এককালে তাঁদের উপর নির্ভর করেই ভোট বৈতরণী পার হতেন দলীয় প্রার্থীরা! এখন বহুমুখী প্রচারে তাঁদের মতো লিখিয়েদের জগতে খানিকটা ভাটা পড়েছে। তবে এখনও লোকসভা, বিধানসভার পাশাপাশি পঞ্চায়েতের নির্বাচনী লড়াইয়ে তাঁদের ডাক পড়ে। গ্রাম, শহরের দেওয়াল জুড়ে তাঁদের হাতেই ফুটে ওঠে দেওয়াল লিখন। প্রার্থীর নাম থেকে দলীয় সিম্বল আর কোন ইস্যুতে ভোট দেবেন, কেনইবা দেবেন ভোট সে-সব দেওয়াল জুড়ে আঁকা হয় তাঁদের তুলির রঙে। সাজানো হয় সরকারি নানান প্রকল্পের তালিকা তৈরি করে। লেখা হয় নানারকম ভোটের ছড়াও। অনেক সময় এই দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে সংঘর্ষও বেধেছে। তবে দেওয়াল লিখনকে ঘিরে বাংলার ভোটের সংস্কৃতিতে মেখে রয়েছে এখনও প্রাচীন নস্টালজিয়া। কয়েক বছর আগেও গ্রামের পাড়ায় পাড়ায় ভোটের আগে, নানারঙের ব্যবহার করে দেওয়াল লিখত।
আরও পড়ুন-রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ, কেন চুপ মোদি? প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
কখনও দলীয় কর্মীদের অনেকে লিখতেন। তবে বাংলার গ্রাম ও শহরে ভোটের প্রচারে দেওয়াল লেখার জন্য একদল দেওয়াল লিখিয়ে শিল্পীদের দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর এলাকার লিখিয়ে রহমান মির্জা বলেন, ‘‘আমাদের অনেকেরই জীবন জীবিকা এই ভোটের দেওয়াল লিখেই চলত অতীতে। এখন বিগত দশ বছর ধরে রোজগার কমেছে। তবে সারাবছরই টুকটাক পোস্টার লেখার কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।’’ বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের দীপক দাস, নয়ন তুড়িরা, বিকনার কালাচাঁদ কর্মকার, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের দেওয়াল লিখিয়ে মেঘনা মাহাতোরি, সাঁতুরি থানা এলাকার পাঁচু চৌধুরীরা আজও দেওয়াল লেখেন। তবে তাঁরা সারাবছরই অন্যরকম কাজকর্মও করেন।
রেনেসাঁস যুগের শিল্পীরা প্রাচীন গ্রিক, রোমে এমনকী ইউরোপের পশ্চিমা থিয়েটারকে কেন্দ্র করেও দেওয়াল লেখা শুরু করছিলেন। শান্তিনিকেতনের মাটিতে বসে গুরু নন্দলাল বসুর সঙ্গে শিল্পী রামকিঙ্কর বেইজও দেওয়াল আঁকতেন। শিল্পী রামকিঙ্করের প্রথম জীবনের গুরু বাঁকুড়ার যুগীপাড়ার অনন্ত মিস্ত্রিও দেওয়াল আঁকতেন। পোস্টার লিখতেন।
আরও পড়ুন-১০০ দিনের কাজে সবংয়ের মাদুরশিল্পীরা কেন্দ্রের টাকা থেকে বঞ্চিত, পাশে মুখ্যমন্ত্রী
আজও জীবিকার বাঁকবদলে বহু শিল্পী অন্যতর পেশায় চলে গেলেও তাঁদের অনেকেই নানান কাজ করার পরেও পোস্টার আঁকেন, লেখেনও। মালদহের ইংলিশ বাজারের সুবল বিশ্বাস, গণেশ মুদিরা বলেন, ‘‘পোস্টার লেখা, দেওয়াল লেখা শুধু পেশা নয়। নেশাও। রক্তের ভিতরে ভিতরে বয়ে চলে তুলির টান।’’ বাংলার বহু গ্রামে গ্রামে রয়েছে তেমনই কয়েকজন পরিচিত শিল্পীদের নাম। পশ্চিম বর্ধমানের সাতকাহনিয়া গ্রামের প্রবীণ মাস্টারমশাই প্রণব ভট্টাচার্য পেশাদার দেওয়াল লিখিয়ে না হলেও আজ ২৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি দেওয়াল লেখেন। রাজনৈতিক খবরাখবরের পাশাপাশি ভোটের খবর এবং যে কোনও অনুষ্ঠানে দেওয়াল সাজানো তাঁর নেশা। আজও ভোটের বাজারে তাদের খ্যাতি রয়েছে বিস্তর। একসময় রাতের পর রাত জেগে বীরভূমের কেন্দুলীর আনন্দ রুইদাস বীরভূম, অখণ্ড বর্ধমানের পাশাপাশি বাঁকুড়ার বিভিন্ন গ্রামেও দেওয়াল লিখতে যেতেন। বয়সের কারণে এখন তেমন ছোটাছুটি করতে পারেন না। তবে এখনও চাহিদা রয়েছে তাঁর। পুরুলিয়ার বান্দোয়ানের নেপাল মাহাত ছিলেন নামকরা দেওয়াল লিখিয়ে। তাঁর বাঁধা শ্লোক একসময় ভোটের বাজার মাত করেছে। কংগ্রেসি জমানায় তাঁর শ্লোকে সেজে উঠত জঙ্গলমহলের দেওয়াল। পূর্ব বর্ধমানের শ্যামসুন্দর এলাকার কানাই লিখিয়ের দেওয়ালচিত্র ছিল বেশ জনপ্রিয়। তিনি বেশ উজ্জ্বল কার্টুন আঁকতেন। আউশগ্রামের জঙ্গল মহলের বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় দেওয়াল লেখেন ভূঁয়েড়া গ্রামের মৃৎশিল্পী নিতাই পাল, রামনগরের অপু চৌধুরি, হাটমাধবপুরের বীরেন দত্ত, দীননাথপুরের শ্যামকান্ত দলুই, পূর্ণ দাস, পুবারের দীপক মেটেরা একালের ভোটের বাজার মাত করে রেখেছেন।
আরও পড়ুন-সিবিএসই-আইসিএসই-র ফলাফল প্রকাশ শীঘ্রই
কলকাতা শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড এলাকায় দেওয়াল লেখার চল রয়েছে। বাঘাযতীন এলাকায় দেওয়াল লেখেন এখনও পার্থ দাস, রৌণক গুপ্তরা। আনন্দপুর এলাকায় পুলক চৌধুরী লেখেন দেওয়াল। পাটুলি ও বেহালা শকুন্তলা পার্ক এলাকায় দেওয়াল লেখেন কিছু আঞ্চলিক শিল্পী। কসবা এলাকায় রমনা গুপ্তরা কয়েকজন মহিলাদের টিম বানিয়ে দেওয়াল লেখেন।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা নিজেরাই গৃহস্থের সেইসব দেওয়ালে চুনকাম করে তারপর রং, তুলি দিয়ে সেই দেওয়ালকে সাজিয়ে তোলেন রাজনৈতিক ভোটের প্রচারে।
তাৎক্ষণিক নানান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আর স্থানীয় বা জাতীয় স্তরে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা হয় দেওয়াল গোটা রাজ্য জুড়েই। নদিয়ার তেহট্ট, নবগ্রাম এলাকা জুড়ে দেওয়াল লেখায় জনপ্রিয় নাম বিভাস বিশ্বাস, দীনবন্ধু বসু, বাসব চৌধুরীরা। শুধু দেওয়াল লেখায় নয়, সেইসঙ্গে সেইসব লেখার সঙ্গে মিলমিশ রেখে তৈরি করা হয় জনপ্রিয় ভোটের ছড়া। সেসবও লেখাও তৈরি হয় বিভিন্ন রাজনীতির নেতা, কর্মী কিংবা লিখিয়েদের হাত ধরেই। আর দেওয়াল লেখার আরও এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কার্টুন তৈরি করা।
শিলিগুড়ির শতরূপ সান্যাল, জীবন বাগদিরা দেওয়াল লেখায় বেশ জনপ্রিয়। তাঁরা কার্টুন আঁকাতেও পারদর্শী। এই কার্টুন তৈরি করে তার পাশে লেখা হয় ভোটের দেওয়াল লিখন, প্রার্থীর নাম এবং থাকে ভোট দেওয়ার আবেদনটুকু। সাম্প্রতিক কালের প্রাচীনত্বের সঙ্গে ধরা রয়েছে দেওয়াল লেখার নানান কৌশল। বাড়িতে ব্যবহার্য রান্না দ্রব্যের নানান উপকরণের রংকেও ব্যবহার করা হত অতীতের দেওয়াল লিখনে। শুধু তাই নয়, কূটকচালি, খিস্তিখেউড় লেখাও তুলে ধরা হত সে-কালের দেওয়াল লিখনে। ঝাড়গ্রামের লোধাশুলি, ডাঙ্গিকুসুম এবং মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় আদিবাসীদের শিল্পী রূপেণ হেমরম, ডুলু কিস্কু, পানু মার্ডিরা এভাবেই দেওয়াল আঁকেন। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বীরভূমের ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বিভিন্ন এলাকায় কয়েক বছর আগেও দেওয়াল লেখা হত আলকাতরা, চুন এবং বাড়ির ব্যবহার্য সামগ্রী দিয়েই।
শুধু তাই নয়, রং-তুলির টানেই একজন গ্রামীণ শিল্পী তাঁর নিজের শিল্পী সত্তাকে প্রকাশ করতেন সেকাল থেকে আজকের দেওয়াল চিত্র জুড়ে। অনেক সময় তার মন আর মননের ছাপও পড়ত শিল্পীর দেওয়াল চিত্র জুড়ে।
আরও পড়ুন-রাঢ়বঙ্গে যে সত্যিটা বেআব্রু হয়ে গেল
অনেকে আবার শুধুই রাতের পর রাত ভোটের আগে দেওয়াল আঁকেন। আর সেই আঁকায় ফুটে ওঠে রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র, দলীয় চিহ্নটুকু আর থাকে ভোট দেওয়ার আবেদন। তবে এসবের বাইরেও একজন ভোট চিত্রের দেওয়াল ভরার শিল্পীকে লিখে দেন শ্লোক, রাজনৈতিক ছড়া। তার মূল্যও কম নয়। সেই অক্ষর শিল্পীর ছড়া, শ্লোক কিংবা লেখাটিই আপনাকে দেওয়াল চিত্রের আঙিনায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাবে। আকর্ষিত করবে। ভাললাগার জায়গা তৈরি করে আপনাকে টেনে নিয়ে যাবে দৃষ্টির আঙিনায় নিয়ে গিয়ে। রাঢ়ের শিব দাস, নবেন্দু, তিলক কবিরাজ, তপন দাসবৈরাগ্যরা এ-বিষয়ে অগ্রগণ্য।
একসময় রাঢ়ের গ্রামে গ্রামে রাত-দিনের দেওয়াল লিখন ঘিরে দেখা যেত উৎসবের মরশুম। অনেকে রাতের পিকনিকেরও আয়োজন করতেন। বসত রাতের লিখন আড্ডা। সেকালে সরল ছিল দিনযাপন। আজকের দিনে অনেক বেশি জটিল আবর্তে চলে গেছে সবকিছু। তবে স্মৃতির দেওয়াল লিখনে এখনও জড়িয়ে আছে বহুপ্রকার প্রবাদবাক্য। বহু দেওয়াল লেখা আজকের সময়ে ইতিহাসও।
আরও পড়ুন-ফাইনালে স্বপ্নভঙ্গ, নতজানু মোহনবাগান
আজকাল যুগ বদলে গেছে বহুগুণ! সেইসঙ্গে ভোটের বাজারে এসেছে ফ্লেক্সের দাপট। আধুনিকতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যেন ক্রমশ হেরে গিয়েছে সাবেকিয়ানা। এখনও সামান্য পুঁজি নিয়ে ব্যাবসা করতে নামা কোনও দোকান থেকে হয়ত সাইনবোর্ড লেখার বরাত মেলে তাদের কাছে তবে তা সামান্যই। ভবিষ্যতে সেটুকুও মিলবে কি না, সেই প্রশ্নটা পিছু ছাড়ে না দেওয়াল লিখিয়েদের থেকে। ফ্লেক্সের প্রচার অনেক বেশি সহজলভ্য হয়েছে প্রচারের এই নতুন মাধ্যমটি। আকর্ষণেরও বহুগুণ। তবে পুরোনো দেওয়াল লেখার গুরুত্ব, ঐতিহ্য এখনও কমেনি। ফ্লেক্সের পাশাপাশি বর্তমানের ভোট বাজারে বেড়েছে ডিজিটালি প্রচারেরও দাপট। খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনী ক্রোড়পত্র এখন তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে অনেক গুণ। একপ্রকার কাগজের যুগ শেষের পথেই। বর্তমানে রেডিও, টিভির পাশাপাশি মানুষ বেশি সময় কাটায় মোবাইল ফোন নিয়ে। ইন্টারনেট জগৎমেলায় তার বেশি সখ্য, আসা-যাওয়া। কিন্তু একটু খেয়াল করলে দেখবেন আজও এত বিজ্ঞাপনের যুগেও অমলিন দেওয়াল লেখা। ভোটের বাজারে সেই দেওয়াল লেখা শিল্পের গুরুত্ব রয়েছে এখনও টিকে। প্রায় ভারতবর্ষের সমস্ত জাতীয়, আঞ্চলিক দলের নেতা-কর্মীরাই দেওয়াল লেখায় নিজেদেরকে এগিয়ে রাখেন। আর সে-কারণে দেওয়াল দখল, তাকে ঘিরে হিংসার ঘটনাও ঘটে কোথাও কোথাও। বাংলার শিল্পের তালিকায় অসংগঠিত এই শিল্পীদের বাজার আজও নিয়ন্ত্রিত নয়। কোনও সংগঠনও নেই তেমন ভাবে তাদের মধ্যে। তবে দেওয়াল লিখিয়েদের প্রতি সরকারি নজর থাকলেও, তা তেমন জোরালো নয়। তবে তাঁদের লিখন শিল্পের ধারাবাহিক চর্চায় আজও বাংলার পাশাপাশি ভারতবর্ষের ভোটের বাজার নিয়ন্ত্রিত হয় বইকি। গ্রাম, শহরের বেশির ভাগ মানুষই আজও দেওয়াল লিখনকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। পড়েন দেওয়ালে লেখা ভোটের ছড়া।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
ভোট এলেই লক্ষ্মীলাভ হয় দেওয়াল লিখন শিল্পীদের কপালে। চৈত্রের চড়া রোদ মাথায় নিয়ে এবার যখন সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা প্রচার করতে নেমেছেন। তখন রোদ উপেক্ষা করেই দেওয়াল লিখতে নেমে পড়েছেন বাংলার অবহেলিত দেওয়াল লিখন শিল্পীরা। লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পরপরই তাঁদের দেখা যাচ্ছে পথচলতি দেওয়ালে আঁকতে। সকাল থেকে রাত, যে কোনও সময় তাঁরা লিখছেন এক মনে। হাতের তুলির জাদুতে ভরে উঠছে দেওয়াল জুড়ে প্রার্থীদের নাম। দলের প্রতীক সহ নানান লেখাজোকা। সাতসকালে শহরের ঘুম যখন ভাল করে ভাঙে না, তখনই তাঁরা লিখতে বের হন তীব্র রোদের থেকে বাঁচতে। ওঁরা দেওয়াল লিখন করেন, মেধা আর হাতের জাদুতে। সোজা কথায়, পুরনো এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর হয়ে ভোট দেওয়ার আবেদনের কথাটা দেওয়ালে লেখেন দেওয়াল চিত্রীরা। সঙ্গে আঁকেন দলীয় চিহ্নও। সেখানেও মেলে নানান শিল্পশৈলীর দাপট। প্রার্থীর লিখিত অথচ শব্দহীন এই প্রচার একসময় জনপ্রিয়ও ছিল বাংলা জুড়ে। কোনওরকমের পরিবেশ দূষণ, দৃশ্যদূষণ তো ছিলই না, ছিল না শব্দদূষণও। যে কোনও রাজনৈতিক দলের প্রার্থীর হয়ে সাম্মানিকটুকু নিয়ে আবেদন লেখায় ওঁদের কাজ। তাঁদের কোনও নির্দিষ্ট দলের ভেবে নেওয়ার কোনও কারণই ছিল না। তাঁরা শিল্পী। তাঁদের কাছে তখন কোনও রাজনৈতিক পরিচয় বড় ছিল না। এই দেওয়াল লিখিয়ে শিল্পীদের কাছে এটা তখন স্থায়ী বা অস্থায়ী জীবিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। যে-দল ডাকে, সেই দলের ডাকেই সাড়া দিয়ে কাজে নেমে পড়তেন তাঁরা। বাংলার ভোটের বাজারে ছবিটা চেনা। রাস্তার ধারে ধারে, দেওয়ালে দেওয়ালে একজন লেখেন। আর একজন রঙের কৌটো ধরে দাঁড়িয়ে থেকে সেই লেখার অক্ষরগুলিকে রং দিয়ে ভর্তি করে থাকেন। বাংলার কোথাও কোথাও আবার তাদেরকে একসঙ্গে দু’তিনজনকেও লিখতে দেখা যায়। দেওয়াল চিত্রীদের কাছে আঁকার ক্যানভাস বলতে পাড়ার কোনও বাড়ির দেওয়াল। বাথরুমের দেওয়াল। বাড়ির পিছন দিক। পুরনো বাড়ির দেওয়াল। ভোট তো পাঁচ বছরে একবার আসে আর চলে যায়। এই দেওয়াল আঁকার শিল্পীরা বাকি দিনগুলো কী করেন! বেঁচে থাকার জন্য তাঁদেরকে সাইনবোর্ড লিখে বা বিভিন্ন সংস্থার বিজ্ঞাপন লিখে, এছাড়াও নানান রকমের কাজকর্ম করে সেই রোজগারের উপর চলতে হয়। ফলে অভাব তাঁদের নিত্যসঙ্গী। অনেকের বর্তমানে গ্লোসাইন বোর্ড আর কম্পিউটার টাইপিংয়ের দিকে হাত বাড়িয়েছেন। তার সঙ্গে অবসর সময়ে বহুজাতিক সংস্থার চোখধাঁধানো সাইনবোর্ড লেখা তো আছেই। কিন্তু অর্থনৈতিক বাজারের কাছে দেওয়াল লেখার গুরুত্ব অনেকটাই কমেছে। বেড়েছে ফ্লেক্স আর ডিজিটালি প্রচারের দাপট। কিছুটা হলেও সঙ্কট তৈরি হয়েছে দেওয়াল লিখিয়েদের জগতে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎও এগিয়ে এসেছে যেন! উত্তরের জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি এলাকায় জনজাতির অনেকখানি ধর্মের, অবহেলার আলোকে জড়িয়ে গেছে। সেখানকার মহিলারা আঞ্চলিক ভাষায় নানা রঙ দিয়ে সুন্দর করে দেওয়াল লেখেন। তাঁরাও মজুরি পান।