প্রতিবেদন : সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের নামে কার্যত প্রহসন করলেন রাজ্যপাল (Governor) সি ভি আনন্দ বোস। অভিযোগ উঠেছিল, রাজভবনের কনফারেন্স রুমে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে ভবনের অস্থায়ী মহিলা কর্মীর। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ফুটেজ চেয়েছিল কলকাতা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। কিন্তু পুলিশের সেই আবেদন নাকচ করে দিয়ে একেবারে জনসমক্ষে সেই সিসিটিভি প্রকাশ করলেন রাজ্যপাল। কিন্তু অন্দরমহল নয়, রাজভবনের মেন গেটের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ্যে আনল রাজভবন কর্তৃপক্ষ। যে ফুটেজে রাজ্যপালের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এই ফুটেজ প্রকাশ্যে আসার পরই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অভিযোগকারিণী নির্যাতিতা। তিনি বলেন, নিজের দোষ ঢাকতে উনি আমার এবং আমার পরিবারের অসম্মান করলেন। আর কত নিচে নামবেন রাজ্যপাল? উনি নিজেও জানেন, উনি আমার সঙ্গে কী অন্যায় করেছেন। সেজন্যই রাজভবনের কর্মীদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রেখেছেন। এমনকী আমাকেও ভয় দেখানোর জন্য লোক পাঠিয়েছিলেন উনি।
বৃহস্পতিবার নির্দিষ্ট ১০০ জনের সামনে রাজভবনের নর্থ গেটের সামনের দুটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখাল রাজভবন কর্তৃপক্ষ। মোট তিনটি ধাপে ২ মে-এর বিকেলের ফুটেজ দেখানো হয়েছে। তার মধ্যে দ্বিতীয় ফুটেজে ৫টা ৩২ মিনিট নাগাদ অভিযোগকারিণী তরুণীকে রাজভবনের দিক থেকে পুলিশ আউটপোস্টের দিকে যেতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু বেছে বেছে দেখানো মাত্র ১ ঘণ্টা ১৯ মিনিটের ভিডিওতে একবারের জন্যও রাজ্যপালকে দেখা যায়নি। যে কনফারেন্স রুমে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল, সেই ঘরের ফুটেজও দেখানো হয়নি। বরং অনুমতি না নিয়েই সকলের সামনে সেই ফুটেজ দেখানোয় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিযোগকারিণী তরুণী। জানিয়েছেন, ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আমি কাঁদতে কাঁদতে পুলিশ আউটপোস্টে ঢুকছি। কিন্তু এটা রাজ্যপালের (Governor) হাস্যকর নাটক হয়ে গেল না? উনি পুলিশকে তদন্ত করতে দিচ্ছেন না, রাজভবনের কর্মীদেরও কথা বলতে দিচ্ছেন না। এদিকে হঠাৎ করে সিসিটিভি প্রকাশ করে দিলেন! এই সিসিটিভি ফুটেজে কী প্রমাণ হয়? এই ফুটেজ সামনে এনে উনি আমাকে আরও অসম্মান করলেন। নিজের কুরুচিকর কাজ ঢাকতে গিয়ে উনি আজকে হাস্যকর নাটক মঞ্চস্থ করলেন।
আরও পড়ুন- দেশের বোঝা মোদি, জুটবে না গরিষ্ঠতা: বিস্ফোরক প্রাক্তন ঘনিষ্ঠ সিবিআই কর্তা
পুলিশকে তদন্তে বাধা দিয়ে জনসমক্ষে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করায় রাজ্যপালের কড়া নিন্দা করেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। দলের তরফে মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, রাজ্যপাল বলেছিলেন ১০০ জনকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাবেন। সেই ১০০ জন কারা? ফুটেজে দেখা গেল রাজভবনের বাইরে কিছু পুলিশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। একজন মহিলা যাচ্ছেন। যদি ওই মহিলাই হয়ে থাকেন, তবে তাঁর মুখটা ব্লার করে দেওয়া উচিত ছিল। দ্বিতীয়ত, রাজ্যপাল বলেছিলেন সত্যি সামনে আসবে। তাহলে সেই সময়ের ফুটেজ দেখাতে পারতেন। আর ওই মহিলা তো পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন। তাহলে যে ১০০ জন ফুটেজ দেখলেন, তাঁরা কারা? সবাই আসলে ওঁর বশংবদ। অন্যদিকে, মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা বলেন, ফুটেজ আগেই চেয়েছিল কলকাতা পুলিশ। কিন্তু উনি ফুটেজ না দিয়ে কেরল চলে গেলেন। ফিরে এসে বললেন, ১০০ জনকে ফুটেজ দেবেন। দিন, কিন্তু পুলিশকেও তো দিতে হবে। যেহেতু ওই মহিলা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, তাই আইনত ফুটেজ পুলিশকেও দেওয়া উচিত।