৬ জুন যুবভারতীতে কুয়েতের বিরুদ্ধে বিদায়ী ম্যচ, সুনীল-যুগের অবসান

তবে আচমকা এভাবে আসবে, তা অনেকেই প্রত্যাশা করেনি। বৃহস্পতিবারের সকাল ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের মন খারাপ করে দেয়।

Must read

প্রতিবেদন : এমন সকাল আসবে, তা প্রত্যাশিতই ছিল। তবে আচমকা এভাবে আসবে, তা অনেকেই প্রত্যাশা করেনি। বৃহস্পতিবারের সকাল ভারতীয় ফুটবলপ্রেমীদের মন খারাপ করে দেয়। সকাল ৯টা ২২ মিনিটে নিজের এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি আবেগঘন ভিডিও পোস্ট করেন ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রী। ৯ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের সেই ভিডিও মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে ভারতীয় ফুটবল সার্কিটে। ভিডিও বার্তায় আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর ঘোষণা করেন সুনীল। আগামী ৬ জুন যুবভারতীতে কুয়েতের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বের ম্যাচ খেলবে ভারত। দেশের জার্সি গায়ে সেটাই ভারত অধিনায়কের শেষ ম্যাচ।

আরও পড়ুন-একদিনে ৩০ হাজারের বেশি রোগীকে পরিষেবা দিল এসএসকেএম

সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে পেশাদার ফুটবল জীবন শুরু করেছিলেন এ শহরেই। কলকাতা শহর সুনীলকে যেমন প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। তেমনই এ শহরের জামাইও তিনি। তাই হয়তো যুবভারতীতেই দেশের হয়ে বিদায়ী ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত। ক্লাব ফুটবলের ভবিষ্যৎ এখনও ঠিক না করলেও জুনের ৬ তারিখ সুনীল-সাগরে ডুববে যুবভারতী। বাইচুং ভুটিয়ার পর তিনিই যে হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় ফুটবলের মুখ।
১০০ আন্তর্জাতিক গোলের মাইলস্টোনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সুনীল এক্ষেত্রে ‘স্বার্থপর’ হতেই পারতেন। ফিটনেসের চূড়ায় দাঁড়িয়েও ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, লিওনেল মেসির পর ৯৪ গোলের মালিক ১৯ বছরের আন্তর্জাতিক কেরিয়ারে দাঁড়ি টেনে দিলেন। স্মৃতির পাতা উল্টে ১৫০ ম্যাচ খেলা ৪০ ছুঁই ছুঁই সুনীল অবসর-বার্তায় বলেন, ‘‘একটা দিন জীবনে কখনও ভুলতে পারব না। যে দিন প্রথম ভারতের হয়ে খেলতে নেমেছিলাম। অবিশ্বাস্য অনুভূতি। ম্যাচের আগের দিন সকালে জাতীয় দলে আমার প্রথম কোচ সুখি স্যর (সুখবিন্দর সিং) এসে আমাকে বলেছিলেন, প্রথম একাদশে তুমি রয়েছ। ভাষায় বোঝাতে পারব না সেই অনুভূতি কেমন ছিল।’’

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীকে কুৎসিত আক্রমণ অভিজিতের, কমিশনে যাচ্ছে তৃণমূল

সুনীল যোগ করেন, ‘‘২০০৫-এ পাকিস্তান ম্যাচের জার্সি হাতে পাওয়ার পর তাতে পারফিউম ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। ব্রেকফাস্ট থেকে লাঞ্চের টেবলের কথাবার্তা, ম্যাচে নামার আগের সব মুহূর্তগুলো মনে আছে। সেদিন অভিষেক ম্যাচে গোল, ৮০ মিনিটে গোল হজম। সব মনে রয়েছে আমার।’’
প্রথম ম্যাচের মতোই বাকি জীবন মনে থেকে যাবে শেষ ম্যাচও, বলছেন সুনীল। তাঁর কথায়, ‘‘এখন থেকে যে ক’দিন জাতীয় শিবিরে আমি ট্রেনিং করব, উপভোগ করব প্রতিটি মুহূর্ত। কুয়েতের বিরুদ্ধে ম্যাচটা খুবই কঠিন। তৃতীয় রাউন্ডে উঠতে হলে আমাদের জিততেই হবে। কিন্তু আমি কোনও চাপ অনুভব করছি না। গত ১৯ বছরে অসহ্য চাপ এবং দেশের হয়ে খেলার আনন্দ, দুটোই আমার সঙ্গে সবসময় ছিল। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনও ভাবতে পারিনি দেশের হয়ে এত ম্যাচ খেলতে পারব। সেটা পেরেছি বলেই গত এক-দেড় মাস অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছে। তখনই বুঝতে পারছিলাম, কুয়েতের বিরুদ্ধে পরের ম্যাচটা আমার শেষ ম্যাচ হতে চলেছে।’’

আরও পড়ুন-পাক ম্যাচে বড় রান

অবসরের সিদ্ধান্ত সবার আগে বাবা, মা এবং স্ত্রী সোনম ভট্টাচার্যকে জানান সুনীল। ভারতের সর্বকালের সেরা গোল স্কোরার বলেন, ‘‘আমার সিদ্ধান্ত জেনে স্বাভাবিক ছিল বাবা। কিন্তু মা এবং স্ত্রী কাঁদতে শুরু করে। বুঝিয়ে শান্ত করার পরেও দু’জনের স্বাভাবিক হতে সময় লেগেছে।’’
নিজের কেরিয়ারে সাফল্যের জন্য ভক্তদের আলাদা করে ধন্যবাদ দিয়েছেন। সুনীল বলেছেন, ‘‘মাঠে নেমে আমি ভাল খেললে দর্শকরা খুশিতে পাগল হয়ে যায়।’’ এরপরই ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেনের প্রশ্ন, ‘‘একটা বিতর্কিত কথা বলি?’’ সুনীলের জবাব, ‘‘আমি এমন কোনও খেলোয়াড়ের কথা জানি না যে, আমার মতো এত ভালবাসা পেয়েছে সারা দেশ থেকে।’’ তবে বিদায়বেলায় সমালোচকদের খোঁচা দিয়ে সুনীলের বার্তা, ‘‘যাঁরা আমার অবসর চেয়েছিলেন, আশা করি এখন তাঁরা খুশি হবেন।’’

Latest article