মণীশ কীর্তনিয়া, ডায়মন্ড হারবার: ডায়মন্ড হারবার রবীন্দ্রভবনে রিভিউ মিটিং শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারীকে দুরমুশ করে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নিরাপত্তা নিয়ে শুভেন্দুর পাল্টা জবাব দিয়ে অভিষেকের তোপ, হিম্মত থাকলে সংসদে বিল আনুক বিজেপি। একই সঙ্গে মানসিক সুস্থতা কামনা করে হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন শুভেন্দুর মিথ্যাচারের। অভিষেকের কথায়, প্রথমে আমাকে আক্রমণ করত, তারপর আমার স্ত্রীকে। তাতেও লাভ হল না দেখে আমার ৩ বছরের শিশুপুত্রকেও টেনে আনছে। এরকম নির্লজ্জ বেহায়া-শিরদাঁড়া বিক্রি করে দেওয়া দু’নম্বরি লোক দেখিনি, যে এজেন্সি থেকে বাঁচতে অমিত শাহর জুতো চাটছে৷
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
সংসদে নিরাপত্তা বিল : তৃণমূল কংগ্রেস দলের নেতাকে সিকিউরিটি দিলে তার খরচ দেবে দল। বিজেপিও তাই করুক। প্রয়োজনে সংসদে এই সংক্রান্ত বিল আনুক বিজেপি। কারণ শুভেন্দুর দল তাদের নেতাদের সিকিউরিটি দিতে গিয়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচা করছে। শুভেন্দু নিজে পাঁচশো কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ঘুরছে সারদার টাকায়। ওর হিম্মত থাকলে রবিবার একটি হোটেলে আমার অনুষ্ঠানের ফুটেজ নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করুক। প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব। ওর পরিবারকে আক্রমণ করব না। নিজের শক্তিতে রাজনীতি করব।
শুভেন্দুর মিথ্যাচার : রীতিমতো হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট প্রকাশ্যে এনে বিরোধী দলনেতার কুৎসা ও মিথ্যাচারের কদর্য চেহারাটা আরও একবার তথ্যপ্রমাণ সহকারে দেখিয়ে দিলেন অভিষেক। রাজভবনে বিকেল সাড়ে চারটেয় শুভেন্দু বলেছলেন, আমি তো মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেকের নামে কিছু বলিনি। কিন্তু ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ৪৭ মিনিটে তাঁকে পাঠানো গেট ওয়েল সুনের রিপ্লাইয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে কুকথার বন্যা। এদিন মুখোশ খুলে গেল।
আরও পড়ুন-বিজেপির আদিবাসী প্রেম, গোপন কথাটি রবে না গোপনে…
অভিষেক ফোবিয়া : শুভেন্দুর মানসিক সুস্থতা কামনা করে অভিষেক বলেন, ওকে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখানো উচিত। আমি বাইরে বেরোলেই ও উল্টোপাল্টা বকছে। ও চায় আমি বাড়ি থেকে যেন না বেরোই। ওকে দু’হাত পেতে টাকা নিতে দেখেছে লোকে। আমাকে দেখেছে কেউ? অডিও আছে?
প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষমা চান : অখিল গিরি অন্যায় করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমা চেয়েছেন তার জন্য। দল সমর্থন করেনি। কিন্তু বীরবাহা হাঁসদা সহ আদিবাসী নেতাদের শুভেন্দু বলেছে জুতোর নিচে রাখে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অমিত শাহ ক্ষমা চাইবেন কি? হিম্মত আছে? নেই। কেন শুভেন্দু ক্ষমা চাইবে না? প্রশ্ন অভিষেকের।
আরও পড়ুন-বাড়িতে মৃগী রোগী! সচেতন হন
প্রসঙ্গ দিলীপ ঘোষ : পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে এজেন্সি চালাতে গিয়ে অর্পিতার দলিল পেয়েছিল। এজেন্সি শুধু প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীকে গ্রেফতার করে তাই নয়, অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতেও তল্লাশি চালায়। পরে গ্রেফতার হয়। প্রসন্ন রায়ের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে দিলীপ ঘোষের দলিল পাওয়া যায়। যে কারণে অর্পিতার বাড়িতে তল্লাশি হয়, সেই একই কারণে দিলীপ ঘোষের বাড়িতে কেন তল্লাশি হবে না? ৭ দিন সময় দিল। হতে পারে ওখানে টাকা থাকত, তথ্য ও প্রমাণও থাকত। এটা তো আদালতের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, এক্ষেত্রে কেন দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। কেন গ্রেফতার করা হবে না দিলীপ ঘোষকে?
অভিষেক বদলায়নি : আমি হরিশ মুখার্জি রোডের বাড়িতে থাকি না। আমি কালীঘাটের বাড়িতে থাকি। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জন্য কেউ যদি কাজ করতে চায়, তাকে সংসারের মোহমায়া থেকে বেরোতে হবে। আমার বাড়ির নিচে ২৫ বছর আগে যারা ঠাকুর বানাত আজও তারা বানায়। পুরনো ঢাকিরা আজও আছে৷ শুভেন্দুর কাঁথির বাড়ির মতো নয়। কেউ হাঁটতে পারবে না। যেতে পারবে না। গেলেই কোর্টে মামলা করছে। শুভেন্দু আমাকে শেখাবে জীবনযাপন!
আরও পড়ুন-অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাচ্ছেন জকোভিচ
কেন্দ্রের টাকা লাগবে না : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতদিন মুখ্যমন্ত্রী আছেন ততদিন বাংলা কারও কাছে মাথা নোয়াবে না। আমাদের অহংকারই আমাদের অলংকার। দিল্লির কাছে হাত পাতব না। ওদের বলে দিন, টাকা দিতে হবে না।
কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে বৈঠক শুভেন্দুর : আসানসোলে নির্বাচনের আগে পিয়ারলেস হোটেলে কোন কয়লা মাফিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছে শুভেন্দু বলব নাকি! হাটে হাঁড়ি ভাঙলেন অভিষেক। ফের বলেন, বিনয় মিশ্রের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও এখনও সামনে আনিনি। যেন বড় বড় কথা না বলে।
আরও পড়ুন-ফাইভ জি চালু করতে তৈরি রাজ্য
ডিসেম্বর ষড়যন্ত্র ও পঞ্চায়েত নির্বাচন : ডিসেম্বর নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বলেন, এটা যে বলছে তাকে বলুন খোলসা করতে। তবে আমি বলব, ওদের ৩০ জন বিধায়ক থাকবে না। বিজেপি ছেড়ে একমাত্র তৃণমূলে এসেছে। অন্য দলে যায়নি। আমরা দরজা খুলছি না তাই। ফাঁকা কলসির আওয়াজ বেশি। একইসঙ্গে তিনি বলেন, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ। কেউ যদি মনে করেন গায়ের জোরে ভোট করবেন তাহলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনকে সেই মতো বার্তাও দিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি আগে ৮০ হাজার বুথে প্রার্থী খুঁজুক। ওদের তো গন্ডগোল করাই কাজ। মানুষ যাকে ভোট দেবেন, সেই দলই জিতবে।