প্রতিবেদন : এই তৃণমূল নতুন তৃণমূল (Trinamool Congress)। মানুষকে উত্ত্যক্ত করলেই বহিষ্কার। উত্তর কলকাতায় জনতার উচ্ছ্বাসে, উদ্দীপনা এবং উৎসাহের ভিড়ে ভেসে গেলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। আত্মসমালোচনার ভঙ্গিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের তাঁর স্পষ্ট বার্তা, যদি কেউ ভাবে তৃণমূল করে খাওয়ার জায়গা, তাহলে ভুল ভেবেছে। ধান্দায় তৃণমূল কংগ্রেস করতে এলে বাইরের দরজা দেখিয়ে দেব। আর চিরদিনের মতো সেই দরজা বন্ধ থাকবে। দলের নাম করে কেউ ভয় দেখালে, চমকালে, দল তাকে প্রথমে বাইরের রাস্তা দেখাবে। তারপর যা হওয়ার হবে। কেউ যদি ভাবে আগে যা করেছি, এখনও তাই করব, তাহলে ভুল ভাবছে। নতুন রূপে, নতুন ধাঁচে তৃণমূল কংগ্রেস এগোচ্ছে।
বৃহস্পতিবার আক্ষরিক অর্থেই জনসমুদ্র নেমেছিল উত্তর কলকাতার বুকে। বিকেল সওয়া চারটেতে রাজাকাটরা থেকে মিছিল শুরু। মিছিল শেষ হয়েছে বউবাজার ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মোড়ে। সোয়া দু’ঘণ্টার রোড শো। প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার পথ। ১১টি ওয়ার্ড ছুঁয়ে গেল জনস্রোত। কলকাতার বুকে ইদানীং এমন রোড শো দেখা যায়নি। উচ্ছ্বসিত জেলা সভাপতি তাপস রায়, চেয়ারম্যান সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তার থেকেও বেশি আপ্লুত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, অভাবনীয়। ভাবতে পারিনি মানুষের ভালবাসা এভাবে উপচে পড়বে। উত্তর কলকাতার উন্নয়নের দায়িত্ব নিলাম। সেই উত্তর কলকাতা, যার নেতা-কর্মীরা সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন। আপনাদের কাছে কোনওদিন কিছু চাইনি। আজ চাইলাম। ৬০-এ ৬০ আসন দিন। মনে রাখবেন, প্রত্যেকটা ভোট দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
বৃহস্পতিবার কার্যতই মেজাজে ছিলেন অভিষেক। ঠারে ঠোরে কটাক্ষ করছিলেন। বললেন, পুরভোটে লড়বে কী? খেলা তো আগেই হয়ে গিয়েছে। ১০-০। পাগলা খাবি কী, ঝাঁজে মরে যাবি। অভিষেক আমজনতাকে উদ্দেশ করে বললেন, আপনার অ্যাম্বুল্যান্স দরকার, তৃণমূলকর্মী পাশে আছেন। আপনার লক্ষ্মীর ভাণ্ডার হয়নি, পাড়ার কাউন্সিলর রয়েছেন। আপনার গভীর রাতে কোনও দরকার পড়েছে, তখনও পাশে পাবেন তৃণমূল কর্মীদের। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, তৃণমূলই ভরসা।
আরও পড়ুন-Roopa Ganguly: ফেসবুকে বিদ্রোহ রূপার
তৃণমূল (Trinamool Congress) ক্রমশ রাজ্য ছাড়িয়ে অন্য রাজ্যে পৌঁছচ্ছে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই অভিষেক বলেন, তৃণমূল এখন আর দার্জিলিং থেকে দেগঙ্গার দল নেই। রাজ্য ছাড়িয়ে অন্য রাজ্যে যাচ্ছে। গোয়ায় ফেব্রুয়ারিতে ভোট। হয় ামরা সরকার গড়ব নইলে প্রধান বিরোধী হব। এর মাঝে কিছু নেই। ত্রিপুরায় মামলা-হামলার পরেও মাত্র তিন মাসে সেখানে ২৪ শতাংশের বেশি ভোট হয়েছে। মাথায় রাখবেন বিজেপিকে সরাতে হবে। অন্যরা আবেগ-ভালবাসাকে বিক্রি করতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস ওপথে হাঁটে না।
আমরা ইস্তাহারে যা বলার বলেছি। দশ বছর আগের কলকাতার সঙ্গে এই কলকাতার অনেক ফারাক। নেত্রী বলেছেন ২০০ বুস্টার পাম্পিং স্টেশন হবে। মহিলা নিরাপত্তায় বাংলা এক নম্বরে। ঝকঝকে রাস্তা। যাঁরা কিছুদিন বলছিলেন, বাংলায় দুর্গাপুজো হয় না, তাঁরা দেখলেন ইউনেস্কো বাংলার দুর্গাপুজোকে সেরার স্বীকৃতি দিয়েছে। কী বলবেন অমিত শাহরা? আমরা যা কাজ করেছি তার রিপোর্ট কার্ড দিয়েছি। মোদি সরকারের হিম্মত হয়নি রিপোর্ট কার্ড দেওয়ার।
বিরোধীরা আপনার কাছে এলে চা খাওয়ান, জল দিন। এটাই গণতন্ত্র। কলকাতা আর ত্রিপুরার পার্থক্য আছে তা মানুষকে বুঝিয়ে দিন। বাংলায় অনেক বসন্তের কোকিল আছে। ভোটের সময় আসে যায়। তারপর ফুড়ুৎ। বিজেপির সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হল ওরা প্রতিশ্রুতি দেয়, কথা রাখে না। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেন তাই করেন। সকাল সকাল ভোট দেবেন। নিজের ভোট নিজে দিন। গণতন্ত্রের উৎসবে মাতুন ১৯ ডিসেম্বরে।
বৃহস্পতিবার উত্তর কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের রোড শোর শেষে বক্তব্য রাখেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, তাপস রায়, কুণাল ঘোষ, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, অতীন ঘোষ, ডাঃ শান্তনু সেন, শশী পাঁজা, বিবেক গুপ্তা, শিখা মিত্র, শ্রেয়া পাণ্ডে।