আক্রমণাত্মক তৃণমূলনেত্রী, প্রবল আত্মবিশ্বাসী অভিষেক

আর আমরা ২০২৪-এ দিল্লির বুক থেকে নরেন্দ্র মোদিকে সরিয়ে দেব। রাম-বাম-শ্যাম ও রামের বাচ্চাদের (আইএসএফ) একটা ভোটও নয়।

Must read

মণীশ কীর্তনিয়া, নামখানা: পঞ্চায়েত নির্বাচনে সার্বিক জয়ের লক্ষ্যে দলকে জোরকদমে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ৭৩ হাজার বুথের লড়াইয়ে বিপুল জয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে নেত্রীর বার্তা, বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস-আইএসএফের জামানত জব্দ করে দিন। আর আমরা ২০২৪-এ দিল্লির বুক থেকে নরেন্দ্র মোদিকে সরিয়ে দেব। রাম-বাম-শ্যাম ও রামের বাচ্চাদের (আইএসএফ) একটা ভোটও নয়।

আরও পড়ুন-১২৭ বছরের বৃদ্ধার আশীর্বাদ-সহ জনসংযোগ যাত্রার বিভিন্ন অভিজ্ঞতা বর্ণনা অভিষেকের

শুক্রবার নামখানার ইন্দিরা ময়দানের জনসভা থেকে দলনেত্রীর এই পঞ্চায়েত জয়-বার্তার পাশাপাশি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলীয় শৃঙ্খলায় জোর দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে কড়া বার্তা দেন। অভিষেকের সাফ কথা, দলের সিম্বল যার কাছে থাকবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সে-ই তৃণমূলের প্রার্থী। আর এই যুদ্ধের ময়দানে যারা দলের সঙ্গে গদ্দারি-বেইমানি করবে যতদিন তৃণমূল কংগ্রেস থাকবে ততদিন সেইসব বেইমানেরা দলে ঢুকতে পারবে না। শুক্রবার ছিল তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচির শেষ দিন। ২৫ এপ্রিল কোচবিহারের বামনহাটা থেকে শুরু হয়েছিল। গোটা বাংলা জুড়ে ঝড় তুলে দিয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নামখানার মেগা জনসভার মধ্যে দিয়ে শেষ হল।

আরও পড়ুন-২৪-এ মোদিকে দিল্লি ছাড়া করার হুঙ্কার তৃণমূল সুপ্রিমোর

বিরোধীদের একছটাক জমিও নয় : নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণের শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। তিনি প্রথমেই বলেন, আমি আজ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এখানে বক্তব্য রাখব না। যা বলব, তা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারপার্সন হিসেবে। বিরোধীদের তোপ দেগে নেত্রী বলেন, কারা বলছে সারা বাংলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী দাও! রাম-শ্যাম-সহ সব দল মিলে এসব করছে। এরপরই তাঁর চ্যালেঞ্জ, একটা রাজ্য দেখান যেখানে এত নমিনেশন হয়েছে? নেত্রীর সংযোজন, ৭৩ হাজার বুথ। আর ২টো বুথে গন্ডগোল নিয়ে চিৎকার করছ? এরপর পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, মোট ২ লাখ ৩১ হাজার মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস দিয়েছে ৮২ হাজার। আর বিরোধীরা মিলে ১ লাখ ৫০ হাজার মনোনয়ন দিয়েছে। এরপরেও তৃণমূল কংগ্রেসের নামে কুৎসা করবে? প্রশ্ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

আরও পড়ুন-প্রায় ১০০ শতাংশ মনোনয়ন: পরিসংখ্যান তুলে ধরলেন অভিষেক

প্রসঙ্গ ভাঙড় : ভাঙড়ের গন্ডগোল নিয়ে নেত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেস কিছু করেনি। বরং আমাদের দু’জন সহকর্মী মারা গেছে। এরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঙ্কার, বিরোধীরা বলছে প্রতিরোধ হবে। আমি বলছি, প্রতিরোধ হলে আমরা প্রতিবাদ করব।
কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ভোট : কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়েও এদিন বিজেপিকে তোপ দেগেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, মণিপুরেও তো কেন্দ্রীয় বাহিনী গেছে। তা-ও সেখানে মন্ত্রীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এ-রাজ্যেও একাধিক নির্বাচন কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে হয়েছে। তার পরেও কত প্রাণ গেছে? ২০১৩-তেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল। কিন্তু ৩৯ জনের মৃত্যু হয় সেবার। বাম আমলেও ২টি নির্বাচন— ২০০৩ সালে ৭০ জন ও ২০০৮ সালে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়। নিজেই পরিসংখ্যান তুলে ধরে উত্তর দিলেন।

আরও পড়ুন-শান্তি ফিরছেই না মণিপুরে, এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিল জনতা

বিজেপির বাচ্চা আইএসএফ : আসলে বাংলার বদনাম করার জন্য এসব করছে বিজেপি-সিপিএম-কংগ্রেস। আর একটা সঙ্গে জুটেছে বিজেপির বাচ্চা (আইএসএফ)। বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে গন্ডগোল পাকাচ্ছে।

সিপিএমের অতীত : যখন সিপিএম ক্ষমতায় ছিল তখন মানুষ মেরেছে। হাত কেটেছে। পা কেটেছে। মুখে জ্যান্ত কই মাছ ঢুকিয়ে দিয়েছে। বাম আমলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় কত লোক মারা গেছে— সিপিএম কীভাবে সন্ত্রাস করে রিগিং করে ভোট করেছে বাংলার মানুষ কী ভুলে গেছে! এরা এখন বড় বড় কথা বলছে।

আরও পড়ুন-শান্তি ফিরছেই না মণিপুরে, এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিল জনতা

ভয় পাবেন না : এরা আমাকে তো বটেই আমাদের পরিবারকেও গালাগাল দিচ্ছে। অনেক কষ্ট করে সংসার চালিয়েছি। কোনওদিন বলতে পারবে না কারও কাছ থেকে এক টাকাও নিয়েছি। আমি মাইনে নিই না। এখন নতুনরা তৈরি হয়েছে। আমাদের পরিবার যে যার মতো থাকে। এরা কী না বলে আমার নামে, অভিষেকের নামে। ভাষা-সন্ত্রাস চলছে। মনে রাখতে হবে তৃণমূল কংগ্রেস দুর্বল নয়। আমাকে যত পারিস গালাগাল দে কিন্তু বাংলার বদনাম করিস না! দুটো বুথে গন্ডগোল তাতেই বলে দিল সেন্ট্রাল ফোর্স! কেঁচকলা করবে। ভয় পাবেন না তো!

সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা : বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে ভাঙড়ে গন্ডগোল করছে আইএসএফ। নেতা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা একমাত্র বাংলা দিয়েছে। আর কোনও রাজ্য দিতে পারেনি।

আরও পড়ুন-উৎসাহ ও উদ্দীপনায় মনোনয়ন

তৃণমূলের সম্পদ : মঞ্চে-বসা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ফিরহাদ হাকিম, সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী, শামিমা শেখ-সহ বাকিদের দেখিয়ে নেত্রী বলেন, আমাদের পরের প্রজন্ম তৈরি। আরও অনেকে আছে। এরা আমাদের সম্পদ। তৃণমূলে যে সম্পদ আছে তা অন্য কোনও দলে নেই।

সরকারি স্কিম : আমাদের সরকার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, বিধবা ভাতা, সবুজসাথী, স্বাস্থ্যসাথী-সহ প্রায় ৮০টি সরকারি স্কিম চালু করেছে। বাংলার প্রতিটি ঘরে মানুষ কিছু না কিছু পাচ্ছে। আর কোনও সরকার এটা করতে পারেনি।

আরও পড়ুন-নবজোয়ার ৫০, চলছে জনস্রোত: আজ মুখ্যমন্ত্রী-অভিষেক সভা

অভিষেকের উপলব্ধি : অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন নবজোয়ার কর্মসূচিতে তাঁর ৬০ দিনের নানান অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। বলেন, আমি যতদিন বাঁচব আমার সঙ্গে ততদিন এই মুহূর্তগুলি থাকবে। তাঁর কথায়, বাংলার মানুষ তাঁদের জমায়েতে আবেগ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন আগামী ৫০ বছরেও তৃণমূল কংগ্রেসকে বাংলার বুক থেকে মোছা যাবে না।

Latest article