অলোক সরকার: বিরাটের জন্য ইডেনে যে ভিড়টা হয়েছিল, তিনি আউট হতেই সেটা একটু একটু করে খালি হয়ে গেল। কিন্তু যাঁরা থাকলেন, লাভবানই হলেন। রাহুলের চওড়া ব্যাট ধীরে ধীরে ভারতকে জয়ে পৌঁছে দিল। সাক্ষী থাকলেন হাজার তিরিশেক লোক। যাঁরা অনেকক্ষণ চিৎকার করে গেলেন, ‘জিতেগা ভাই জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা’।
আরও পড়ুন-কুলদীপে মুগ্ধ রোহিত, বোলারদের কৃতিত্ব দিলেন রাহুল
ভারতের জয়ের পর মিনিট দশেকের লেজার শো দেখল ইডেন। অন্ধকার মাঠে আলো আর শব্দের কারিকুরি। গ্যালারিতে মোবাইল টর্চ জ্বলে উঠল অনেকের। সবমিলিয়ে উৎসবের আবহ। সেটা এই ম্যাচ জয়ের জন্য যেমন, তেমনই ২-০ সিরিজ জয়ের জন্যও। শুধু এসবের মধ্যেও কোথায় যেন এক টুকরো মন খারাপের ছোঁয়া ছেয়ে থাকল পেলের প্রতি শ্রদ্ধায়। জায়ান্ট স্ক্রিনে কসমস ম্যাচের টুকরো টুকরো স্মৃতি। ভেসে উঠল লং লিভ দ্য কিং। এটাই মাহাত্ম্য ফুটবল সম্রাটের। ক্রিকেট আঙিনাতেও সমান প্রাসঙ্গিক তিনি, আজও।
শ্রেয়স ফিরে যাওয়ার পর ভারত কিন্তু চাপে পড়েছিল। যে চাপটা রাহুল আর হার্দিক কাটিয়ে দেন। ৭৫ রানের পার্টনারশিপ। কিন্তু ভারত যখন জয় দেখতে পাচ্ছে, তখনই উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন হার্দিক (৩৬)। একটা দিক অবশ্য তখনও আগলে রেখেছেন রাহুল। অক্ষর এসে যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গে।
আরও পড়ুন-জাকিরের কারখানায় আয়কর হানায় স্পষ্ট কথা তৃণমূল কংগ্রেসের
এই অক্ষরের উত্তরণ ঘটেছে রবীন্দ্র জাদেজার অনুপস্থিতিতে। কিন্তু অক্ষরও ফিরে গেলেন ২১ বলে ২১ রান করে। তখনও ৬০ বলে ২৫ রান দরকার ভারতের। এরমধ্যে হাফ সেঞ্চুরি হয়ে গেল রাহুলের। তিনি যখন কুলদীপকে নিয়ে খেলছেন, চাপ তবু ছিলই। পরে সেই কুলদীপ উইনিং শট খেলে ভারতকে ৪ উইকেটে জয় এনে দিলেন। রাহুল নট আউট থাকলেন ৬৪ রানে।
বিরাট কোহলি যখন ব্যাট করতে নামছেন, ইডেনে সেই আওয়াজটাই শোনা গেল যা একসময় শচীন তেন্ডুলকরের জন্য বরাদ্দ ছিল। পাঁচ বছর আগে ইডেনে শেষ একদিনের ম্যাচে ৯৩ রান করেছিলেন ভিকে। গুয়াহাটিতেও আগের ম্যাচে তিনি ১১৩ রান করে এসেছেন। এই ইডেনে বৃহস্পতিবার যদি হাজার পঞ্চাশেক লোক হয়ে থাকে, সেটা অনেকটাই কিং কোহলির জন্য। কিন্তু তাঁর রাজ্যপাট ৯ বল, ৪ রানের বেশি স্থায়ী হল না। ৯.৩ ওভারে বিরাট যখন লাহিরু কুমারাকে উইকেট দিয়ে গেলেন, ভারতের ৬২/৩ রান।
আরও পড়ুন-শিরডিগামী ভক্তদের বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষ, মৃত ১০
তার আগে দুটো উইকেট চলে গিয়েছে। ৩৩ রানে রোহিত (১৭) আর ৪১ রানে শুভমনের(২১)। শ্রেয়স (২৮) চেষ্টা করলেন। কিন্তু রজিথার জেন্টল মিডিয়াম পেস স্ট্যাম্পের সামনে শ্রেয়সের পা-কে পেয়ে যাওয়ায় স্কোর দাড়িয়ে গেল ৮৬/৪। ভারত তখন বেশ চাপে পরে গিয়েছে।
২১৬ রান সামনে রেখে ইনিংস শুরু করেছিলেন রোহিত আর শুভমন। রোহিত ইদানীং মার-মার করে শুরু করছেন। সেটা একদিন খেটে যাচ্ছে, একদিন উল্টো হচ্ছে। গুয়াহাটিতে ৮৩ করেছেন। এখানে হল না। অথচ দশ বছর আগে এই ইডেনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২৬৪ রান করেছিলেন রো-হিট। আর একটা হিট শোয়ের অপেক্ষায় ছিল ইডেন। কিন্তু পয়া মাঠ এদিন রোহিতকে খালি হাতেই ফিরিয়েছে।
ইডেন কিউরেটরই ঠিক। বৃহস্পতিবার স্পোর্টিং উইকেটে দেখল সবাই। এটা বোঝার জন্য ছোট্ট একটা তথ্যই যথেষ্ট। সিরাজ আর উমরান যেমন তিনটে আর দুটো উইকেট নিয়ে গেলেন, তেমনই তিন উইকেট নামের পাশে থাকল কুলদীপেরও। এই উইকেটে হালকা সবুজ আভা ছিল। ম্যাচের আগে ঘাস কেটে ফেলার পরও। এতে সিমাররা যেমন ছড়ি ঘোরালেন, ঠিক তেমনই রহস্য স্পিনে কামাল করলেন এই দলের একমাত্র চায়নাম্যান বোলারও। কুলদীপ ১০ ওভারে ৫১ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছেন।
আরও পড়ুন-ঘোষিত ফল বদলে দিতে পারি আমিই! জাহির করতে গিয়ে নন্দীগ্রাম-রহস্য ফাঁস করলেন আরএসি বিধায়ক
দাসুন শনাকা টস জিতে আগে ব্যাটিং নিয়েছিলেন। গুয়াহাটিতে ঠিক এই কাজটাই করেছিলেন রোহিত শর্মা। শুধু তফাত এটাই যে, রোহিতরা আগে ব্যাট করে বোর্ডে পৌনে চারশো রান তুলে দিয়েছিলেন। আর শ্রীলঙ্কা ৩৯.৪ ওভারে গুটিয়ে গেল ২১৫ রানে। কেন শ্রীলঙ্কার রান এর বেশি হল না? কারণ তাদের এই দলে বিরাট কোহলির মতো ব্যাটার নেই। ওপেনার নুয়ানিন্দু ফার্নান্দো ৬৩ বলে ৫০ রান করে গেলেন। এরপর কুশল মেন্ডিসের ৩৪।
আরও পড়ুন-আবাসের ফর্ম বিলি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর! প্রকাশ্যে বেআইনি কাজ
এই উইকেটে একটা লুকোনো গতি আছে। সিরাজ ঠিক সেটাকেই কাজে লাগিয়ে তুলে নেন আবিষ্কা ফার্নান্দোকে (২০)। শ্রীলঙ্কা তখন ২৯। কিন্তু এরপর নুয়ানিনদু আর মেন্ডিস মিলে দলের তাঁকে ১০২ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন। কিন্তু কুশল ফিরতেই পরপর উইকেট চলে গেল সিংহলীদের। ১ রান পরেই ধনঞ্জয় ডি’সিলভা (০) অক্ষরকে উইকেট দিয়ে গেলেন। সেখান থেকে দ্রুত ১২৬/৬। তারপর ১৭৭/৮। এখান থেকে শ্রীলঙ্কা যে ২১৫ পর্যন্ত গেল, সেটা দুনিথ ওয়ালাগের (৩২) জন্য। তার আগে জোড়া ১৭ রানের ছোট্ট অবদান ছিল চামিকা করুণারত্নে ও কাসুন রজিথার।