পাহাড়ি নদী রঙ্গিত। যেমন সুন্দর নাম, তেমন অপরূপ সৌন্দর্য। হিমালয়প্রেমী পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে রয়েছে এই নদী। কখনও শান্ত, কখনও অশান্ত। বর্ষায় দেখা যায় রুদ্রাণী রূপ৷
তিস্তার সঙ্গে রয়েছে রঙ্গিতের গভীর আত্মীয়তা। ত্রিবেণী নামের একটি জায়গায় ঘটেছে দুই নদীর মহামিলন। এই বিশেষ জায়গায় বছরে একবার লেপচাদের উদ্যোগে বড়সড় উৎসব আয়োজিত হয়। সারা বছর বসে পিকনিকের আসর।
আরও পড়ুন-১ টিকাতেই ঘায়েল এইডস?
রঙ্গিতের তিরে সেজ উঠেছে বেশ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রাম। তার মধ্যে অন্যতম বিজনবাড়ি। নামের মতোই সুন্দর জায়গাটা। দার্জিলিং জেলার ছোট্ট এই জনপদে খুব কম সংখ্যক লোকের বসবাস। বিজন কথার অর্থ নির্জন। জনহীন। কোলাহলহীন। সেই অর্থে বলা যায় সার্থক নামকরণ। নির্জন নিরিবিলি প্রকৃতির পরম সান্নিধ্য যাঁরা উপভোগ করতে ভালবাসেন, তাঁদের জন্য আদর্শ জায়গা বিজনবাড়ি।
এই জায়গার অবস্থান পাহাড়ে ঘেরা একটি উপত্যকার মধ্যে। সমতল থেকে উচ্চতা প্রায় ২৫০০ ফুট। বিজনবাড়ির কিছু কিছু জায়গা থেকে দেখা যায় দার্জিলিং শহরের অবর্ণনীয় সৌন্দর্য।
যেদিকে তাকানো যায়, শুধু সবুজ আর সবুজ। নানান রকমের গাছ। এই ডাল থেকে ওই ডালে উড়ে বেড়ায় পাখি। এমনিতে নিরিবিলি নির্জন। তবে ভোরের আলো ফুটলে উপত্যকা মুখরিত হয়ে ওঠে পাখিদের কলতানে। নদীর তিরে চা অথবা কফি নিয়ে বসা যায়। দুচোখ খুলে রাখলে মন এবং চোখের আরাম। মনে হবে, এমন শান্তি পৃথিবীতে আর কোথায়!
আরও পড়ুন-লিভ টুগেদারে সন্তানও পাবে সম্পত্তি, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
সন্ধেবেলার পরিবেশ আবার একেবারেই অন্যরকম। মনে হবে, এ যেন এক মায়াবী জগৎ। নির্জনতা তখন যেন নিজেকেই ছাপিয়ে যায়। পেরিয়ে যায় শীর্ষবিন্দু। জ্যোৎস্নারাত এককথায় কবিতার মতোই সুন্দর। কতরকম তার ছন্দ। কাছে-দূরের আলোকালো পাহাড়গুলো যেন ছন্দের তালে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। হাত নেড়ে ডাকে। কান পাতলেই শোনা যায় রঙ্গিতের বয়ে যাওয়ার শব্দ। রাত যত বাড়ে, তত বাড়ে কুলুকুলু ধ্বনি।
বিজনবাড়িতে আছে বেশ কয়েকটি চা-বাগান। পাশাপাশি আছে আনারস, কমলালেবুর বাগানও। সুফলা ঊর্বর মাটিতে হয় আরও কিছু ফসলের চাষ। এই অঞ্চলের মানুষজন যথেষ্ট কর্মঠ। হাসি মুখে কাজ করে যান। বিজনবাড়ির পুলবাজার একটি অপেক্ষাকৃত জনবহুল এলাকা। এখানে আছে একটি বড় মন্দির। এই মন্দিরের সৌন্দর্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। ভিতরে আছে পাথরের শিব, দুর্গা, গণেশের মূর্তি। অনেকেই পুজো দেন। প্রার্থনা করেন। লোধমা বিজনবাড়ির আরও একটি জনবহুল এলাকা। এখানে গড়ে উঠেছে একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প।
বিজনবাড়ি উপত্যকার নানা প্রান্ত পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখা যায়। কোথাও নেই দূষণ, অতিরিক্ত শব্দ।
আরও পড়ুন-রাজ্য সরকারের ব্যর্থতার খতিয়ান তুলে বিজেপিকে “জনতার চার্জশিট” দিল তৃণমূল কংগ্রেস
বহু মানুষ রঙ্গিত নদীর তিরে বসে মাছ ধরেন। গরমের দিনেও এখানকার পরিবেশ রীতিমতো শীতল। বিশেষত রাতের দিকে। হবে না কেন, জায়গাটা হিমালয়ের কোলে, দার্জিলিং এখান থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে। সঙ্গে রাখবেন হালকা শীতের পোশাক। এখানকার বর্ষাও যথেষ্ট উপভোগ্য। উপত্যকার গাছের পাতায় বৃষ্টির ফোঁটা পড়লে চিরসবুজ প্রকৃতি সন্তুরের মতো বেজে ওঠে।
সাধারণ পর্ষটকদের পাশাপাশি ট্রেকিংয়ের ব্যাপারে যাঁদের আগ্রহ, তাঁরাও আসেন বিজনবাড়িতে। ছোট ছোট দলে আপনমনে ঘুরে বেড়ান। বিজনবাড়ির কাছেই আছে একটি ফুলবাজার। মনে করা হয়, এটা দার্জিলিং জেলার সবচেয়ে পুরোনো হাট। শুধু এই হাট দেখতে আসেন বহু পর্যটক। বিজনবাড়ির হিমা ফলসের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করেন অনেকেই। সব মিলিয়ে দুই-চারদিন এই পাহাড়ি গ্রামে থাকা যেতেই পারে। কারণ এমন একটি মনমুগ্ধকর জায়গায় গেলে হাতে সময় নিয়ে যাওয়াই ভাল। কীভাবে সময় পেরিয়ে যাবে বুঝতে পারবেন না।
আরও পড়ুন-দু’কোটির জল!
কীভাবে যাবেন?
উত্তরবঙ্গ বা অসমগামী যেকোনও ট্রেনে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি নামতে হবে। স্টেশনের কাছ থেকেই পাওয়া যায় বিজনবাড়ি যাওয়ার গাড়ি। রিজার্ভ করে নিতে হয়। তবে শিলিগুড়ির মহানন্দা ব্রিজের কাছ থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার জন্য পাওয়া যায় শেয়ার জিপ। খরচ মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যেই। এ-ছাড়া দার্জিলিং থেকেও বিজনবাড়ি যাওয়া যায়। অনেকেই দার্জিলিং বেড়াতে গিয়ে টুক করে ঘুরে আসেন। সকালের দিকে দার্জিলিং বাসস্ট্যান্ড থেকে বিজনবাড়ি যাওয়ার বাস ছাড়ে। চকবাজার থেকে শেয়ার গাড়িও পাওয়া যায়। ঘুম স্টেশন রোড থেকে বিজনবাড়ির দূরত্ব ২২ কিলোমিটার। ঘুম থেকেও পাওয়া যায় গাড়ি।
আরও পড়ুন-মালদহের আমের মৌতাত দিল্লিতে
কোথায় থাকবেন?
বেশ কয়েকটি ছোট রিসর্ট এবং হোম-স্টে রয়েছে বিজনবাড়িতে থাকার জন্য। তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য মেগিটার হোম-স্টে (মোবাইল ফোন : ৯৯৩২১-৭৮১১৩), রেলিং রঙ্গিত রিসর্ট (মোবাইল ফোন : ৯৮০০৩-১৫৩৪০)। এ-ছাড়াও আছে বিজ্জু ভ্যালে ভিলেজ রিট্রিট-সহ বেশকিছু থাকার জায়গা। পাবেন উন্নতমানের পরিষেবা। যাওয়ার আগে যোগাযোগ করে গেলেই ভাল। পাশাপাশি দেখতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইট।