চেন্নাই, ২৬ মে : চিপকে কী আছে? কোনও জাদু? যে বারবার হাত বাড়িয়ে দেবে কেকেআরের জন্য।
১২ বছর। অনেকটা সময়। তখন মনবিন্দর সিং বিসলা। এখন রাহমনউল্লাহ গুরবাজ। তখন গৌতম গম্ভীর। এখন শ্রেয়স আইয়ার। চেন্নাইও কত বদলেছে। কিন্তু চিপক আর কেকেআরের মেলবন্ধন এক জায়গাতেই থেকে গেল! এই মাঠে প্রথম ট্রফি জয়। এক যুগ পর রবিবাসরীয় রাতে কেকেআরের ট্রফি জয়ের হ্যাটট্রিকও এই মাঠে। মাঝে ২০১৪, দ্বিতীয়বার। এদিন ফাইনালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে (KKR VS Sunrisers Hyderabad) ৯ উইকেটে হারাল কেকেআর।
২০১২-তে মনোজ তিওয়ারির শট বাউন্ডারি পার করতেই গ্যালারি থেকে মাঠে লাফ দিতে উদ্যত হয়েছিলেন শাহরুখ খান। ২০২৪-এ মুখে মাস্ক নিয়ে খেলা দেখলেন। চুপচাপ। গুরবাজের শট তৃতীয়বার আইপিএল জয় নিশ্চিত করে ফেলার পর হাসলেন। উচ্ছ্বাসে ভাসলেন। পাশে জুহি, সুহানারাও। কী আশ্চর্য, থালা ধোনির হলুদ গ্যালারি কী করে যেন এতক্ষণে বেগুনি হয়ে গিয়েছে! সিএসকে-সিএসকে-র মধ্যে শোনা গেল কেকেআর…। চেন্নাই-কলকাতা বন্ধনে এমনই অবশ্য হওয়ার ছিল।
১১৪ রানের টার্গেট ছিল নাইটদের সামনে। আইপিএল ফাইনালে এত কম টার্গেট আগে কেউ রাখেনি। তখন মনে হচ্ছিল কামিন্স শেষ চেষ্টা করবেন। নারিনকে ফেরালেনও ৬ রানে। কিন্তু তারপর আর পারলেন না। সেটা এইজন্য যে, ভেঙ্কটেশ আইয়ার আরও একটা হাফ সেঞ্চুরি করে দিলেন। নাইট ওপেনারদের নিয়ে প্রচুর কথা হয়েছে। নারিন-বরুণ জুটি নিয়েও। কিন্তু ভেঙ্কটেশকে নিয়েও বলতে হবে। তিনি ৫২ নট আউট থেকে নাইটদের জয় নিশ্চিত করেছেন। শ্রেয়স তাঁর পাশে নট আউট ৬ রানে।
আরও পড়ুন- রেমাল মোকাবিলায় এনডিআরএফের ১৪ টিম মোতায়েন হল বাংলায়
আইপিএলের মজাটাই এমন যে, তাড়াতাড়ি সব বদলে যায়! এই যেমন সানরাইজার্স হায়দরাবাদ (KKR VS Sunrisers Hyderabad)। ২০২৪-এ দু’বার তারা রেকর্ড রান তুলেছে। রবিবার ফাইনালে সবথেকে কম রানের রেকর্ডও করল। ১৮.৩ ওভারে ১১৩। কেন এভাবে ভেঙে পড়ল কামিন্সদের ব্যাটিং। দুটো কারণ। দু’-তিনজন ব্যাটারের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা। আর কেকেআরের বোলিং বৈচিত্র। পেস ও স্পিন দুটোতেই বাজিমাত করল তারা। তবে শুরুর দুটি উইকেট ছাড়া সানরাইজার্স কিন্তু উইকেট ছুঁড়ে দিয়েছে!
লাল মাটির চিপকে একটাই এঁটেল মাটির উইকেট আছে। ফাইনালের জন্য যেটা বেছে রাখা হয়েছিল। বলা হচ্ছিল এটা মুম্বই উইকেট। ওয়াংখেড়ের উইকেটের মতো বলে। এমন উইকেটে রান হয়। প্যাট কামিন্স সেইজন্য আগে ব্যাট নিলেন। আরেকটা কারণও ছিল। রাতে এখানে খুব শিশির পড়ে। বোলারদের তখন বল গ্রিপ করা কঠিন হয়। তবে পুরো ভাবনাটাই বুমেরাং হল। ভয়ঙ্কর ব্যাটিং বিপর্যয় তাদের হার নিশ্চিত করে দিয়েছিল বহু আগেই।
প্রথম ওভারে অভিষেক শর্মা (২) ও পরের ওভারে ট্রাভিস হেডকে (০) হারানোর পর মনে হচ্ছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ অঙ্ক ভুল করেছে! স্টার্ক যে বলে অভিষেককে বোল্ড করলেন, সেটা টুর্নামেন্টের সেরা বলে বিবেচিত হতে পারে। লেগ স্ট্যাম্প থেকে সুইং করে অফ স্ট্যাম্প ফেলে দিল। হেডকে ফেরান বৈভব। ৬ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা। পরিস্থিতি আরও খারাপ হল ত্রিপাঠীকে (৯) স্টার্ক তুলে নেওয়ার পর। সানরাইজার্স তখন ২১/৩।
মার্করাম (২০) আর নীতীশ (১৩) কিছুটা সামলে নিয়েছিলেন। কিন্তু হর্ষিত ধাক্কা দিলেন নীতীশকে তুলে নিয়ে। তখনও পর্যন্ত সব উইকেট সিমারদের পকেটে। এই উইকেটে যেমন বাউন্স, তেমনই বল সুইং করল দু’দিকে। চেন্নাইয়ে বল স্পিন করে। এদিন উল্টো হল। যার সুবিধা পেলেন স্টার্ক, বৈভব ও হর্ষিত। তিনজনের বল ক্যারি হল, উঠল এবং সুইং করল। পরে রাসেল এসে ৩ উইকেট নিয়ে গেলেন। মার্করামের পর শেষ আশা ক্লাসেন (১৬)। হর্ষিত তাঁকে ফেরানোর পর সানরাইজার্স আর এগোতে পারেনি।