কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গিয়েছে। শুক্রবার এই নবজোয়ার কর্মসূচির শেষ দিনে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। তুলে ধরলেন এই দীর্ঘ যাত্রাপথে স্মরণীয় কিছু ঘটনাবলী। স্মরণ করলেন, মালদহে কর্মসূচি চলাকালীন ১২৭ বছর বয়সী মহিলা বিমলা সরকারে কথা। ৪৪, ৪৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় বাকুড়া, পুরুলিয়ায় কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়ের সেই স্মৃতি।
আজ নবজোয়ার যাত্রার শেষদিন কাকদ্বীপের সভা থেকে নিজের উপলব্ধির কথা তুলে ধরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বলেন, “কোচবিহার থেকে যেদিন শুরু করেছিলাম সেদিন এটা ছিল তৃণমূলের নবজোয়ার। আর ৬০ দিন পর আজ এটাই বাংলার মানুষের জনজোয়ারে পরিণত হয়েছে। গত ৬০ দিনে ৪৫৭৮ কিলোমিটার পথ কখনও হেঁটে কখনও গাড়িতে অতিক্রম করার পর এটাই আমার উপলব্ধি। ছোট বেলায় গুরুজন কাছে শুনতাম প্রকৃতিই নাকি সর্বশক্তিমান। কিন্তু এই ৬০ দিন পর দায়িত্ব নিয়েই বলছি, আমার উপলব্ধি, আমার অনুভূতি হল প্রকৃতি নয়, মানুষই সর্বশক্তিমান। কারণ ঝড় জল বৃষ্টি সব উপেক্ষা করে মানুষ আমাদের আশীর্বাদ করেছেন। পুরুলিয়ায় ৪৪-৪৫ ডিগ্রি গরম, বাকুড়া, বর্ধমান বিরভুম ঝাড়্গ্রামের মতো জায়গায় এই গরমে কাতারে কাতারে মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি। বেলা ২টোয় মা বোনেরা শঙ্খধ্বনি উলুধ্বনি দিয়ে আমাদের বরণ করেছেন। এই ভালোবাসা আমি কোথাও দেখিনি। মানুষের এই ভালোবাসাই প্রমাণ করেছে আগামী ৫০ বছর মানুষ তৃণমূলকে তাঁদের হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখবে।”
আরও পড়ুন: ২৪-এ মোদিকে দিল্লি ছাড়া করার হুঙ্কার তৃণমূল সুপ্রিমোর
অভিষেক আরও বলেন, “এই যাত্রায় ৬০ দিনের আগের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আর ৬০ দিনের পরের অভিষেক এক নয়, আলাদা। আমার রাজনীতি করার দৃষ্টিভঙ্গি পালটে গেছে। এই ৬০ দিনে কিছু ঘটনা আমার স্মৃতিতে সারাজীবন থাকবে। আমি মালদায় এক মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলাম। সেখানে রাস্তায় লাঠি হাতে এক মহিলাকে দেখি তাঁর বয়স ১২৭ বছর। আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করায় বললেন, ‘বাবা তোমায় আশীর্বাদ করতে এসেছি। আমি চাই বাংলায় আরও ৫০ বছর তৃণমূল থাকুক।’ তাঁর বয়স জিজ্ঞাসা করায় বললেন, ‘১২৭ বছর। ক্ষুদিরাম বসুর যখন ফাঁসি হয় তখন আমার বয়স ছিল ১২ বছর।” এছাড়াও অভিষেক বলেন, “ইটাহারের ছবি আপনারা দেখেছেন। কোনও জনসভা ছিল না, সাধারণ মানুষের ঢল। সেদিন গাড়ির মাথায় যদি না উঠতাম তাহলে পদপৃষ্ঠ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হত। রাস্তায় তখন ১ লক্ষ মানুষের ঢল। তারপর আমরা যেখানে গিয়েছি জনতার ভিড়ের রেকর্ডে একটা জেলা অন্য জেলাকে ছাপিয়ে গেছে। যেখানেই গিয়েছি মানুষ আমাদের আশীর্বাদ করেছেন।”
এদিন নবজোয়ার যাত্রার শেষদিন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যখন শুরু করেছিলাম তখন অনেকেই বলেছিল ৬০ দিন অনেক দূর, চারদিনও পারবে না। কিন্তু এই ৬০ দিনের একদিনও বাড়ি যাইনি, মায়ের মুখ দেখিনি। কিন্তু বাংলার লক্ষ লক্ষ মায়ের মুখ দেখেছি। তাঁরা এসে আশীর্বাদ করেছেন। এই ৬০ দিনে বৃষ্টিতে ভিজেছি গরমে ঘেমেছি কিন্তু থামিনি। এই ৬০ দিনে মাথা উচু করে হেঁটেছি কিন্তু বহিরাগতদের কাছে মাথা নত করিনি। এই ৬০ দিন হাতে জোড়া ফুলের পতাকা নিয়ে হেটেছি, অস্ত্র নিয়ে নয়। এই ৬০ দিনে রক্ত দান করেছি, ধর্মের নামে দাঙ্গা করে রক্ত নেইনি। আপনারা যেভাবে আমাদের ভালবাসা দিয়েছেন তাতে আমরা চির কৃতজ্ঞ।”