প্রতিবেদন : দুর্গাপুজো শেষ। পুজোর মরশুমি বেড়ানোও তাই শেষ। প্রস্তুতি এবার শীতের। আর শীতের শুরু হোক বা শেষ ভ্রমণপিয়াসিদের পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকে জঙ্গল বা অভয়ারণ্য। তাই সময় থাকতেই এবার শুরু জঙ্গলের খোঁজ। তবে এর জন্য দূরে কোথাও নয়, সপ্তাহান্তে কলকাতার কাছেই দিনমানে ঘুরে আসতে পারেন পারমাদান অরণ্য। যার বর্তমান সরকারি নাম ‘বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য’। ১৯৮০ সালে এই জঙ্গলের নামকরণ হয় পারমাদান, পরে ১৯৯৫-এ এটি বিভূতিভূষণের নামে নামাঙ্কিত হলেও আগের নামেই স্থানীয় মানুষ চেনে। সড়কপথে গাড়িতে কলকাতা থেকে মাত্রই একশো কিলোমিটার রাস্তা। পূর্ববঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সীমান্তে ইছামতীর তীরে এই অরণ্যের অবস্থান।
যেতে-আসতে সময় বিশেষ লাগে না বলেই সারাদিন অরণ্য ভ্রমণের পর রাতে স্বগৃহে ফেরা যায় অনায়াসে। আর এ-কারণেই এই অভয়ারণ্য শীতের বনভোজনের স্পট হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়। তবে মূল অরণ্যশোভা পেতে আরও গভীরে যেতেই হবে। কারণ যেদিকেই তাকানো যায় সেদিকেই শুধু সবুজ আর সবুজ। বরং বলা ভাল সবুজ কতরকমের হতে পারে তার প্রদর্শনী। এ যদি হয় চোখের আরাম তা হলে কানের আরাম হল নানাবিধ পাখির কল-কাকলি। পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য। যাঁরা চান শুধুই অরণ্যের শোভায় নিজেকে হারাতে তারা তাই করতে পারেন আর যাদের নেশা বার্ডওয়াচিং তাঁরা দূরবিনে চোখ রেখে নিশ্চুপে অরণ্যের শ্বাস শুনতে শুনতে পাখির দুনিয়া খুঁজতে ব্যস্ত থাকতে পারেন। সারা বছরই পাখি থাকে এ অরণ্যে কিন্তু শীতে পরিযায়ীদের আগমনে জমায়েতটা আরও উচ্চমার্গের হয়।
আরও পড়ুন : আবহাওয়ায় উন্নতির সম্ভাবনা
ইছামতী এ অরণ্যের শোভা ক্রিসক্রসে পর্যবেক্ষণ করেছে। আপনিও আলগোছে অরণ্য-নদীর কাটাকুটি খেলা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন সদলে কিংবা একা। আগে নৌকোয় ঘোরা যেত। আপাতত বন্ধ আছে। নয়তো নদীপথে অরণ্যের শোভা আস্বাদন আরও মনোরম হত। সড়কপথে অভয়ারণ্যের গেটের সামনে পৌঁছে যাওয়ার পর আপনার বনচারী ভূমিকা শুরু। গেটের দু পাশ থেকেই শুরু অর্জুন, সেগুন, কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, রাধাচূড়ার ঘন বন। বনভোজনের স্পট ছাড়িয়ে আপনাকে ঢুকে পড়তে হবে আরও ভেতরে। একসময় রাস্তা দু-ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। একদিকের রাস্তা আপনাকে নিয়ে যাবে ফরেস্ট লজের দিকে অন্যদিকের রাস্তা রেস্ট হাউসের দিকে। এখানে একটা কথা বলে নেওয়া ভাল, বেড়াতে গেলে সচরাচর যেমন নিটোল ব্যাবস্থাপনা পাওয়া যায় তা কিন্তু এখানে নেই। ইছামতীর একেবারে তীরে যে ফরেস্ট গেস্ট হাউসটি রয়েছে সেটির অবস্থা তত ভাল নয়। বেশকিছু হোমস্টে ইদানীং তৈরি হয়েছে কিন্তু সীমান্তবর্তী অঞ্চল বলে সেগুলি রাতে থাকার জন্য কতটা নিরাপদ তার নিশ্চয়তা নেই। বিশেষত পরিবার নিয়ে এই ঝুঁকি না নেওয়াই ভাল।
তাই বলে দিনে বেড়ানোয় কোনও বাধা নেই।
আরও পড়ুন : রাজ্যে ফের চালু হল নৈশ বিধি-নিষেধ
অসংখ্য প্রজাপতি ও পাখি যেমন এই বনের বিশেষত্ব, তেমনই আছে প্রচুর লেঙ্গুর আর ঘেরাটোপের মধ্যে থাকা হরিণের দল। প্রায় দুশো হরিণ আছে এই জঙ্গলে। সকাল ন’টার পর থেকে এদের খাবার দেওয়া শুরু হয়, তাই অনায়াসে এদের দেখা পাওয়া যায়। তবে সাবধানতা অবলম্বন করা ভাল কারণ, জঙ্গলে অনেক সাপও আছে। নদীর শোভা উপভোগ করতে চাইলে বসে থাকতেও পারেন পাড়ে। দেখবেন নদীর অন্য পাড়ে কর্মব্যস্ত কৃষক কিংবা গাছ-গাছালির ফাঁকে শালিখ, চড়াই, টুনটুনি, কাকাতুয়া, কাঠবেড়ালি কিংবা নদীর মাছরাঙা, বক— কেউই আপনাকে বিশেষ পাত্তা দেবে না! তাই অলস বসে থাকতে পারেন নিজের মতো। এ বনে ভেষজ উদ্ভিদের চাষ হয়। আলাদা উদ্যান আছে তার জন্য। সে-ও দেখার মতো। তবে নিজে চিনতে পারবেন না। উৎসাহী যাঁরা তাঁরা গাইড নিয়ে জেনে নিতে পারেন ও বিস্মিত হতে পারেন পৃথিবী-বিখ্যাত কত গাছ এ-অরণ্যে পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে একেবারে দূষণমুক্ত শান্ত পরিবেশে নিজের ক্লান্ত মস্তিষ্ক আর পরিশ্রান্ত ফুসফুস তাজা হয়ে ফিরে আসবে এ নিশ্চয়তা দেয় পারমাদান। আরও একটা বাড়তি দ্রষ্টব্য চাইলে যোগ করতে পারেন এর সঙ্গে। আশপাশের সীমান্তবর্তী গ্রাম বা চাইলে ফেরার সময় পেট্রাপোল সীমান্তও দেখে নিতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
শিয়ালদা-বনগাঁ লাইনে বনগাঁ স্টেশন থেকে ২২ কিলোমিটার রাস্তা পারমাদান। কিংবা এসপ্ল্যানেড থেকে সিএসটিসি’র বাসে নলডুগরিতে নেমে ভ্যান, অটোতে পারমাদান। নলডুগরি থেকে পারমাদান তিন কিলোমিটার। আর যদি যেতে চান ব্যক্তিগত গাড়িতে তা হলে মেরেকেটে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার রাস্তা কলকাতা থেকে।
কোথায় থাকবেন?
সারাদিন ঘুরে অনায়াসে ফিরে আসা যায়। তাই থাকার কথা না ভাবাই ভাল। তবু উৎসাহী কেউ থাকতে চাইলে চাঁপাডালি ফরেস্ট রেস্ট হাউসের বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন। ফরেস্ট অফিসের যোগাযোগ : ০৩৩-২৫৫২০৯৬৮
বিশেষ তথ্য
সঙ্গে খাবার নিয়ে যাওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। পছন্দসই খাবারদাবার এখানে পাবেন না। আর জরুরি ওষুধপত্র সঙ্গে রাখবেন।