প্রতিবেদন : বিজেপির গালে বিরাশি সিক্কার চড় কষাল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার শীর্ষ আদালত আম আদমি পার্টির প্রার্থী কুলদীপ কুমারকে চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচনে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। সেইসঙ্গে ৩০ জানুয়ারি ঘোষিত নির্বাচনের ফলও খারিজ করে দিয়েছে। শীর্ষ আদালত বলেছে, রিটার্নিং অফিসার অনিল মাসিহ যে আটটি ভোটকে অবৈধ ঘোষণা করেছিলেন তা বৈধ বলে গণ্য হবে। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রেজিস্ট্রার জুডিশিয়ালকে নির্দেশ দিয়েছে, আদালতের সামনে মিথ্যা বয়ান দেওয়ার জন্য রিটার্নিং অফিসার অনিল মাসিহর বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করতে হবে।
আরও পড়ুন-রাজ্যের উদ্যোগে মালদহে তৈরি হচ্ছে তিনটি হ্যাচারি
ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারা ৩৪০ ধারার অধীনে মাসিহর বিরুদ্ধে মিথ্যা বয়ান দেওয়ার অভিযোগে মামলা হবে। কারণ তিনি আগে আদালতকে বলেছিলেন যে ৮টি ব্যালটে ক্রস চিহ্ন তৈরি করা হয়েছিল কারণ সেগুলি বিকৃত হয়েছিল। পরে আদালত দেখে, ভোটের ফলাফল ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ব্যালটগুলি আদৌ বিকৃত হয়নি। শুনানির সময় প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় রিটার্নিং অফিসারকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন। এই মামলায় প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র।
আরও পড়ুন-সন্দেশখালিতে বিরোধীদের নাটক, প্ররোচনা; পুলিশকে ‘খালিস্তানি’ বলল গদ্দার, প্রতিবাদে শিখ-ধরনা
নির্বাচনে নির্লজ্জ জালিয়াতি করে ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি। বৈধ ভোট বাতিল করে বিজেপির প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করে চরম অগণতান্ত্রিক ও বেনিয়মের কাজ করেছিলেন বিজেপির দলদাস রিটার্নিং অফিসার। শেষমেশ এই মামলায় শীর্ষ আদালতের থাপ্পড় খেল নরেন্দ্র মোদির দল। ক্ষমতা দখলে নজিরবিহীন অনিয়ম, জালিয়াতি ও ঘোড়া কেনাবেচার পর্দাফাঁস করলেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চই। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের মূল নির্যাস হল: ১) চণ্ডীগড় মেয়র নির্বাচনে বাতিল হওয়া আটটি ভোট বৈধ গণ্য হবে। ২) মেয়র পদে জয়ী হবেন আপের প্রার্থীই। ৩) ভোট পরিচালনায় জালিয়াতি করে গণতন্ত্রকে হত্যা করার দায়ে আদালত অবমাননার মামলা হবে অভিযুক্ত রিটার্নিং অফিসার অনিল মাসিহর বিরুদ্ধে। শীর্ষ আদালতের এই রায়ে গত কয়েকদিনের টানাপোড়েনের অবসান হল। সেইসঙ্গে লোকসভা ভোটের আগে প্রথম কোনও নির্বাচনে জিতলেন ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী।
আরও পড়ুন-ফের সহায়তা কেন্দ্রে বিজেপির সন্ত্রাস
গত ৩০ জানুয়ারি বিজেপির প্রার্থী মনোজ সোনকারকে অন্যায়ভাবে চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচিত করা হয়। ভোট গণনার পর দেখা যায়, আপ-কংগ্রেস জোটের পক্ষে পড়া ৮টি ব্যালট বাতিল হয়েছে। পরে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় যে ৮টি ভোট বাতিল করা হয়েছে সেগুলিতে ইচ্ছাকৃতভাবে কালি দিয়ে তা ক্রসচিহ্ন লিখে তা বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। অভিযুক্ত রিটার্নিং অফিসার অনিল মাসিহ দীর্ঘদিন ধরেই বিজেপির সঙ্গে যুক্ত। বিজেপির পক্ষে রায় ঘোষণার পর আপের মেয়র পদপ্রার্থী আদালতে দায়ের করেন। আপ অভিযোগ তোলে, বাতিল হওয়া ৮টি ভোট তাদের পক্ষেই পড়েছিল। কিন্তু, তাকে বিকৃত করেন মাসিহ। মঙ্গলবার মামলার শুনানিতে দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের মৌখিক পর্যবেক্ষণ ছিল, প্রাপ্ত ভোট নতুন করে গোনা হবে এবং মাসিহ যে ব্যালটগুলি বিকৃত করেছিলেন সেগুলি বৈধ হিসেবেই গণ্য হবে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, এটা প্রমাণিত যে প্রিসাইডিং অফিসার ইচ্ছাকৃতভাবে ৮টি ব্যালট বাতিল করেছেন তা বিকৃত করে। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, গণতন্ত্রকে রক্ষা করা আদালতের কর্তব্য। শীর্ষ আদালতের রায় প্রকাশ্যে আসার পর আপ সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এরকম কঠিন সময়ে দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য সুপ্রিম কোর্টকে ধন্যবাদ।