মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সারা দেশে এক ব্যতিক্রমী নজির। তিন-তিনবারের মুখ্যমন্ত্রীই শুধু নন, তারও সঙ্গে বেশি সময় ধরে তিনি পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করছেন। এমনকী ২৩ বছর একটানা মুখ্যমন্ত্রী থেকেও প্রয়াত জ্যোতি বসুও এভাবে আম জনতার আশীর্বাদ আদায় করতে পারেননি। অনেকে তো এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দেখতে শুরু করেছে।
সদ্য সমাপ্ত ১০৮টি পুরসভার নির্বাচনে যে ‘সবুজ ঝড়’ দেখা গেল, তারও নেপথ্যে প্রধান কারণ, দিদির জনপ্রিয়তা। বিগত বিধানসভা নির্বাচনে যখন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গেল গেল রব তোলার চেষ্টা হয়েছিল, তখনও সাধারণ মানুষ বুঝিয়ে দিয়েছে, এই বাংলা ঘরের মেয়েকেই চায়। সুতরাং পুরভোটও বিজেপি-কংগ্রেস-সিপিএমকে খড়কুটোর মত উড়িয়ে দেবে, সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। গোটা রাজ্য এখনও সমানভাবে মমতাময় হয়ে রয়েছে। এটিই সবুজ ঝড়ের প্রথম কারণ।
কয়েকদিন আগে চারটি পুরনিগমের ফলালের পর বামফ্রন্টের এক কর্তাব্যক্তি বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়ন প্রকল্পগুলি এতটাই জনমুখী যে আমরা কেউ তাকে মোকাবিলা করতে পারছি না, সব ভোট হু হু করে চলে যাচ্ছে জোড়াফুলের ঝুলিতে, এমনকী আমাদের ঘরের ছেলে-বউরা পর্যন্ত আসছে রাজ্য সরকারের উন্নয়নের জোয়ারে। এই ঢেউই এমন সমর্থনের জোয়ারের দ্বিতীয় কারণ।
এই জয়ের তৃতীয় কারণ হতে পারে, তৃণমূল কংগ্রেসের জনসংযোগ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উন্নয়ন প্রকল্পগুলিকে সফল এবং সার্থক করতে দলের নীচের তলার সংগঠন নিবিড়ভাবে জনসংযোগ গড়ে তুলেছে। যার প্রতিফলন সব নির্বাচনে ইভিএমে পড়ছে।
চতুর্থত, বিরোধীরা পুরোপুরি ছন্নছাড়া। তারা পুরভোটের প্রচারে সরকার কিংবা তৃণমূল কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে কোনও যুতসই ইস্যুই তৈরি করতে পারেনি। এমনকী একই ইস্যুতে একই দলের বিভিন্ন নেতা-নেত্রী পরস্পর বিরোধী কথাবার্তা বলেছেন।
পঞ্চম ইস্যু ছিল, আনিস খানের রহস্যজনক মৃত্যু। এই মৃত্যুকে ঘিরে যে রাজনীতি বিরোধীরা করছে, মানুষ তাকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এরও কারণ, সংশ্লিষ্ট ঘটনার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে মানুষ আস্থা জ্ঞাপন করেছে।
ষষ্ঠত, সংখ্যালঘু ভোট। বিধানসভা ভোটে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নয়, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষ মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে। পুরভোটে সেই ছবির কোনও ব্যতিক্রম হয়নি। বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দি ভাষাভাষীদের একটা অংশ কিছুটা হলেও পদ্মফুলের বাক্সে গিয়েছিল। তাদের সিংহভাগ আবার জােড়াফুলে ফিরে এসেছে।
সপ্তমত, বাঙালি আবেগ। ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়ের পর বাঙালির চিন্তায় মননে মমতার যে প্রভাব তা আগে আর কারও ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মধ্যেও মমতার নেতৃত্বে যেভাবে সরকার একের পর এক উন্নয়নের কাজ করে চলেছে, সেটা বাঙালির আবেগে একটা নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।
অষ্টমত, কিছু নির্দল প্রার্থীকে নিয়ে মিডিয়া অস্বাভাবিক নাচানাচি করতে শুরু করেছিল। দেখা যাচ্ছে, তারা কোনও ছাপই ফেলতে পারেনি।
নবমত, মহিলাদের বড় অংশ বরাবরই লড়াকু ইমেজের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজেদের প্রতিনিধি বলে মনে করে। লক্ষ্মীভাণ্ডার প্রকল্প মহিলাদের সেই সমর্থন আরও সুদৃঢ় করেছে।
দশমত, রাশিয়ার আগ্রাসী মনোভাবে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয়রা বিপন্ন। নরেন্দ্র মোদির সরকার তাদের উদ্ধারে ব্যর্থ। এই ইস্যুতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই (Mamata Banerjee) সবচেয়ে সরব।
একাদশত, রাজ্যে শিল্পের ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ মা-মাটি-মানুষের সরকার নিয়েছে, তাতে রাজ্যের ছাত্র- যুবরা নয়া স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তারা মনে করছে, কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।
দ্বাদশত, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। মমতার এই স্বপ্নের প্রকল্পের মাধ্যমে শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। তাই দলমত নির্বিশেষে মানুষ পুরভোটেও ঢেলে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন।