দুদিনের দুটি ঘটনা। আর তাতেই প্রমাণিত মিথ্যে ছড়াতে গিয়ে বেজায় ফেঁসেছে বিজেপি।
একেবারে শক্তি সামন্তের ‘অনুসন্ধান’ ছবির অমিতাভ বচ্চনের কায়দায় বলতে ইচ্ছে করছে, ফেঁসে গেল, ফেঁসে গেল, কালীরামের ঢোল।
সন্দেশখালিতে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ তোলা হয়েছিল বলে দাবি করছেন আরও এক মহিলা। তাঁর দাবি, তাঁকেও ধর্ষণ করা হয়েছে বলে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল থানায়। না জানিয়ে সাদা কাগজে সই করানো হয়েছিল। এক সপ্তাহ পর তিনি সবটা জানতে পারেন। মহিলার আরও দাবি, পরে যখন তিনি মামলা তুলতে চান, তাঁকে ‘হুমকি’ দেওয়া হয়। ভিডিয়োয় অভিযোগকারিণীর দাবি, এ-সবের নেপথ্যে ছিলেন মাম্পি দাস এবং পিয়ালি দাস।
৩২ মিনিট ৪২ সেকেন্ডের একটা ভিডিয়ো। সেখানে স্থানীয় বিজেপি নেতা গঙ্গাধর কয়ালকে বলতে শোনা গিয়েছে যে, সন্দেশখালিতে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে। বসিরহাট আসনে বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্রও দু’হাজার টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ‘মিথ্যে’ অভিযোগ দায়ের করেছিলেন বলে দাবি করেছিলেন ওই পদ্মনেতা। এ-নিয়ে শোরগোলের মধ্যেই আরও এক মহিলা দাবি করলেন, তিনিও ‘ধর্ষণের শিকার’ বলে থানায় ‘মিথ্যে’ অভিযোগ করা হয়েছিল।
প্রকাশ্যে আসা নতুন ভিডিয়োয় মহিলার বক্তব্য, তাঁর অভিযোগ ছিল, তাঁকে রান্নার কাজের টাকা দেওয়া হয়নি। সেই অভিযোগকেই ধর্ষণের অভিযোগের রূপ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে না জানিয়ে। মহিলার দাবি, ‘আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার শাশুড়িকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল মাম্পি দাস আর পিয়ালি দাস। দিল্লি থেকে মহিলা কমিশন এসেছে বলে থানায় নিয়ে গিয়েছিল। থানায় ঢুকিয়ে দিয়ে গেট ফেলে দিয়েছিল। উনি আর বেরোতে পারেননি। অভিযোগ কী জানতে চেয়েছিল, উনি জানিয়েছিলেন যে রান্নার কাজের টাকা পাইনি। এর পর সাদা কাগজে সই করিয়ে নিয়েছিল। এর পর ওখান থেকে চলে যেতে বলেছিল। আমি বাড়ি ফিরে পিয়ালিকে ফোন করে জানতে চেয়েছি। পিয়ালি আমায় বলেছে, ও কোনও ব্যাপার নয়। অভিযোগ ছিল, তাই সই করিয়েছি। তোমরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। এক সপ্তাহ পরে জানতে পারলাম, তিন-চার জনকে দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করানো হয়েছে। অভিযোগ ছিল, রাতে আমাদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে।’
মহিলার আরও দাবি, তিনি ও তাঁর শাশুড়ি পুলিশের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানেও তাঁরা জানিয়েছেন যে, ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। মহিলা জানান, তাঁরা ওই মিথ্যে মামলা তুলে নিতে চান। মহিলার কথায়, ‘যা ঘটেনি, সে-সব নিয়ে কেন মামলা লড়ব? আমাদের অত ক্ষমতা নেই। আমরা এ-সব ঝামেলার মধ্যে জড়াতে চাই না।’ মহিলার দাবি, তিনি পিয়ালির কাছেও গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে অপমান, হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,
সন্দেশখালিতে টাকা নিয়ে ধর্ষণের মিথ্যে অভিযোগ পুলিশে দায়ের করানোর বিষয়টি বিরোধী দলনেতা কুভেন্দু মিথ্যাচারীর ‘মস্তিষ্কপ্রসূত’।
অন্যদিকে, ডাবল ইঞ্জিন সরকার যে রাজ্যে আসবে, সেই রাজ্যই দেশের মধ্যে এক নম্বর হবে। ভোটের আগে এই হল নরেন্দ্র মোদির গ্যারান্টি। ভোটের সময় গ্যারান্টি দেওয়া স্বাভাবিক। প্রতিশ্রুতি, আশ্বাসও প্রত্যাশিত। কিন্তু ৩৪ রাজ্যের সর্বত্র গিয়েই যদি বলা হয়, এই রাজ্যকে আমরা এক নম্বর করব, তাহলে বিভ্রান্তি তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনী ভাষণগুলি নিয়ে সেই বিভ্রান্তিই সৃষ্টি হয়েছে। মোদির এই নয়া জুমলা বাকি সব গিমিককে ছাপিয়ে যাচ্ছে।
মোদি রাজস্থানে গিয়ে বলছেন, এই রাজ্যকে তাঁর সরকার এক নম্বর করে দেবে। আবার সোমবার ওড়িশায় গিয়ে বলেছেন, এবার বিজেপি ওড়িশায় ক্ষমতাসীন হবে। আর তারপর ওড়িশা হবে দেশের এক নম্বর রাজ্য। গত বছর ছিল কর্নাটক বিধানসভা ভোট। প্রচারে গিয়ে মোদি বেঙ্গালুরুর জনসভায় বলেছিলেন, এখানে বিজেপি সরকার গঠিত হলেই দেশের এক নম্বর রাজ্য হবে কর্নাটক। ২০১৪ সালে এবং ২০২৪ সালে দু’বারই মোদি ঝাড়খণ্ডে বলেছেন, এই রাজ্য প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর, সেই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এই রাজ্যকে দেশের এক নম্বর করা হবে। মঙ্গলবার মোদি মহারাষ্ট্রের জনসভায় বলেছেন, মহারাষ্ট্রে আগে সম্পূর্ণ বিকাশ থমকে গিয়েছিল। এনডিএ জোটের সরকার আসার পর এখানে আবার উন্নয়নের চাকা ঘুরছে। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের দৃষ্টান্তমূলক কাজের মাধ্যমে বহু সেক্টরে মহারাষ্ট্র এক নম্বর হবে।
প্রশ্ন, যখন যে রাজ্যে যাচ্ছেন, মোদি সেই রাজ্যকেই এক নম্বর করার কথা বলছেন। এভাবে আসলে তিনি বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, মানুষকে তিনি বোকা ভাবেন। সব রাজ্য একসঙ্গে এক নম্বর কীভাবে হবে? কর্নাটক থেকে রাজস্থান। ওড়িশা থেকে ঝাড়খণ্ড। বাংলা সম্পর্কে মোদি ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বলেছিলেন, এমন একটা বাণিজ্য ও শিল্প ব্যবস্থা করা হবে যাতে, পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হবে বাংলা। ডাবল ইঞ্জিন সরকার থাকলে বাংলা আর পিছিয়ে থাকবে না। এবার লোকসভা ভোটে মোদি একের পর এক রাজ্যে গিয়ে সেই এক নম্বরের প্রতিশ্রুতিকে অন্যতম প্রচারের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আজকের যুগে প্রধানমন্ত্রী কখন কোথায় কী বলছেন, সেটা নিমেষের মধ্যেই জানা যায়। এরপরওতিনি একের পর এক রাজ্যে গিয়ে সবাইকে এক নম্বর করার আশ্বাস কীভাবে দিচ্ছেন?
অন্তহীন মিথ্যে ফাঁস হয়ে যাচ্ছে দিকে দিকে।
ধর্মের কল কি তবে ভোটের বাতাসে নড়ছে?
আরও পড়ুন- হারার ভয়ে দিশেহারা বিজেপি, কাঁথি-তমলুক-সবংয়ে চলছে সন্ত্রাস