মণীশ কীর্তনিয়া, মালবাজার: চা-বাগান শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে এবার বিজেপির সাংসদ-বিধায়কদের বাড়ি ঘেরাও করার ডাক দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছেন, প্রয়োজনে চা-শ্রমিকদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে দিল্লি অভিযান হবে। রবিবার জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজারে চা-শ্রমিক সমাবেশের মঞ্চে দাঁড়িয়ে একদিকে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি এবং অন্যদিকে চা-বাগান শ্রমিকদের স্বার্থে একগুচ্ছ পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার চা-শ্রমিকদের সম্মেলনের পরে এদিন আর আর স্কুলের মাঠে এই সমাবেশে ছিল উপচে পড়া ভিড়। তিলধারণের জায়গা ছিল না।
পিএফ-গ্র্যাচুইটি-ঘেরাও : প্রফিডেন্ট ফান্ড-গ্র্যাচুইটি নিয়ে চা-বাগান শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। বাগান মালিকরা অনেক সময়ই ইচ্ছাকৃতভাবে এসব জমা করেন না। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে চা-বাগান শ্রমিকদের এই সমস্যা না মিটলে প্রথমে জেলার পিএফ অফিস ঘেরাও করা হবে। তাতেও সমস্যা না মিটলে ১ জানুয়ারি থেকে এখানকার বিজেপির তিন সাংসদ ও বিধায়কদের বাড়ি ঘেরাও করবে তৃণমূল কংগ্রেস। হুঁশিয়ারি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee)। তিনি নিজেও কলকাতা থেকে আসবেন। দলের শ্রমিক সংগঠন ও অন্যান্য নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন, এখন থেকেই এই ইস্যু নিয়ে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামতে হবে। গেট মিটিং, লাইন মিটিং করতে হবে বাগানগুলিতে। এসবেও এই কাজ না হলে প্রয়োজনে চা-বাগান শ্রমিকদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে দিল্লিতে অভিযান হবে।
শ্রমিক স্বার্থে একগুচ্ছ পদক্ষেপ : ৬টি জেলার ৩ লক্ষ ৮৩ হাজার চা-বাগান শ্রমিকের হাতে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আইডেন্টিটি কার্ড তুলে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে সমস্যার মধ্যে থাকা বাগানগুলিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থাও করা হবে। পিঠে বাচ্চা নিয়ে চা-বাগানে মায়েদের কাজ করতে অসুবিধে হয়। আগামী ছ’মাসের মধ্যে বাগানগুলিতে বাচ্চা রাখার ক্রেশ তৈরি হবে। একটা ক্রেশে ৫০ জন করে বাচ্চা থাকতে পারবে। আপাতত ২৫০০ বাচ্চা রাখার মতো ক্রেশ তৈরি হলেও পরবর্তীকালে তা বাড়ানো হবে। আধার কার্ডের সংশোধনের ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ করবে নেতৃত্ব। বক্তব্য অভিষেকের।
আরও পড়ুন: তল্লাশির নামে অত্যাচার বিএসএফের, কটাক্ষ মন্ত্রীর
মুখ্যমন্ত্রী সব খোঁজ রাখেন : অভিষেক বলেন, আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা হয়েছে। তিনি কলকাতাতে থাকলেও সমস্ত খোঁজখবর রাখেন। চা-বাগানে যখন অফ সিজন চলে সে সময় পাতা কম ওঠৈ। তখন টাকা কাটা যায় শ্রমিকদের। আমি বাগান মালিকদের অনুরোধ করব, এই টাকা না কেটে হাজিরার ২৩২ টাকাই যাতে শ্রমিকরা পায় সেটা দেখুন। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে এদিন মঞ্চে উপস্থিত শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজন করার কথা বলেন অভিষেক।
সেচ-পরিশুদ্ধ পানীয় জল : কালচিনি, মাদারিহাট, ফালাকাটা, কুমারগ্রাম এইসব অঞ্চলে সেচের সমস্যা রয়েছে। সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক কয়েকদিন আগে ঘুরে দেখে গেছেন। আমার সঙ্গে কথা হয়েছে তাঁর। খাল কেটে জল এনে এই সমস্যার সমাধান করার একটা ব্যবস্থা করা হবে। একইসঙ্গে বাগানগুলিতে পরিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি মন্ত্রী পুলক রায়কে তিনি অনুরোধ করেছেন আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বঙ্গের এই অঞ্চলে এসে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। বক্তব্য অভিষেকের।
বিজেপিকে তোপ : এদিন বিজেপিকে তোপ দেগে অভিষেক বলেন, নিজেকে চা-ওয়ালা বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ এর আগে এখানে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন যে অসম আর বাংলার চা-বাগানের জন্য এক হাজার কোটি টাকা দেবেন। এখনও পর্যন্ত একটা টাকাও দেননি। ৭টা বন্ধ চা-বাগান খোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিছুই করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগান খোলার ব্যবস্থা করেছেন। ওঁরা শুধু ভাষণ দেন, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেশন দেন, তীব্র কটাক্ষ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আগেও বলেছি আবার বলছি, প্রতি দু’মাস অন্তর বঙ্গের এই অঞ্চলে আসব, বললেন অভিষেক। এদিন সমাবেশে আসার পথে সেবক কালী বাড়িতে পুজো দেন তিনি।