প্রতিবেদন : চূড়ান্ত অব্যবস্থা। রেল সুরক্ষা তো পৌঁছে গিয়েছে তলানিতে! ট্রেন বাতিল এখন রোজনামচায় পরিণত করেছে রেল (Rail)। আর সময়সূচি? তার কোনও ঠিক-ঠিকানা নেই! যখন ইচ্ছা তখন চলছে ট্রেন। বাতিলও করা হচ্ছে ইচ্ছামতো। যাত্রী-পরিষেবার ধার ধারছে না রেল (Rail) কর্তৃপক্ষ। এই দশ বছরে মোদি সরকার তো রেলমন্ত্রকটাকে তুলেই দিয়েছে প্রায়। দেশের প্রধান যাত্রী পরিবহণ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত।
আর তার মাশুল গুনতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ রেলযাত্রীদের। এমনকী রেলের চূড়ান্ত গাফিলতির কারণে প্রাণও দিতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে। দিনের পর দিন রেলের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার বলি হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। শুক্রবার তেমনি আর একটি ন্যক্কারজনক ও নির্মম ঘটনার সাক্ষী থাকল রেলের শিয়ালদহ ডিভিশন। ভিড়ের চাপে ট্রেন থেকে পড়ে মৃত্যু হল এক যাত্রীর। মৃতের নাম মহম্মদ আলি হাসান আনসারি। হুড়োহুড়িতে একাধিক যাত্রী ট্রেনে উঠতে গিয়ে বা নামতে গিয়ে পড়ে আহতও হয়েছেন। অনেকে ট্রেনে উঠতে না পেরে ফিরে গিয়েছেন। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খল অবস্থা। লোকাল ট্রেন বাতিল থাকায় শুক্রবার সকাল থেকেই চরম দুর্ভোগে পড়েন শিয়ালদহের মেন এবং বনগাঁ শাখার যাত্রীরা। একের পর এক স্টেশনে ভিড়ের ঠেলায় নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। একটি ট্রেনে সওয়ারি প্রায় চারটি ট্রেনের যাত্রী। ফলে ভিড়ে ঠেলাঠেলি হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে ওঠা-নামা করতে হচ্ছে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ভিড় ট্রেনে ঝুলেই গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে যাত্রী সাধারণকে। যার ফলে নিত্যদিন ঘটে চলেছে একের পর এক দুর্ঘটনা।
আরও পড়ুন- বলেছিলাম, জলে নেমে কুমিরের সঙ্গে লড়াই নয়
শহরতলির লোকাল ট্রেনে যাত্রীধারণ পরিকাঠামো বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে রবিবার দুপুর ২টো পর্যন্ত শিয়ালদহ স্টেশনের ১ থেকে ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের মধ্যে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব রেল। ফলে বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু লোকাল। তার জেরে তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খল অবস্থা। যাত্রীদের অভিযোগ, কোন কোন ট্রেন বাতিল থাকবে, তা রেলের তরফ থেকে স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। ফলে চূড়ান্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। ব্যস্ত সময়ে ট্রেন না পাওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যাত্রীদের আরও অভিযোগ, ট্রেন বাতিল সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা হচ্ছে না স্টেশনে। এমনকী কোন ট্রেন কত দেরিতে চলছে তা নিয়েও কোনও তথ্য দিচ্ছে না রেল। ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে যাত্রীদের একাংশের প্রশ্ন, কেন বারবার শিয়ালদহ শাখায় এভাবে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে? মাস কয়েক আগেই দমদম স্টেশনে ইন্টারলকিং কাজের জন্য প্রায় টানা দু’দিন ট্রেন চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল শিয়ালদহ মেইন এবং বনগাঁ শাখায়। সেই সময় এই কাজ করা হয়নি কেন? করোনার সময় যাত্রী পরিষেবা বন্ধ ছিল। বন্ধ ছিল ট্রেন চলাচল। তখন কেন এই কাজ করা হল না? সপ্তাহের মাঝে ব্যস্ত সময়ে কেন রেল এই ধরনের কাজ করবে? যার জেরে বিঘ্নিত হবে যাত্রী পরিষেবা। কেন ন্যূনতম দায়িত্ববোধ থাকবে না রেল কর্তৃপক্ষের? রেল কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত দায়সারা মনোভাব নিয়েই চলছে বলে যাত্রীদের একাংশের অভিমত।
শিয়ালদহের মতো ব্যস্ত স্টেশনে পাঁচটি প্ল্যাটফর্ম বন্ধ। পরিকাঠামো বাড়াতে গিয়ে পরিষেবা তলানিতে পৌঁছে দিয়েছে রেল। শিয়ালদহ থেকে যাতায়াত করছে না বহু ট্রেন। শতাধিক ট্রেন বাতিল হয়েছে। যাত্রাপথও বদলেছে বেশ কিছু ট্রেনের। শিয়ালদহের মেইন ও কর্ড শাখার কিছু ট্রেন দমদম পর্যন্ত এসে যাত্রাপথ শেষ করেছে। খুব কম সংখ্যক ট্রেন শিয়ালদহ পর্যন্ত যাচ্ছে। যার ফলে নিত্যদিনের যাত্রীরা রীতিমতো ভোগান্তির মুখে পড়েছে। ভিড়ের চোটে ট্রেনের ভেতরে ঢুকতে না পারার দরুন চলন্ত ট্রেন থেকে যাত্রী পড়েও গিয়েছেন। টিটাগড় ও খড়দহের মাঝখানে ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে ঝুলতে থাকা এক যুবক ট্রেন থেকে পড়ে যান। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত যুবকের নাম মহম্মদ আলি হাসান আনসারি (২২)। তিনি টিটাগড়ের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরানিবাজার এলাকার বাসিন্দা।