প্রতিবেদন : ওবিসি (OBC) রিজার্ভেশন চলছে, চলবে। ওটা বিজেপির রায়, ওই রায় আমি মানি না। বুধবার দমদমের প্রার্থী সৌগত রায়ের সমর্থনে খড়দহ ও পানিহাটির জোড়া সভা থেকেই গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, বদমায়েশ লোকেরা কাজ করায় এজেন্সিকে দিয়ে। কাউকে দিয়ে একটা অর্ডার করিয়েছে। তাঁর রায় আমি মানি না। আগুন নিয়ে খেলছেন মোদিবাবুরা। প্রয়োজনে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
সংরক্ষণ কেড়ে নেবেন? : বুধবার কলকাতা হাইকোর্ট ২০১০ সালের পর থেকে পাওয়া রাজ্যের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল বলে রায় দেয়। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে ২০১১ সালে। বাম আমলের সংরক্ষণ থেকে শুরু করে তৃণমূল আমলে ইস্যু করা ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। তার পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন জোড়া সভা থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভদ্রলোককে আমি জাজ হিসাবে সম্মান করি। কিন্তু উনি অনেক কিছুতে বিখ্যাত। তবে জাজমেন্ট নিয়ে বলতেই পারি। ক’দিন ধরে প্রধানমন্ত্রী বলে বেড়াচ্ছেন, সংরক্ষণ কেড়ে নেবেন। সেটা কখনও হয়? তাহলে তো সংবিধান ভেঙে দিতে হয়। এটা হতে পারে না। এই রায় আমি মানি না।
কলঙ্কিত অধ্যায় : তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, যখন ২৬ হাজার শিক্ষককে বাতিল করেছিল, আমি বলেছিলাম ওদের রায় মানি না। তেমনই বলছি, বিজেপির এই রায়টাও মানব না। ওবিসি রিজার্ভেশন চলছে চলবে। কত বড় সাহস! কোর্টে কখনও ভাগাভাগি হয় না। দেশে কখনও ভাগাভাগি হয় না। এটা একটা কলঙ্কিত অধ্যায়। কেউ বলতে পারে— আমি হিন্দুকে বাদ দিলাম, মুসলমানকে রাখলাম কিংবা মুসলিমকে বাদ দিলাম হিন্দুকে রাখলাম?
স্পর্ধা তো কম নয়! : মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেউ জানে হিন্দু বলতে ওখানে কারা আছে, আমি তফসিলিদেরও রেখেছিলাম। আর আমি করিনি এটা, উপেন বিশ্বাস তখন চেয়ারম্যান। বাড়ি বাড়ি সার্ভে করে ওবিসি রিজার্ভেশন করেছিলাম। ২০১২ সাল থেকে চলছে। কোর্টে আগেও কেস হয়েছিল, তা মিটেও গিয়েছে। স্পর্ধা তো কম নয়! একটা সরকার কী পলিসি নেবে, সেই পলিসি নিয়েও কথা। বিজেপির পলিসি নিয়ে কোনও কথা বলার সাহস আছে, না হিম্মত আছে?
ভোটের আগে খেলা : তিনি বলেন, কিছু দালাল হঠাৎ করে এল আর বলল, ২৬ হাজার চাকরি খেয়ে নাও। ওবিসি রিজার্ভেশন বন্ধ করে দাও! ওসব হবে না। তা-ও আবার ভাগ করে দিয়েছে। মুসলিমদের একেবারে আলাদা। কেন মুসলিমরা কি আমাদের দেশের নাগরিক নয়? আমি হিন্দু ঘরের মেয়ে, আমি মুসলিম করি-তফসিলি করি-জৈনও করি-বৌদ্ধ করি। আবার বলে রাখি, এটা ক্যাবিনেট করে পাশ হয়েছে। বিধানসভায় পাশ হয়েছে। কোর্টের রায়ও আছে। ভোটের আগে এইসব নিয়ে খেলা করছে ওরা।
চক্রান্ত তিন : তিনি বলেন, সন্দেশখালি নিয়ে করলেন চক্রান্ত ওয়ান ফাঁস হয়ে গিয়েছে। দাঙ্গা নিয়ে করার চেষ্টা করলেন চক্রান্ত ২। এখনও মাথায় ঘুরছে হিন্দু-মুসলমানে ভাগ করার। তিন, একজন প্রধানমন্ত্রী এই কথা কখনও বলতে পারে না যে, সংখ্যালঘুরা তফসিলিদের রিজার্ভেশন কেড়ে নেবে। কারণ এটা সাংবিধানিক অধিকার। তফসিলিরা, আদিবাসীরা, ওবিসিরা সংবিধান অনুযায়ী অধিকার পায়। সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে এই ওবিসি রিজার্ভেশন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-বিজ্ঞাপন মামলা : বিজেপিকে এক্তিয়ার বুঝিয়ে দিল হাইকোর্ট
কাঁচা রাজনীতি : মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জ, তোমরা কে সংরক্ষণ বন্ধ করে দেওয়ার? শুধুমাত্র একটা ভোট রাজনীতির জন্য, পাঁচ বছর থাকবে বলে, পাঁচ বছর চুরি করবে বলে এসব করছ। এই যে কাঁচা রাজনীতির জন্য সংবাদপত্রে কী ধরনের বিজ্ঞাপন দেওয়া হল। কোর্টের রায়ে বলে দিয়েছে, এর থকে নিম্নমানের আর কিছু হতে পারে না। এটা অন্যায়।
খেলা শুরু হবে : তাঁর সাফ কথা, যারা এসব করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগতভাবে মানহানির মামলা করব। তার কারণ, একটা এভিডেন্স দিয়ে প্রমাণ করতে হবে, আমি কারও এক পয়সা খেয়েছি। প্রমাণ না করতে পারলে তাকে আমাকে এক হাজার কোটি দিতে হবে, আমি জনগণকে দিয়ে দেব। রায় আমি পেয়ে গেছি, এবার আমার খেলা শুরু হবে।
বাংলাটা বদলে গিয়েছে : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাংলায় যা উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়ন কোথাও হয়নি, দক্ষিণেশ্বর এলেই বুঝতে পারবেন সেটা। দক্ষিণেশ্বর স্কাইওয়াকই বলে দেবে, বাংলাটা বদলে গিয়েছে। পুরোটাই আমার করা। বারাকপুর নিয়ে একটা প্ল্যান করছিলাম।
আমরা দখল নেব : তৃণমূল সুপ্রিমোর কথায়, এটা বিধানসভার ভোট নয়, লোকসভার ভোট। দিল্লি কে চালাবে, তার ভোট। বিজেপির সাহস কত বড়! বলছে, এখানে তৃণমূলকে হারিয়ে আমরা বাংলাটাও দখল নেব। কোনওদিন পারবে না বাংলা দখল করতে। দিল্লিটা এবার আমরা দখল নেব।
বাংলাই দিল্লি তৈরি করবে : মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলায় ঢের শিল্প করা হচ্ছে। চাকরির জন্য বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাই আগামী দিনে পথ দেখাবে দেশকে। আগামী দিনে বাংলাই দিল্লি তৈরি করবে। সে জন্য একটাও ভোট সিপিএমকে দেবেন না। বিজেপিকেও একটা ভোট নয়। সব ভোট জোড়াফুলে দেবেন, এটা আমার আবেদন।
বিজেপিকেও আমরা সরাব : তাঁর কথায়, তৃণমূলকে জিতিয়ে দিন। ইন্ডিয়া জোটকে দিল্লিতে ক্ষমতায় এনে দিন। তৃণমূল কংগ্রেস থাকবে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে। আমরা বদলাবই। ৩৪ বছরের বামফ্রন্টকে যদি সরিয়ে দিতে পারি, এই ভাঁওতাবাজ-মাফিয়াবাজ-এজেন্সিবাজ বিজেপিকেও আমরা সরাব। এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা, শপথ, অঙ্গীকার।
নাকে ঝামা ঘষে দিন : তিনি বলেন, আমরা এনআরসি করতে দেব না, সিএএ করতে দেব না, ইউসিসি করতে দেব না। ছাত্রছাত্রীদের চাকরি যাবে না। বরং আরও ১০ লক্ষ চাকরি সরকারের রেডি আছে। আমরা করলেই বিজেপি বাধা দেয়। এবার তাই বিজেপির নাকে ঝামা ঘষে দিন।
সবাই গাধা, আপনারা সাদা? : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কী বলছে বাবুরা? নাকি বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিচ্ছে! বলছে, সৌরশক্তির মাধ্যমে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে, এটা সম্ভব? ভাবে আমি জানি না। আমাকে সৌরশক্তি দেখাচ্ছে। হাজার বছর লাগবে। ততদিন বিজেপি পার্টিটা থাকবে তো? কী ভাবেন নিজেদের আমরা সবাই গাধা, আপনারা সাদা? মিথ্যাবাদী। নো গ্যারান্টি ফোর টোয়েন্টি। মাফিয়াবাজ, ধান্দাবাজ সরকার। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দেয়। গরিব মানুষের টাকা দেয় না।
দিদি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : তিনি বলেন, দিদি গ্যারান্টি বলে না। দিদি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি মিথ্যা কথা বলি না, তাই গ্যারান্টিও বলি না। তাহলে ৪২০ থেকে ৪৪০ ভোল্টে চলে যাবে। ওরা নাকি বলে বেড়াচ্ছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করে দেবে। তোমাদের কারও ক্ষমতা নেই। আমি সারা জীবন করে দিয়েছি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। এটা মা-বোনেদের আত্মগরিমা। আপনাদের টাকা আপনারাই পাবেন।