সংবাদদাতা, বারুইপুর : কেন্দ্রের প্রতিহিংসার রাজনীতি বারবার পরাস্ত হচ্ছে রাজ্যের উন্নয়নের কাছে। দিদির কাজের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হচ্ছে মোদি সরকার। আর উন্নয়নে নজির সৃষ্টি করে কেন্দ্রের কাছ থেকে সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নেওয়া যেন অভ্যাসে পরিণত করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। সেই তালিকায় সাম্প্রতিক সংযোজন কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ‘লক্ষ্য’–ভেদ। লক্ষ্য–র পুরো কথা ‘লেবার রুম কোয়ালিটি ইমপ্রুভমেন্ট ইনিশিয়েটিভ’। গতকাল লেখা হয়েছিল লক্ষ্য–র পুরস্কারপ্রাপক বসিরহাট জেলা হাসপাতালের কথা। আজ বারুইপুর মহকুমা ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল (Baruipur Super Speciality Hospital)। গোটা দেশের নিরিখে লক্ষ্য বিভাগে সেরার তকমা পেল দক্ষিণ শহরতলির এই হাসপাতাল। এর ফলে আগামী তিন বছর আর্থিক সাহায্য পাবে এই হাসপাতাল। যে অর্থ ব্যয় হবে হাসপাতালের উন্নয়নে ও পরিষেবায়।
বদলে গেল হাসপাতাল–চিত্র
বারুইপুর (Baruipur Super Speciality Hospital) ও আশপাশে তেমন বড় ভাল হাসপাতাল ছিল না। যা ছিল তা না–থাকার শামিল। ফলে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে প্রসূতি ও তাঁর সন্তানের জীবন বিপন্ন হওয়া ছিল রোজকার ব্যাপার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার গড়ার পরই চিকিৎসা পরিকাঠামোয় বিপ্লব এনে দিলেন। জীর্ণ, ধুঁকতে–থাকা জেলা হাসপাতালগুলোও হয়ে উঠল ঝকঝকে, আধুনিক। পরিসংখ্যান ও পুরস্কারই বলে দিচ্ছে ঠিক কোথায় তাদের অবস্থান।
অবনমন থেকে উত্তরণ
বাম আমলে এই হাসপাতালটি ছিল ব্লক হাসপাতাল। পরিকাঠামোর লেশমাত্র ছিল না। বর্তমান সরকারের আমলে ধীরে ধীরে মজবুত করা হয় পরিকাঠামো। বিশেষ জোর দেওয়া হয় প্রসূতি ও মাতৃত্ব বিভাগকে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসেবে বারুইপুর হাসপাতালে আধুনিক মানের প্রসূতি ও মাতৃত্ব বিভাগ। বিশেষ করে লেবাররুম ও ওটি তৈরি হয় আধুনিক মানের। কারণ প্রসূতিমৃত্যুর হার কমানোই ছিল মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: চড়িয়াল সেতু উদ্বোধনে অভিষেক জানালেন, ৬ মাসের মধ্যেই ব্রিজের বাকি কাজ শেষ হবে
প্রসূতিদের ভরসাস্থল
বর্তমানে মাসে গড়ে ৮০০ প্রসূতি সন্তানের জন্ম দেন। রেফারেল বড়জোর মাসে এক বা দুই। গত নভেম্বরে শেষবার এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছিল। প্রসূতি মায়েদের পাশাপাশি মহিলাদের মাতৃত্ব বিষয়ক সবরকমের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার হয়।
নির্ভুল লক্ষ্য–ভেদ
২০২২–এর ডিসেম্বরে বারুইপুর হাসপাতাল কেন্দ্রীয় সরকারের ‘লক্ষ্য’ শংসাপত্রের জন্য পরীক্ষায় বসে। রাজ্যের স্বাস্থ্যভবন থেকে প্রতিনিধিরা এসে পুরো পরিকাঠামো ঘুরে দেখেন। এই শংসাপত্রের জন্য প্রয়োজনীয় সবক’টি সূচকে গড়ে ৮৭ থেকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পায় এই হাসপাতাল। তারপরেই এই শংসাপত্রের জন্য নির্বাচিত হয়।
নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক–নার্স
এই পুরো ব্যবস্থাপনা চালাতে প্রসূতি বিভাগে পাঁচজন দক্ষ চিকিৎসক আছেন। রয়েছেন সুপ্রশিক্ষিত নার্সের দল। স্বাস্থ্যকর্মীরাও রীতিমতো দক্ষ। সবাই মিলে একটা দলগত শৃঙ্খলায় কাজ করেন।
দলগত সাফল্য
হাসপাতালের এই সাফল্যের কৃতিত্ব চিকিৎসক, নার্স থেকে সাফাইকর্মীদের দিয়েছেন সুপার ডাঃ ধীরাজ রায়। বললেন, আমরা চাইছি, বারুইপুর হাসপাতাল রাজ্যের মধ্যে অন্যতম মুখ হয়ে উঠুক। সরকারি সাহায্য পাওয়ার ফলেই পরিকাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। এই সাফল্য সবার।