তিনি ভুলক্কাড়, ক্লায়েন্টের নাম ভুলে যান এমনকী কেসের ক্লু-ও, সেই সূত্র মনে রাখতে গান ভাঁজেন যা শুনে পাড়ার লোক অতিষ্ঠ। কিন্তু কেস সলভ করতে তাঁর দ্বিতীয় জুড়ি নেই। শুরু হয়ে গেল হইচই-এর নতুন ডিটেকটিভ থ্রিলার সিরিজ ‘গোরা’। চরিত্রাভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তীর ডেবিউ করলেন ওটিটিতে এই সিরিজের মাধ্যমে। পরিচালনায় নান আদার দ্যান সায়ন্তন ঘোষাল। ‘গোরা’ নিয়ে টেলিস্টেজের মুখোমুখি তিনি। কথা বললেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী
সম্প্রতি হইচইয়ে শুরু হল ডিটেকটিভ থ্রিলার ‘গোরা’। পরিচালক সায়ন্তন ঘোষালের ব্যোমকেশ সিরিজের পর এটা দ্বিতীয় গোয়েন্দা সিরিজ বলা যায়। ব্যোমকেশ সিরিজ বেশ চর্চিত এবং জনপ্রিয় হয়েছে যদিও ব্যোমকেশ একটি কালজয়ী চরিত্র। যার তুলনা অন্য কোনও কিছুর সঙ্গে চলে না। পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যের যাঁরা ডিটেকটিভ তাঁদের প্রত্যেকের একটা নিজস্ব স্টাইল আছে গোয়েন্দাগিরিতে। এই চরিত্রগুলো যখনই ছোটপর্দা বা বড়পর্দা বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এসছে মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু গোরা এই বাঁধাছকের থেকে একদম আলাদা। সবকিছুর বাইরের একটা চরিত্র। ‘যকের ধন’, ‘সাগরদ্বীপে যকের ধন’, ‘লালবাজার’ ইত্যাদি সিরিজ এবং ছবি পরিচালনা করে ইতিমধ্যেই সায়ন্তন খুব পরিচিত মুখ। এবার তিনি হইচই-এর মাধ্যমে গোরা বা গৌরব সেনকে আনলেন। ডিটেকটিভ সিরিজ, থ্রিলার, অ্যাডভেঞ্চার সবসময়ই তাঁর পছন্দের সাবজেক্ট। তাই পছন্দের ক্ষেত্রে নতুন নতুন চমক নিয়ে তিনি ফিরে আসেন দর্শকের সামনে।
আরও পড়ুন-পায়েস-পিঠে লাগে মিঠে
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে অন্য সব জনপ্রিয় ডিটেকটিভ চরিত্র যেমন, ফেলুদা, কাকাবাবু, ব্যোমকেশ এদের সঙ্গে গোরা কোথায় আলাদা। এই প্রসঙ্গে সায়ন্তন বললেন, গোরা একজন গোয়েন্দা কিন্তু গোয়েন্দাদের যে টিপিকাল স্বভাব যে স্টিরিওটাইপ আচরণ যে ম্যানারিজম হয় গোরার মধ্যে তার কোনওটাই নেই। খুব মজার একটি চরিত্র। গোরা খুবই ইনটেলিজেন্ট অথচ সে তার ক্লায়েন্টের নাম মনে রাখতে পারে না। যে কেস নিয়ে সে কাজ করছে তার ক্লু মনে রাখতে পারে না। তার জন্য সাহায্য নেয় কলেজের একটা সময়ের জুনিয়র কাম বন্ধু সারথির কাছে। যে কি না তার অ্যাসিসট্যান্টও। ছকভাঙা একটি চরিত্র গোরা। ভীষণ বাজে তার গানের গলা। গোরা যখন হারমোনিয়াম নিয়ে গান করে তখন পাড়ার লোক অতিষ্ঠ হয়ে যায়। কিন্তু ওই গানের কথাগুলো যদি মন দিয়ে শোনা যায় একটা সময় দর্শক বুঝবে ওই কথাগুলো অর্থহীন নয় সেগুলোর ভিতরে আসলে একটা মানে আছে। গোরা যাকে বলে ক্লু সংগীত। অর্থাৎ যে কেস নিয়ে সে কাজ করছে সেই কেসের ক্লুগুলো দিয়ে অদ্ভুত একটা গান বানিয়ে গাইতে শুরু করে মনে রাখার জন্য। এমন সব মজাদার অথচ সিরিয়াস বিষয়বস্তুর সংমিশ্রণ ঘটেছে গোরা চরিত্রের মধ্যে।
আরও পড়ুন-কল্পনা, তবু গল্প না
সায়ন্তনের মতে, গোরা চরিত্রের সবচেয়ে বড় ইউএসপি হল সে কোনও কেস নেয় না। পুলিশ যখন কোনও কেস সলভ করতে ব্যর্থ হয় তখন গোরার কাছে আসে এবং সেই কেসগুলোও যে-সে কেস নয় একেবারে সিরিয়াল কিলিংয়ের কেস। একটা খুনের রহস্যভেদে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তাঁর, চুরি ডাকাতির কেসে আগ্রহ নেই শুধু সিরিয়াল কিলিংয়ের কেসেই একমাত্র আগ্রহ। শুধু সেই কেসই ও সলভ করবে। ব্যোমকেশ আর গোরার তুলনা টানতে নারাজ পরিচালক কারণ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা। গোরা চরিত্রটির সৃষ্টি সাহানা দত্তের। গল্প এবং চিত্রনাট্য দুই সাহানা দত্তের।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী এই সিরিজের মাধ্যমেই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ডেবিউ করতে চলেছেন। গোরার নেপথ্যের পরিকল্পনা নিয়ে সায়ন্তন জানালেন, এই সিরিজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা তা হল অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তীকে ভেবেই গোরা চরিত্রটি তৈরি। সাহানা দত্তের সঙ্গে বহুদিন ধরে কাজ করার সুবাদে এমন একটা সিরিজ নিয়ে আলোচনা চলছিল। সাহানা দত্তের প্রোডাকশনে আরও দু-তিনটে কাজ করেছেন সায়ন্তন। পাশাপাশি এটা নিয়েও ভাবনা-চিন্তা ছিল। সিরিজের গল্প লেখা হয় অভিনেতা ঋতিক চক্রবর্তীকে ভেবেই। সিরিজটি দেখলেই মনে হবে চরিত্রটা যেন ওর জন্যই। ওর অভিনয় নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই।
আরও পড়ুন-এক দলিত মেয়ে এক আকাশ স্বপ্ন
ঋতিকদার ম্যানারিজম, ওকে ভেবেই সম্পূর্ণটা করা। অভিনেতা ঋত্বিক চক্রবর্তী না হলে গোরাই হত না। এ-ছাড়া গোরাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে অভিনেত্রী ঈশা সাহাকে। চরিত্রটির নাম সোমলতা। চমক আছে এই চরিত্রেও। সোমলতা যে কি না তাঁর নিজের জন্যই আসবে গোরার কাছে সে আসলে একজন স্লিপ ওয়াকার অর্থাৎ ঘুমের মধ্যে হাঁটে এবং অ্যাটাক করে। তাই সোমলতা মনে করে ও নিজে কয়েকজনকে খুন করতে পারে সেই খুন আটকাতেই তার আসা। এখান থেকেই শুরু। পরবর্তী ঘটনা বুঝতে হলে সিরিজ দেখতে হবে। আগামী যে এপিসোডগুলো আসবে সেগুলোয় দিনে দিনে ঈশার চরিত্রটা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। প্রথম সিজনে আটটা এপিসোড রয়েছে সেখানে গোরা চরিত্রটাকে এস্টাবলিশড করা হবে। ঈশা সাহা ছাড়া সিরিজে রয়েছে সুহত্র মুখোপাধ্যায় ও আরও অনেক নামী কলাকুশলী।
আরও পড়ুন-রাজ্যকে প্যাঁচে ফেলতে গিয়ে আবারও মুখ পুড়ল রাজ্যপালের
ঋত্বিক চক্রবর্তীর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা খুবই ভাল বলে জানালেন সায়ন্তন। তাঁর সঙ্গে এটা প্রথম কাজ সায়ন্তনের। অভিনেতার সম্পর্কে বললেন, খুব ডাউন টু আর্থ মানুষ ঋত্বিকদা (চক্রবর্তী)। খুব ফ্রেন্ডলি এবং রিসেপ্টিভ। কোনও বাড়তি কথা নেই, বাড়তি পরিশ্রম নেই। যতটা সিরিয়াস মনে হয় ওঁকে দেখে একেবারেই তা নন। ভীষণ আড্ডা গল্পের মধ্যে দিয়ে কাজটা কখন হয়ে গেছে বোঝাই যায়নি। সায়ন্তনের পরবর্তী পরিকল্পনায় রয়েছে তাঁর পরিচালিত তিনটে ছবি যার শুটিং হয়ে গেছে। রেডি। সেগুলো মুক্তির অপেক্ষায়। ‘স্বস্থিক সংকেত’ যার মধ্যে অন্যতম। টেনিদা বানানো হয়েছে সুরিন্দর ফিল্মসের সঙ্গে। সেটাও মুক্তির অপেক্ষায়। একটা নতুন ওয়েব সিরিজের কাজ শুরু হতে চলেছে সাইকোলজিকাল থ্রিলার। ওটা নিয়ে প্রস্তুতি চলছে।