নয়াদিল্লি : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির চালু করা সরকারি ভ্যাকসিন সাইট থেকে আধার-প্যান-সহ একাধিক ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস । প্রতিবাদে সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস। করোনার সময় প্রধানমন্ত্রীর চালু করা কো-উইন অ্যাপ থেকে বিপুল পরিমাণে তথ্য মেসেজ প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামের মাধ্যমে ফাঁস হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, উচ্চপদস্থ আমলা-সহ বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের তথ্য ফাঁস হয়েছে। তৃণমূল নেতা ডেরেক ’ও ব্রায়েন, সুস্মিতা দেব, কংগ্রেসের পি চিদম্বরম, জয়রাম রমেশ, কেসি বেণুগোপাল, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের ব্যক্তিগত তথ্যও রয়েছে সেখানে ।
আরও পড়ুন-ঘরছাড়া ৫১ হাজার, শান্তিকমিটি বয়কটের ডাক কুকিদের
২০২১ সালে তৈরি এই কো-ইউন অ্যাপে প্রায় ১৫ লক্ষ নাগরিকের তথ্য রয়েছে। এইভাবে সরকারি প্ল্যাটফর্ম থেকে গ্রাহকদের তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়া উদ্বেগজনক বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাইবার সিকিউরিটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেকোনও ব্যক্তি যদি কো-উইন অ্যাপে দেওয়া ফোন নম্বর থেকে টেলিগ্রাম অ্যাপে যান তাহলে সব তথ্য প্রকাশ্যে এসে পড়ছে। এমনকী পাসপোর্টের তথ্য, জন্মতারিখ পর্যন্ত জানা যাচ্ছে।
এই তথ্য ফাঁসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলোড়ন শুরু হয়েছে। এই তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়ার কারণে সমস্যায় পড়বেন দেশের ১০০ কোটি মানুষ।
আরও পড়ুন-ইস্টবেঙ্গলে সই বোরহার
তার মধ্যে রয়েছে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি ৪ কোটি শিশু। সেইসঙ্গে ৪৫ বছরের বেশি ৩৭ কোটি নাগরিক এবং প্রবীণ নাগরিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সোমবার সকাল থেকেই বন্ধ ছিল টেলিগ্রাম অ্যাপ। সেখানে তৈরি হওয়া স্বয়ংক্রিয় অ্যাকাউন্টে কো-উইনে নাম নথিভুক্ত করা ব্যক্তিদের মোবাইল নম্বর দিলেই সমস্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে দেখানো হয়। টিকাকরণের সময় ব্যবহার করা সরকারি পরিচয়পত্র, টিকাকরণের স্থান, টিকা গৃহীতার নাম দেখানো হয় টেলিগ্রামে। খবর প্রকাশ হতেই নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় সরকার। সকাল থেকেই তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধী শিবির। বিরোধীদের অভিযোগ, দেশের জনগণের তথ্য সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ মোদি সরকার। বিষয়টি নজরে আসতেই তদন্ত শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন-আইনের অপব্যাখ্যা করে শান্তনু, মতুয়া সমাজকে বিভ্রান্ত করছেন
ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে এবং তার কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু হয়েছে। এই তথ্য কো-উইন নাকি অন্য কোনও সূত্র থেকে আসছে, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তথ্য ফাঁসের তীব্র সমালোচনা করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সাকেত গোখেল। ট্যুইটে মোদি-সরকারকে তীব্র নিশানা করেছেন তিনি। দেশের নাগরিকের গোপনীয়তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। গত বছরের জানুয়ারিতে ন্যাশনাল হেলথ অথরিটির সিইও আরএস শর্মা দাবি করেন, কো-উইন থেকে তথ্য ফাঁসের কোনও সম্ভাবনা নেই। যদিও আজকের ঘটনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। তবে এদিন সকালে তথ্য ফাঁসের খবর প্রকাশ হতেই টেলিগ্রাম থেকে বিষয়টি উধাও হয়ে যায়।
আরও পড়ুন-হাসপাতালে মেগা কিচেন
তৃণমূল মুখপাত্র সাকেত গোখলে দাবি করেছেন, রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান এবং জেডিউ সাংসদ হরিবংশ নারায়ণ সিং, শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউত-সহ আরও তিন সাংবাদিকের তথ্য ফাঁস হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, মোদি সরকারের তরফে দাবি করা হয় তথ্যের সুরক্ষা মজবুত রয়েছে। তাহলে কেন ভারতীয়দের ব্যক্তিগত তথ্য আধার নম্বর, পাসপোর্ট নম্বরের মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে? কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিষয়টি সম্পর্কে কেন অবগত নয়? এটা সারা দেশের কাছে উদ্বেগের বিষয়। এই বিভাগের মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। একইসঙ্গে তিনি আবার রেলমন্ত্রী। কতদিন তাঁর অকর্মণ্যতা আড়াল করবেন মোদি?
আরও পড়ুন-হাওড়ায় তৃণমূলের সাহায্যেই মনোনয়নপত্র পেশ
তথ্যফাঁস নিয়ে সর্বস্তরে শোরগোল ওঠার পর সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলা হয়, কো-উইন পোর্টাল নিরাপদ। তবে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।