মণীশ কীর্তনিয়া, আলিপুরদুয়ার: বাংলার পাওনা টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র আর দিল্লিতে সেন্ট্রাল ভিস্টা বানাচ্ছে বিজেপি সরকার। আর হকের টাকা না পেয়ে ভুগছে বাংলার মানুষ। যারা আপনাদের ভোট নিয়েছে তারাই এখন আপনাদের টাকা আটকাতে দিল্লিতে চিঠি লিখছে। এবার বুঝুন কাদের ভোট দিয়েছেন! বৃহস্পতিবার আলিপুরদুয়ারের সভা থেকে এভাবেই আবারও বাংলার বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। এদিন সকালে কোচবিহারের তুফানগঞ্জের ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে আলিপুরদুয়ার চলে আসেন তিনি। অসম সীমান্ত ঘেঁষা বারোবিশায় প্রথম জনসভা করেন। তার আগে তুফানগঞ্জেই একপ্রস্থ জনসভা সেরে নেন। বারোবিশায় অভিষেককে স্বাগত জানাতে হাজির ছিলেন কাতারে কাতারে মানুষ। জনসভায় ঢোকার প্রায় এক কিলোমিটার আগেই গাড়ি থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করেন অভিষেক। সঙ্গে জনতা। এরপর দিনভর কুমারগ্রাম, কালচিনি চা-বাগান অঞ্চলে চলে জনসভা, জনসংযোগ। এরই মধ্যে খবর আসে আজ, শুক্রবার বিজেপি ১২ ঘণ্টা উত্তরবঙ্গ বন্ধের ডাক দিয়েছে। তা শুনে অভিষেক বলেন, কিসের বন্ধ। আমাদের কর্মসূচি চলবে।
মাশুল গুনছেন মানুষ : বৃহস্পতিবার পরপর জনসভা থেকে অভিষেকের তোপ, বাংলার ১০০ দিনের টাকা, আবাস যোজনার টাকা আটকে কেন্দ্র সরকার সেন্ট্রাল ভিস্টা বানাচ্ছে। সাংসদ জন বার্লা আর জেলার বিধায়ক-সহ বিজেপি নেতৃত্বকে নিশানা করেন। বলেন, যে জনপ্রতিনিধিকে ভোট দিয়ে দিল্লি পাঠালেন, তিনিই দিল্লিকে চিঠি লিখে আপনাদের টাকা আটকাতে বললেন।
এই প্রেক্ষিতেই জনতার উদ্দেশে অভিষেকের বক্তব্য, ’১৯-এ ধর্মের ভিত্তিতে মানুষ ভোট দিয়েছে আচ্ছে দিনের আশায়। কিন্তু হয়েছে বিভাজনের রাজনীতি। তাঁর কথায়, বাস্তবটা বুঝুন। তখন পৃথক রাজ্যের দাবিতে ভোট দিয়েছিলেন। এর দায় আপনাদের। নিজের বিবেককে প্রশ্ন করুন। ধর্ম বাড়িতে করুন। কিন্তু আপনার অধিকারের জন্য যে লড়বে তাকে ভোট দিয়ে জেতান।
খুশির খবর : আলিপুরদুয়ারের কর্মসূচিতে আরও দুটি কর্মসূচি যোগ হয়। তাতে বারোবিশার সভা সেরে কুমারগ্রামের চা-বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। বারোবিশায় কোহিনুর চা-বাগান খোলার সুখবর দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। সঙ্গে দৈনিক মজুরি বাড়ানোর খবরও। যার জেরে কুমারগ্রামের চা-শ্রমিকদের মধ্যে অভিষেককে ঘিরে প্রবল উচ্ছ্বাস। সেখানে বিরসা মুন্ডার মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে কাছের শিবমন্দিরে পুজো দিতে যান অভিষেক (Abhishek Banerjee)।
আরও পড়ুন: আজ জলপাইগুড়িতে জনসংযোগে অভিষেক
নিখোঁজ বিজেপির সাংসদ-বিধায়ক : যাঁকে সংসদে পাঠিয়েছিলেন জেতার পর তাঁর টিকি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিধায়কদের জিতিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন ৫টা জেলা নিয়ে আলাদা রাজ্য হবে। উত্তরবঙ্গ পৃথক রাজ্য হবে বলে ভোট দিয়েছিলেন। এখন বুঝতে পারছেন বিজেপিকে ভোট দেওয়া আর খাল কেটে কুমির আনা এক? অভিষেকের আবেদন, আগামিদিনে যখন ভোট দেবেন নিজের অধিকার বুঝে দেবেন। সঙ্গে আরও একবার তাঁর জনসংযোগ যাত্রার উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দেন।
আবাসে চ্যালেঞ্জ : কেন্দ্রীয় সরকার আবাসে দুর্নীতির কথা বলে টাকা ছাড়ছে না। শেষ যে তালিকা গিয়েছিল তাতে ১১ লক্ষ মানুষের নাম আছে। এই আলিপুরদুয়ার থেকে রয়েছে ৪০-৫০ হাজার মানুষের নাম। ওপেন চ্যালেঞ্জ করছি, এই জেলার একটাও ভুল নাম দেওয়া হয়েছে দেখাতে পারলে আর আলিপুরদুয়ার আসব না। আসলে ২১শে ভোটে হারের জ্বালা মেটাতে এগুলো বলছে। তাঁর কথায়, প্রধানমন্ত্রীকে হাত জোড় করে বলব, মানুষের টাকা আটকাবেন না। নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ, বিরোধী দলনেতা, সবাইকে বলব— যত গালাগাল দেওয়ার আমায় দিন। মানুষের টাকা ছাড়ুন। ওদের তো সকাল হয় অভিষেক বলে, রাত হয় অভিষেক বলে। দিল্লিতে ধরনার প্রস্তুতি চলছে এর মাঝেই।
বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ : বাংলার মত নেওয়ার যে কর্মসূচি নিয়ে তিনি এসেছেন তাকে বিরোধীরা নাটক বলে কটাক্ষ করেছে। অভিষেক এদিন পাল্টা জবাবে বলেন, অনেকে বলছে আমি নির্বাচনের আগে নাটক করছি। আমি ৬০ দিন আছি। আপনারা ৬ দিন করে দেখান। ফিরে যেতে হবে। আমি জেলায় জেলায় ঘুরব।