করোনার উৎপত্তি
করোনা ভাইরাস হল একটি আরএনএ ভাইরাস যে ভাইরাস ১৯৬৫ সালে আবিষ্কৃত হয়। এরপর থেকে এটা কিন্তু ভাইরাসজনিত সর্দি জ্বরের মতই মানুষের শরীরে দেখা দিত। এটা নতুন কিছু কিন্তু নয় আমাদের জ্বর সর্দিকাশির মধ্যেই রয়েছে এই ভাইরাস। এবার ২০০৩ কি ২০০৪ সাল থেকে এই করোনা ভাইরাসটা মহামারির মত আঠাশটি দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন এর নাম হয় সার্স করোনা ভাইরাস। যার পুরো হল অর্থ সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে এই রোগকে কনটেইনমেন্ট করে দেওয়া হয় অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয় দেশগুলি।এরপর ২০১২ সালে হোয় মিডিলইস্ট রেপিরাটরি সিনড্রোম মার্স করোনা ভাইরাস দিয়ে। মোটামুটি ২০ শতাংশ মৃত্যু হার ছিল।কিন্তু তুলনায় সার্স করোনা ভাইরাসে সংক্রমণ বেশি হলেও মৃত্যুর হার ছিল কম।মোটামুটি ১০ শতাংশ। মার্স করোনা ভাইরাস শুধু মিডলইস্টের দেশগুলোতেই সীমাবদ্ধ ছিল ফলে বেশিদুর ছড়াতে পারেনি। নিয়ন্ত্রণ করে ফেলা সম্ভব হয়েছিল। এরপর একেবারে একলাফে ২০১৯ সালে চিনের ইউহান প্রদেশ থেকে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল গোটা পৃথিবীতে যাকে আমরা বলছি কোভিড নাইনটিন বা সার্স কোভ টু। এটা ২০১৯ এর ডিসেম্বরে আবিষ্কৃত হয় বলে এর নামের সঙ্গে নাইনটিন জুড়ে দেওয়া হল। এই ভাইরাস কীভাবে ছড়ালো সেই নিয়ে নানা মুনি নানা মত। কোনটাই কিন্তু প্রমাণিত নয়। অনেকের মতে চিনের ইউহান প্রদেশের খোলা বাজার যেখানে মাংস বিক্রি হয় সেখান থেকেই ছড়িয়েছিল এই ভাইরাস । কেউ বলে বাদুড়ের মাংস কেউ বলে প্যাঙ্গোলিনের মাংস থেকে হয়ত ছড়িয়ে ছিল এই ভাইরাস। অর্থাৎ ওই একইধরনের ভাইরাস একটু জেনেটিকালই অলটারেশন হয়ে ২০১৯ এ ফিরে এল। এরপরই ২০২০ তে এটাকে প্যানডেমিক ঘোষণা করা হয়।
করোনা সংক্রমণ কীভাবে হয়
এই ভাইরাস প্রথমে নাক দিয়ে ঢোকে। আমাদের নাকে উপরএকটা এপিথেলিয়াম আছে ওখানে সিলিয়া থাকে সেগুলোকে প্রথম ধরে নেয়। সেই জন্য প্রথমেই নাকে গন্ধটা চলে যায় যাকে ডাক্তারি পরিভাষায় অ্যানসমিয়া বলা হয়। এই ভাইরাসটি ওই ট্র্যাক্ট ধরে প্রথমে উপরের দিকে যায় তারপর ধীরে ধীরে নীচের দিকে নামতে শুরু করে। এবার এই ভাইরাস যত নীচের দিকে নামতে শুরু করে তখন বেশি অসুস্থতা শুরু হয়। অর্থাৎ কাশি ,জ্বর,শ্বাসকষ্ট থেকে আরও খারাপের দিকে যেতে থাকে যাকে আমরা চিকিৎসা পরিভাষায় বলি ARDS। আর যদি নীচে না নেমে উপরেই থাকে তাহলে শুধু হালকা জ্বর হল, কাশি হল , নাকে গন্ধ চলে গেল আবার দুদিন বাদে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে গেল।সার্সকোভ টু এর আর ফ্যাক্টরটা বেশি তাই ইনফেকশন রেটও বেশি তাই সংক্রমণও বেশি।
চিকিৎসা
এই ভাইরাসজনিত রোগের নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। প্রথমে তো এর চিকিৎসা সম্পর্কে কেউ কিছু জানতই না । এই রোগে মাইল্ড সিম্পটমেএর কোনও চিকিৎসাই লাগেনা। মডারেট টু সিভিয়র রোগীর ক্ষেত্রে তিন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ করছে একটা হল স্টেরয়েড অপরটি হল অক্সিজেনের ব্যবহার , আর তৃতীয়টি হল রেমিডিসিভির। প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক গাইডলাইন আরও যে সমস্ত গাইডলাইন আছে সেগুলো মেনে চিকিৎসা করা শুরু হল।ওটা মেনেই আমরা চিকিৎসক , হাসপাতাল, সরকার সবাই ঠিক করল কোন স্টেজে কীভাবে চিকিৎসা হবে কীভাবে এগবো।
প্রথম ঢেউ ও দ্বিতীয় ঢেউ
২০২০ তে প্যানডেমিক ঘোষণা করার পর ফার্স্ট ওয়েভ চললো , লকডাউন চলল। ফার্স্ট ওয়েভের সময় স্বাভাবিকভাবেই অতটা সচেতন আমরা ছিলাম না বা জানতাম না ফলে ছড়িয়ে পড়ল। আমাদের রাজ্য সরকার দ্রুত পরিকাঠামো গড়তে শুরু করলেন এই সময় থেকেই। আরজিকর মেডিকাল কলেজে তখন রোগী এলে করোনার সিম্পটম থাকলে আরটিপিসিআর টেস্ট করানো হত। রিপোর্ট পজিটিভ এলে কোভিড হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হত। আর যাঁদের আরটিপিসিআর টেস্ট নেগেটিভ তাঁদের ‘সারি’ অর্থাৎ সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস ধরে নিয়ে চিকিৎসা হত। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আরজিকর হাসপাতালের পরিকাঠামো আরও ভাল হল। দশ বেডের এইচ ডিইউ চালু হল তারপর সেটা বাড়িয়ে আরও কুড়িটা বেড হল।এরপর কোভিড সিসিইউ চালু হল।এই সময় থেকে এখানেও কোভিডের চিকিৎসা পুরোদমে শুরু হয়ে যায়।এই সময় এইচডিইউ সিসিউ মিলিয়ে ২৫০ টা বেড ছিল।
টেস্টিং
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে সব সময় আরটিপিসিআর টেস্টের স্যাম্পেল ঠিকমত কালেক্ট নাও হতে পারে। টেস্ট তিনদিনের মধ্যে হল স্যাম্পেল কালেক্ট করলে পজিটিভ আসবে এ…