পশ্চিমবঙ্গে মন্দির-মসজিদের সহাবস্থান আর এই সহাবস্থানের মধ্যে আমরা সবাই কাঁধে কাঁধ দিয়ে সকল ধর্মীয় উৎসব সমভাবে উপভোগ করেছি। প্রথমত গর্বের সঙ্গে আমি মনে করি আমি একজন ভারতীয়, দ্বিতীয়ত, আমি এক খাঁটি বাঙালি এবং তৃতীয়ত, আমি একজন ইমানদার দেশভক্ত মুসলমান। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল বিজেপি বেশ কিছু বছর ধরে কাশ্মীরে উগ্রপন্থী সন্ত্রাস, পাকিস্তানের আইএসআই ও পাকিস্তানের ধর্মীয় সুড়সুড়ি নিয়ে যে প্রচার চালাচ্ছিল তা জনগণ আর নিচ্ছে না এবং এই কৌশল দিয়ে আর ভোট-বাক্স ধরে রাখা যাবে না তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি (Bharatiya Janata Party) তাই এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য দাঙ্গা বাধানো একমাত্র কাম্য এবং এই পদ্ধতিতে ভারতবর্ষ তথা শান্তিপ্রিয় বাঙালিদের চিন্তা ও মননশীলতাকে অশান্তির বাতাবরণের মধ্যে ফেলতে কোমর বেঁধে লেগেছে। আসলে বিজেপি প্রমাণ করতে চেয়েছিল যে, পাকিস্তানে হিন্দুরা খুব বিপদে। কিন্তু সেটা নিল না ভারতবাসী। তাই হাওড়া ও রিষড়া দিয়ে প্রমাণ করতে চায় বাংলায় হিন্দুরা খুব বিপদে। সাম্প্রতিক হাওড়া ও রিষড়ার ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। রমজান মাস মুসলমানদের কাছে খুব পবিত্র এবং এই মাসে রোজার মাধ্যমে নিজেদের উৎসর্গ করেন সর্বশক্তিমানের কাছে। তাই সব ধরনের ঝগড়া ও অশান্তি থেকে দূরে থাকেন সব রোজাদার মানুষ। এই শান্তিময় পরিবেশে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি করে মানসিক ভাবে উত্তেজিত করার মোক্ষম চাল চেলেছে বিজেপি। সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যায় ইফতারি করে রোজাদারগণ যখন নামাজে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় ডিজে বাজিয়ে অস্ত্র উঁচিয়ে মুসলিমদের নামাজ পড়ায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে যাতে মুসলিমরা উত্তেজিত হয়ে ওদের ফাঁদে পা দিয়ে দেয় আর সেইখান থেকে ফায়দা তুলে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা যে বাংলার শান্তি ভীষণভাবে নষ্ট হচ্ছে।
আরও পড়ুন- বিএসএফের প্রহারে গ্রামবাসীর মৃত্যুতে গর্জে উঠল গীতালদহ
অনেককে বলতে শুনছি যে মহরমের সময় এক শ্রেণির মুসলিম তরবারি হাতে ঘুরে বেড়ায়। হ্যাঁ তবে সেটা প্রতীকী তরবারই। তারা নিজেরা নিজেদের বুকে আঘাত করে রক্ত বের করে সব বাঙালিকে জানাতে চায় যে সবার রক্তের রং একই। আর মহরমে মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা অংশ কোনও ধর্মস্থানের সামনে গিয়ে উদ্দাম নৃত্য করে না। ডিজে বাজায় না। পরিবেশ অশান্তি করে না। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে। কিন্ত হাওড়া ও রিষড়ার ঘটনা প্রমাণ করে যে পিরের মাজারের সামনে গিয়ে পতাকা উঁচিয়ে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলে, অস্ত্র নিয়ে উত্তালতা প্রমাণ করে যে তারা অশান্তির আগুন ছড়াতে গিয়েছিল। কিন্তু মমতাদির সম্মানের কথা অন্তরে রেখে এই রমজান মাসের পবিত্রতা বজায় রাখার জন্যে মুসলমানগণ বিজেপির ওই সম্প্রদায়িক আগুন নেভানোর জন্যে হাতে জলের বোতল নিয়ে প্রস্তুত ছিল। আসলে যে কোনও ভাবে বাংলাকে অশান্ত করে ভোট-বাক্স একটু উন্নত করতে যাচ্ছে বিজেপি। সম্প্রতি সাগরদিঘির ফলে বিজেপি (Bharatiya Janata Party) বুঝে গেছে যে তাদের জনসমর্থন তলানিতে এসে গেছে। আর এই রোজার সময় মুসলিমরা যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিতে চায় তার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ হল চাঁপদানির মনসুর আলি। যিনি রোজা রেখেছেন কিন্তু প্রতি বছরের মতো এ-বছরও রামনবমীর জন্য জয় শ্রীরাম লেখা পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত। তাঁর কাছে রাম-রহিম বলে আলাদা কিছু নেই তিনি শান্তির প্রতীক। ঠিক ফুটবল খেলায় গৌতমের পাস থেকে বল নিয়ে গোল করে আকবর, জাহির খানের বলে বিরাট কোহলি ক্যাচ ধরে বিপক্ষকে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠায়, বিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোয় সারারাত বিদ্যার দেবীর পাশে প্রহরী হয়ে রাত জাগে গৌতমের সঙ্গে সাবির, ইদের দিন নিনার পুরো পরিবার পায়েস খায় একই থালায় সিরাজের মায়ের সঙ্গে। এই সমন্বয় চলে আসছে আর চলবেও এই নজরুলের, রবিঠাকুরের বাংলায়। কবি নজরুল যেমন সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দিয়ে গেছেন একই সঙ্গে ইসলামিক গজল ও শ্যামা সংগীত লিখে। বেশ কিছুদিন আগে বিজেপি দিনহাটা, শান্তিপুর ও আসানসোল হারিয়ে মনোবল হারিয়ে হতাশা থেকে এই অশান্তির বাতাবরণ তৈরির জন্যে মরিয়া কিন্তু মমতাদির ভালবাসা স্নেহ মাথায় আছে সব বাঙালির। তারা এই চক্রান্তের উপযুক্ত জবাব দেবে ভোট-বাক্সে। পরিশেষে একটা কথা বলতেই হবে। শাসক বিজেপির মানসিকতার কারণেই গ্লোবাল হ্যাপিনেস ইনডেক্স অনুসারে বিশ্বের অন্যতম অসুখী দেশ ভারত, তালিকার ১৩৬টি দেশের মধ্যে ভারত ১২৫-এ। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।