সোমনাথ বিশ্বাস, আগরতলা: “সিপিআইএম এবং কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া মানে বিজেপির হাত শক্ত করা। বিজেপি যদি ৪০ শতাংশ ভোট পায়, তাহলে বাকি ৬০ শতাংশ বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে গেলে বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব নয়। সেখানে এই ৬০ শতাংশ ভোট যদি তৃণমূলকে দেওয়া হয় তাহলে ত্রিপুরায় পরিবর্তন সম্ভব।” আগরতলার সাংবাদিক বৈঠক থেকে বার্তা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Agartala- Abhishek Banerjee)।
অভিষেকের (Agartala- Abhishek Banerjee) মতে, পরিবর্তনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে ত্রিপুরা। সিপিআইএম ও কংগ্রেস দুজনেই বিরোধী আসনে থেকে ত্রিপুরায় বিন্দুমাত্র ছাপ ফেলতে পারেনি। অথচ তৃণমূল ত্রিপুরায় পা ফেলার পর এই বিজেপির পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বদল করতে হয়েছে। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে চোখ রাখলেই দেখা যায় বিজেপির একমাত্র শক্তিশালী দল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে তৃণমূল। সুতরাং বিজেপি বিরোধী সব ভোট তৃণমূলকে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এরপরেই ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করেন অভিষেক। বলেন, নেতিবাচক দিক থেকে প্রথম ত্রিপুরা। তথ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উত্তর-পূর্বে যদি রাজনৈতিক সন্ত্রাস কোথাও বেশি হয়- সেটা ত্রিপুরা। দেশের মধ্যে বেকারত্বের প্রথম ত্রিপুরা। বাংলায় যেখানে বেকারত্বের হার ৪ শতাংশ, সেখানে ত্রিপুরায় ১৮ শতাংশ।
সন্ত্রাসে বাম আমলকেও ছাপিয়ে গিয়েছে বিজেপি। তীব্র আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “সিপিএমের ২৫ বছরের সন্ত্রাসকে ৫ বছরে হার মানিয়েছে বিজেপি।” ত্রিপুরায় যা সন্ত্রাস তা ভারতের কোথাও নেই। ত্রিপুরার মানুষের প্রতি অভিষেকের আহ্বান, রুখে দাঁড়ান। না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। লাগাতার তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা চলছে ত্রিপুরায়। উপনির্বাচনের প্রার্থীদের উপরেও বারবার হামলা চালিয়েছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। এখনই সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে না উঠলে আরও অন্ধকারে চলে যাবে রাজ্য।
আরও পড়ুন: উত্তর-পূর্বের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বাড়ছে মৃত্যু
ত্রিপুরায় বিজেপি সরকার কোনও প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বলে তোপ দাগেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ভোটের আগে দেওয়া কোনও প্রতিশ্রুতি পালন করেনি বিজেপি। বলেছিল মিসড কলে চাকরি হবে, হয়নি। স্মার্ট সিটি আগরতলা একঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবে যায়। রাস্তার এমন হাল, যে অন্তঃসত্ত্বাকে কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয়। ২৪৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে আগরতলাকে স্মার্ট সিটি করার জন্য। সেই টাকা কোথায় গেল বিজেপি উত্তর দিতে পারবে? প্রশ্ন তোলেন অভিষেক। যাদের আপনারা ভোট দিয়েছেন ভেবে দেখুন তারা আপনার জন্য কী করেছে? প্রশ্ন তুলে অভিষেক বলেন, “সিঙ্গল ইঞ্জিন সরকার বাংলাকে দেখুন আর আপনাদের ডাবল ইঞ্জিন সরকার দেখুন”।
তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন, ২০১১, ১৬, ১৮-র তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) সঙ্গে ২০২২-এর তৃণমূল কংগ্রেসের আকাশ পাতাল পার্থক্য। এই তৃণমূল, বিজেপিকে (BJP) ত্রিপুরা ছাড়া করে ছাড়বে। যতদিন ত্রিপুরায় (Tripura) গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে ততদিন তৃণমূল মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে, কোথাও যাবে না। অভিষেক বলেন, আজকের তৃণমূল চোখরাঙানিকে ভয় পায় না। ত্রিপুরা ছেড়ে যাবে না। শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়াই করবে। মানুষের জন্য কাজ করার বিষয়ে বদ্ধ পরিকর তৃণমূল।
“বিজেপির সঙ্গে গুন্ডা রয়েছে, তৃণমূলের সঙ্গে মানুষ রয়েছে।” ত্রিপুরার মানুষ তৃণমূলকে বিশ্বাস করেছিল বলে পুরসভা ভোটে কুড়ি শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে দল- মন্তব্য অভিষেকের।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও কেন সেখানে চিকিৎসা পরিষেবা এত খারাপ! ত্রিপুরার মানুষকে কলকাতায় যেতে হয় চিকিৎসার জন্য। ত্রিপুরা-সহ উত্তর-পূর্বের মানুষ যাঁরা বাংলায় চিকিৎসার জন্য যান, তাঁদের জন্য সহায়তা কেন্দ্র খুলতে দলের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে বলেও জানান অভিষেক।
এদিনই সাংবাদিক বৈঠকের পর সুরমায় সভা রয়েছে অভিষেকের। কিন্তু সোমবার রাতে সেই সভা মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, বিজেপির এত ভয় কিসের? মানিক সাহা যদি ত্রিপুরায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান তাহলে বিরোধীদের আক্রান্ত হতে হচ্ছে কেন?
এদিন সাংবাদিক বৈঠক থেকে ফের কেন্দ্রের এজেন্সি দিয়ে বিরোধীদের ভয় দেখানোর বিষয় তোপ দাগেন অভিষেক। বলেন, ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে বিজেপি। তবে, তৃণমূলকে ভয় দেখালেও তারা রাস্তায় নেমে লড়াই করেছে।
উপনির্বাচনে সরকার বদল হবে না ঠিকই কিন্তু এই চারটি কেন্দ্রে উপনির্বাচনে লড়াই জোরদার করে, আগামী বছর ত্রিপুরা বিধানসভা দখল করাই পাখির চোখ তৃণমূলের। সেই কারণেই বিরোধী জোট এককাট্টা করার বার্তা দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।