন ৮১ মিনিটে মুম্বইয়ের দ্বিতীয় গোলটি করেন। মোহনবাগান রক্ষণের জঘন্য ভুল। প্রথমে ছাঙতের শট বাঁচিয়ে দেন হেক্টর। সেই বল ধরে মুম্বইয়ের আর এক পরিবর্ত জাকুব বক্সে ফাঁকায় পাস দেন বিপিনকে। প্ৰথম প্রচেষ্টায় মিস করলেও দ্বিতীয়বার আর ভুল করেননি। বিশালের পায়ে লেগে বল জালে জড়িয়ে যায়।
আরও পড়ুন-রাঢ়বঙ্গে যে সত্যিটা বেআব্রু হয়ে গেল
সংযুক্ত সময়ে বাগান রক্ষণের ভুলে আরও একটি গোল করে মোহনবাগানের ম্যাচে ফেরার আশায় জল ঢেলে দেয় মুম্বই। ছাঙতেরা এগিয়ে যান ৩-১ গোলে। জাকুব বল বাড়িয়েছিলেন বিক্রমপ্রতাপকে। তাঁর পাস থেকে গোলে শট নেন বিপিন। শুভাশিস তা বাঁচালেও সামনে থাকা জাকুব বাঁ-পায়ের অনবদ্য শটে গোল করে যান। তৃতীয় গোলের ঠিক আগেই সহজতম সুযোগ নষ্ট করে মুম্বই। বিপিন ও ছাঙতের যুগলবন্দির সামনে একা ছিলেন বাগান গোলকিপার বিশাল। কিন্তু তাঁদের ভুল পাসের কারণে গোল হয়নি। না হলে আরও বড় ব্যবধানে হারতে হত মোহনবাগানকে।