ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতা থেকে বাদ
চার্লি চ্যাপলিনের অন্ধ ভক্ত৷ বিশ্ববন্দিত অভিনেতার এমন কোনও ছবি নেই, দেখেননি। চেষ্টা করতেন নকল করার। শুরুর দিকে বিভিন্ন কনসার্টে প্রায়শই চ্যাপলিনের মতো হ্যাট মাথায় হাজির হতেন৷ নিজের চ্যাপলিনের প্রতি অপার মুগ্ধতা মিউজিক কেরিয়ারের গোড়ার দিকে কয়েকটি সাক্ষাৎকারেও জানিয়েছেন। ২০০৬ সালে মুক্তি পায় তাঁর ‘মডার্ন টাইমস’ অ্যালবামটি৷ অ্যালবামের নাম চ্যাপলিনের বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘মডার্ন টাইমস’-এর নাম অনুযায়ী রেখেছিলেন। চার্লির ভক্ত, তবে অভিনয়ের জন্য নয়, তামাম দুনিয়া তাঁকে চিনেছে গায়ক হিসেবে। গানের কবি হিসেবে।
আরও পড়ুন-বাড়তি আরও ৪ শতাংশ ডিএ পেলেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা
তবে খুব সহজে সাফল্য পাননি। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে স্কুলের ট্যালেন্ট হান্ট প্রতিযোগিতা থেকে জঘন্য পারফরম্যান্সের কারণে বাদ পড়েছিলেন। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে পড়াকালীন তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পর্বে ছেদ পড়ে। প্রথম বর্ষের মিউজিক অ্যাপ্রিশিয়েশন কোর্সে তাঁর গ্রেড ছিল মোটে ডি প্লাস। ফলে খুব বেশি আশা করেননি কেরিয়ার নিয়ে। অল্প বয়সেই মা-বাবাকে হারিয়েছেন। কোনও এক অজানা কারণে নিজের শৈশব লুকোতে চাইতেন৷ লুকিয়েছিল নিজের নামও। তাঁর পারিবারিক নাম ছিল রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান৷ মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন তিনি নিজের নাম বদলে নেন। নতুন নাম রাখেন বব ডিলান। এই নামেই তিনি স্থানীয় ক্যাফেগুলোতে গান গাইতে শুরু করেন৷ পরে ১৯৬২ সালে নিউ ইয়র্কে এসে সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়ায় পুরনো নাম বাদ দিয়ে পাকাপাকি ভাবে নিজের নাম বব ডিলান রাখেন।
আরও পড়ুন-মেসির গোল, হার মায়ামির
হারমোনিকা বাজিয়ে পঞ্চাশ ডলার
তার আগেই, ১৯৬১ সালে মিনেসোটা ছেড়ে নিউ ইয়র্ক এসে কলম্বিয়া রেকর্ডসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে আসেন। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র কুড়ি। তরুণদের সঙ্গে অফিসিয়াল চুক্তিপত্রে যেতে হলে রেকর্ড কোম্পানিটি অভিভাবক স্বাক্ষর সংক্রান্ত নিয়ম জারি রেখেছিল৷ বব ডিলান রেকর্ড কোম্পানিকে জানিয়েছিলেন ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারানোর কথা৷ ফলে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। বন্ধু মহলে নিজেই নিজেকে নিয়ে একগাদা আজগুবি তথ্য ছড়িয়েছিলেন। তাঁর ওই সময়কার বন্ধুবান্ধবরা জানতেন তাঁদের অনাথ বন্ধুটি একটি সার্কাস কোম্পানিতে ছোট থেকে বড় হয়েছেন৷ যদিও তার কিছুদিন পরেই ‘নিউজউইক’ নামের একটি পত্রিকা তাঁর সমস্ত গোপনীয়তা ফাঁস করে দেয়। এরপর হয় অনুষ্ঠানিক নাম পরিবর্তন। কেউ কেউ মনে করেন ওয়েলশ কবি ডিলান থমাসের প্রতি মুগ্ধতায় নিজের নাম বব ডিলান রেখেছিলেন।
তিনি তাঁর প্রথম প্রফেশনাল রেকর্ডিং করেছিলেন একজন হারমোনিকা বাদক হিসেবে৷ ১৯৬০ সালে কিংবদন্তি আমেরিকান ফোক সিঙ্গার হ্যারি বেলাফন্তের অ্যালবামে হারমোনিকা বাজিয়ে পঞ্চাশ ডলার পকেটে পুরেছিলেন।
আরও পড়ুন-সপ্তাহান্তে চিন্তায় যাত্রীরা, আজ ও কাল বাতিল একাধিক লোকাল ট্রেন
গিটার হাতে ফোক ফেস্টিভ্যালে
১৯৬৫ সালে বসেছিল নিউপোর্ট ফোক ফেস্টিভ্যালের আসর। যেহেতু ফোক ফেস্টিভ্যাল, ঐতিহ্যবাহী আমেরিকান ফোক ইন্সট্রুমেন্ট সহযোগেই শিল্পীদের গান গাইবার কথা৷ কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে ইলেক্ট্রিক গিটার হাতে মঞ্চে উঠে গান গাইতে শুরু করেন চব্বিশ বছর বয়সি বব ডিলান। চারদিক থেকে তাঁকে লক্ষ্য করে কটূক্তি ছোঁড়া হয়৷ কেউ কেউ মঞ্চ থেকেই নামিয়ে দিতে চান। কোনওকিছুই থামাতে পারেনি ববকে। আপনমনে গেয়ে চলেন গান। একটা সময় মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ে সকলের মধ্যে। সেইদিন তিনি সংগীত জগতে নিজের উপস্থিতির কথা জোরদারভাবে জানান দেন।
পরবর্তী ছয় দশকে বব ডিলান শুধু আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্বের সংগীত রুচিতেই ভিন্ন ধারার সংযোজন ঘটিয়েছেন। তাঁর গান বুঁদ করেছে পৃথিবীর অসংখ্য দেশের লক্ষ-কোটি মুক্তিকামী মানুষকে৷ মনোরঞ্জন বলতে যেটা বোঝায় সেটা তাঁর গানে পাওয়া যায় না। তবে তাঁর গানে পৃথিবীর মানুষ খুঁজে পায় প্রেম, বেঁচে থাকার নতুন অর্থ।
তাঁর গান মূলত কথা নির্ভর। যে গানগুলো তাঁকে বব ডিলান বানিয়েছে তার মধ্যে ‘লাইক এ রোলিং স্টোন’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য৷ গানটি প্রথম যখন লেখা হয় তখন ছিল প্রায় কুড়ি পৃষ্ঠার একটি কবিতা। লেখার কয়েকদিন পরে আনমনে পিয়ানোর স্ট্রিং নিয়ে খেলতে খেলতে তিনি কবিতাটিকে সুরে বেঁধে খেয়াল করলেন, শুনতে মন্দ লাগছে না৷ সেই গান তাঁকে সারা পৃথিবীতে বিশেষ পরিচিতি দিয়েছে। ১৯৬৪ সালে ‘দ্য বিটলস’ যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, তখন আমেরিকায় কনসার্ট করতে এসে তাঁরা বব ডিলানের সঙ্গে পরিচিত হন৷ পরবর্তী সময়ে বিটলস ভাঙার আগে ও পরে ওই দলের চার সদস্যের প্রত্যেকেই বব ডিলানকে তাদের ‘মিউজিক্যাল ইন্সপিরেশন’ হিসেবে স্বীকার করেছেন৷
আরও পড়ুন-উত্তরপ্রদেশে আবারও তাপপ্রবাহের জেরেই কি মৃত্যু ১৩ ভোটকর্মীর?
প্রেরণা জুগিয়েছেন নারীরা
মানব মুক্তি এবং প্রতিবাদের গান ছাড়াও বব ডিলান অসংখ্য প্রেমের গান লিখেছেন। তাঁর বিখ্যাত প্রেমের গানগুলোর পেছনে প্রত্যক্ষভাবে যে নারীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি রয়েছে বলে মনে করা হয়, তিনি হলেন স্যুজ রোটোলো। এই নারী বব ডিলানের ক্যারিয়ারের শুরুর দিককার প্রেয়সী। নিউ ইয়র্কের বন্ধুবান্ধবদের ভিতর রোটোলোই সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেছিলেন ডিলানের প্রকৃত নাম। ডিলানের বেশ কিছু গানে সরাসরি রোটোলোর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। উডি গথ্রির সঙ্গে ডিলানের প্রেমের কথাও সর্বজনবিদিত। পাশাপাশি কিংবদন্তি শিল্পী এলভিস প্রিসলির জন্যও তাঁর অসম্ভব টান ছিল৷ প্রিসলি মৃত্যুর খবর শুনে বব ডিলান এক সপ্তাহ কারও সঙ্গে কথা বলেননি। এই নারীরা তাঁকে নানাভাবে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তাই তিনি সৃষ্টিশীল কাজে মেতে উঠতে পেরেছেন। বারবার সম্পর্কে জড়িয়েছেন বব ডিলান, সম্পর্ক ভেঙেছেন। বিয়ে করেছেন দু’জন নারীকে। একটাও টেকেনি।
গায়ক-গীতিকার পরিচয়ের বাইরে বব ডিলান লেখালিখি, ছবি আঁকাতেও হাত পাকিয়েছেন৷ ভাস্কর্য বানানো, ডিস্ক জকি হিসেবেও তাঁর বিশেষ সুনাম আছে৷ ১৯৭০ সালে তাঁর দশম স্টুডিও অ্যালবাম ‘সেল্ফ পোট্রেইট’-এর কভারে নিজের আঁকা ছবি ব্যবহার করেছিলেন। গত শতকে ষাটের দশকের মধ্যভাগে ডিলানের কবিতার বই ‘টারানটুলা’ প্রকাশিত হয়। এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর আত্মজীবনী।
চলচ্চিত্রে অভিনয়
চার্লি চ্যাপলিনের ভক্ত বব ডিলান ছিলেন একজন অসাধারণ অভিনেতা। বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন মানুষটির জীবনের এই দিকটি সম্পর্কে খুব বেশি মানুষ জানেন না। বলা যায় গানের আড়ালে তাঁর অভিনয় প্রতিভা চাপা পড়ে গেছে।
আরও পড়ুন-পূর্বস্থলীর বাগানে ফলন কম, আমের জোগান নিয়ে চিন্তিত চাষি
১৯৬৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ডোন্ট লুক ব্যাক’। এটাই বব ডিলান অভিনীত প্রথম ছবি। নিজের চরিত্রেই অভিনয় করেছিলেন তিনি। ১৯৭৮ সালের ছবি ‘রোনাল্ডো অ্যান্ড ক্লারা’। মূল চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন বব ডিলান। তিনিই লিখেছিলেন কাহিনি, বেঁধেছিলেন গান। ত্রিকোণ প্রেমের ছবিটি তৈরি হয়েছিল একটি ফ্রেঞ্চ ছবির ছায়া অবলম্বনে। অন্যান্য চরিত্রে পেশাদার অভিনেতা অভিনেত্রীদের পাশাপাশি দেখা গিয়েছে তাঁর মিউজিক টিমের কয়েকজন সদস্যকে। আমেরিকা ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুষ্টিমেয় প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি দেখানো হয়। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ২৩২ মিনিটের ছবিটি বক্স অফিসে তেমন সাফল্য পায়নি। কারণ হিসেবে মনে করা হয় ছবির দৈর্ঘ্য। যদিও সমালোচকরা প্রশংসা করেছেন। এই ছবিটি এক অন্য বব ডিলানকে চিনতে সাহায্য করে। উল্লেখ করতে হয় আরও একটি ছবির কথা। নাম ‘ইট অ্যান্ড ডকুমেন্ট’। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭২ সালে। এটা মূলত বব ডিলানের উপর তৈরি একটি তথ্যচিত্র। তাঁর সাবলীল অভিনয় এই ছবির বড় সম্পদ। সঙ্গে ছিলেন কয়েকজন পেশাদার অভিনেতা। ছবিতে ছিল তাঁর কয়েকটি গান। পরবর্তী সময়ে বব ডিলান ছবিটি নতুনভাবে এডিট করেছিলেন।
১৯৭২ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’। এই মিউজিক্যাল ছবিতে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন বব ডিলান। ১৯৮৭ সালের ছবি ‘হার্টস অফ ফায়ার’। ছবিতে একজন রকস্টারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ‘প্যাট গ্যারেট অ্যান্ড বিলি দ্য কিড’ তাঁর অভিনীত একটি উল্লেখযোগ্য ছবি। মুক্তি পেয়েছিল ১৯৭৩ সালে। ছবিটা ছিল নাটকীয়তায় ভরা। বব ডিলানের চরিত্রটা ছিল ছোট। তবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ‘নো ডিরেকশন হোম : বব ডিলান’ ২০০৫-এর ছবি।
এটা একটা তথ্যচিত্র। তাঁর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে। বব ডিলান অভিনয় করেছেন আরও কয়েকটি ছবিতে। প্রায় প্রতিটি ছবিতেই নিজের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন তিনি। ক্যামেরার সামনে ছিলেন যথেষ্ট স্বচ্ছন্দ। ছবিগুলো দেখে মনে হয়, শুধুমাত্র অভিনয় করলেও দারুণ সাফল্য পেতে পারতেন। কিন্তু সেই পথে তিনি পা বাড়াননি। আঁকড়ে ধরেছিলেন গানকে।
আরও পড়ুন-উন্নয়ন ও সমুদ্রসাথী প্রকল্পে কাঁথির মন জয় করেছেন মুখ্যমন্ত্রী
কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট
১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে উডস্টকে সিরিয়াস এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন বব ডিলান৷ সেই দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ দুই বছর পর্যন্ত তিনি জনসম্মুখে আসেননি। ওই সময়টাকেই বিবেচনা করা হয় তাঁর কেরিয়ারের সেরা টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে৷ স্বেচ্ছায় ঘরবন্দি বব ডিলান পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে সারাদিনই ব্লুজ, রক, কান্ট্রি সংগীতে মেতে থাকতেন৷ সেই সময় তাঁর লিরিকেও নিরীক্ষামূলক অনেককিছুর সংযোজন ঘটেছিল৷ নতুন পুরনো মিলিয়ে রেকর্ড করেছিলেন একশোরও বেশি গান৷ তবে এই দুর্ঘটনা নিয়ে অনেকের মনেই নানা প্রশ্ন রয়েছে৷ কেউ কেউ মনে করেন টানা শো, অ্যালবামের অমানবিক চাপ থেকে সাময়িক বিরতি নিতেই বব ডিলান নিজেই দুর্ঘটনার খবর রটিয়েছিলেন৷ নিজের আত্মজীবনীতে দুর্ঘটনার সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছিলেন— ইন্ডাস্ট্রির ইঁদুরদৌঁড় থেকে বের হওয়ার জন্য দুর্ঘটনা পরবর্তী বিরতির সময়টুকু তাঁকে দারুণভাবে সাহায্য করেছে৷
পেয়েছিলেন নিষেধাজ্ঞা
সারা পৃথিবীতে বব ডিলানের ভক্তের সংখ্যা অগণিত। তবে তাঁর সমালোচকের সংখ্যাও কম নয়। তাঁর গানের গলা নিয়ে অনেকেই বিদ্রুপ করেন। কেরিয়ারের শুরুর দিক থেকেই তাঁকে এই নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে৷ আধেক গান, আধেক আবৃত্তির মিশেলে অদ্ভুত পরিবেশনার জন্য ষাটের দশকে টেক্সাসের রেডিও স্টেশনগুলো থেকে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছিলেন। তবে কোনওকিছুই দমাতে পারেনি তাঁকে। কাজ করে গেছেন আপন খেয়ালে। গান বেঁধেছেন সময়ের কথা ভেবে, সমাজের কথা ভেবে। পৃথিবীর চিন্তাশীল মানুষরা তাঁর গান বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন। কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন। ছড়িয়ে দিয়েছেন জনসাধারণের মধ্যে। কারণ তিনি ছিলেন গণগায়ক। তাঁর গানের ধারা বাংলার মাটিতে আছড়ে পড়েছিল কবীর সুমন এবং অঞ্জন দত্তের হাত ধরে। সেই নয়ের দশকে। শ্রোতারা পেয়েছিলেন অন্যরকমের স্বাদ।
নোবেল পুরস্কার
কিছু কবিতা লিখলেও, বব ডিলান মূলত গান রচয়িতা বা সং রাইটার। গান রচয়িতা হিসেবে তিনিই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৬ সালে। এই স্বীকৃতি তাঁকে বিশেষভাবে উজ্জীবিত করেছিল। যদিও নোবেল পুরস্কার কমিটির এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন অনেকেই। উঠেছিল সমালোচনার ঝড়। তার আগেও তিনি পেয়েছেন সাহিত্য পুরস্কার। ২০০৮ সালে গীতিকার হিসেবে ‘পুলিৎজার’ সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্তির গৌরবও অর্জন করেছিলেন। তবে তাঁর জীবনে সবথেকে বড় পুরস্কার মানুষের ভালবাসা।
আরও পড়ুন-গ্রেফতার সেবক হাউসে হামলার মূল পাণ্ডা ধৃত
আবার বায়োপিকে
১৯৪১-এর ২৪ মে আমেরিকায় জন্ম বব ডিলানের। বর্তমানে তিনি ৮৩ বছরের ‘যুবক’। গান লিখছেন, সুর বসাচ্ছেন, গাইছেন। কিছুদিন আগেই তাঁর বায়োপিকের কাজ শুরু হয়েছে। শিরোনাম ‘আ কমপ্লিট আননোন’। ছবিতে বব ডিলানের চরিত্রে অভিনয় করছেন এই সময়ের জনপ্রিয় তারকা টিমোতে শ্যালামে। সিনেমার তাঁর ফার্স্ট লুকও প্রকাশ হয়েছে। ছবিতে তাকে গিটার হাতে গায়কের বেশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। ছবিটি পরিচালনা করছেন জেমস ম্যানগোল্ড। বায়োপিকের ছবি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এর আগেও বব ডিলানকে নিয়ে সিনেমা বানিয়েছেন নির্মাতারা। ২০০৭ সালে ‘আই অ্যাম নট দেয়ার’ নামের একটি সিনেমা বানান টড হেইনেস। সেখানে ডিলানের জীবনের কয়েকটি অধ্যায় দেখানো হয়েছে। ওই সিনেমায় ছয়জন অভিনেতা নানা বয়সের ডিলান হয়ে পর্দায় আসেন। অসংখ্য অ্যালবামের পাশাপাশি এইভাবেই তিনি ছড়িয়ে পড়েছেন, পড়ছেন। একটা শ্রেণির শ্রোতাদের কাছে তিনি ঈশ্বরের মতো। তাঁর গানের কথা যেন বাণী। তাঁর থেকে বড় গায়ক হয়তো পৃথিবীতে অনেকেই আছেন। তবে তাঁর মতো গান রচয়িতা তাঁর সময়ে আর কেউ আছেন কি না সন্দেহ। সত্যিই তিনি গানের কবি। যে-সময় মানুষ বিনোদনের পিছনে দৌড়য়, সেইসময় অনবদ্য কথা এবং নরম সুর ভাসিয়ে তিনি সারা পৃথিবীর মানুষকে নিজের দিকে টেনেছেন। এটা ঠিক— তাঁর মধ্যে স্ববিরোধিতা আছে। তিনি চরম বিতর্কিত। সেইসঙ্গে দারুণ জনপ্রিয়। তাঁর সমালোচনা করা যায়। কিন্তু তাঁকে অস্বীকার বা অগ্রাহ্য করার কোনও উপায় নেই।