লক্ষীপুজোর অবসরে মা লক্ষীর আগমন ঘটল পুরুলিয়ার মহিলাদের ঘরে । পুরুলিয়ার আদিবাসী স্বনির্ভর দল নিজেরা নানা কর্মের সঙ্গে যুক্ত তাঁরা স্বনির্ভর হয়েও আবারও নতুন করে নামলেন নতুন কর্মদ্যোগে । লক্ষীপুজোর শুভদিনেই পুরুলিয়ার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হলেন ষোলজন স্বনির্ভর লক্ষী। এদিন কাশিপুর থানার পাহাড়পুর গ্ৰামের দুই অনুচ্চ পাহাড়ের সানুদেশে তারা চালু করলেন ‘চা অবকাশ ‘নামে একটি চা টিফিনের দোকান। উদ্বোধন করলেন পুরুলিয়া জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। আদিবাসী অধ্যুষিত এই এলাকায় নতুন করে ব্যবসায় নামলেন আদিবাসী স্বনির্ভর দলের মহিলারা।
আরও পড়ুন: মুথুলক্ষ্মী রেড্ডি এক বহুমুখী অনন্যা
পাহাড়পুরকে পর্যটন মানচিত্রে নিয়ে আসার প্রকল্পটি নিয়েছিলেন জেলাশাসক রাহুল মজুমদার ও কাশিপুরের প্রাক্তন বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া। এই এলাকায় রঞ্জনডি গ্ৰামের কাছে যোগমায়া সরোবর এখন জেলার অন্যতম পর্যটনক্ষেত্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ার মতো রুক্ষ জেলাগুলির বন্ধ্যা জমিতে সবুজায়ন করতে , মাটির প্রাণকে ফিরিয়ে দিতে “মাটির সৃষ্টি ” নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছিলেন। এই প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করতে পাহাড়পুরের দুটি পাহাড় মনলোভা জুড়ে সবুজ বনভূমি গড়ে তুলেছে প্রশাসন। ওই এলাকায় রয়েছে প্রায় ষোলটি মহিলা স্বনির্ভর দল। যাঁরা পরিশ্রমি, উদ্যোগী। তাঁদের নিয়ে গড়া হয়েছে এই প্রকল্পটি। পাহাড়ে জলের সমস্যা খুবই ছিল। সেই জলাভাব দূর করতে গড়া হয়েছে জলাধার।
এই সবুজ ভূমে মহিলাদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য, তাঁদের জীবনের লক্ষ্য পূরণের জন্য এখানকার জেলাশাসক মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সেই “মাটির সৃষ্টি ” প্রকল্পের মাধ্যমেই দুশো হাঁসের বাচ্চা দিয়েছিলেন দলগুলিকে। মনসা পূজায় সেই হাঁস বিক্রি করেছেন স্বনির্ভর দলের মহিলারা। এর ফলে তাঁদের লাভ হয়েছে উনচল্লিশ হাজার টাকা। সেই টাকাতেই গড়া হয়েছে এই নতুন চা আর টিফিনের দোকান “চা অবকাশ”।
জেলাশাসক বলেন, স্বনির্ভর দলের মহিলারা তাকে জানিয়েছিলেন -” এই পাহাড়পুরে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটকই একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রায়শই চায়ের দোকান খোঁজেন। তাই শুনে আমি ওদের এইরকম একটা দোকান দিতে বলি”। এখান থেকেই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের শুরু।
তখন ওই এলাকার ষোলটি স্বনির্ভর দল থেকে ষোলজন শিক্ষিতা, কমবয়সী মেয়েকে নিয়ে সেই লক্ষ্যে গড়া হয় “হাসা গরান তিরলা সেমলেট”যার অর্থ হল (মাটির সৃষ্টি মহিলা সমিতি) নামে নতুন একটি স্বনির্ভর দল। তারাই গড়ে তুলেছে এই দোকানটি। খড়ের চাল এবং মাটির তৈরি এই দোকানটি পর্যটকদের চা পান করানোর পাশাপাশি এক অপূর্ব বিশ্রামের মুহুর্ত দেবে যেখানে খানিক জিরিয়ে প্রকৃতির শোভা ,শান্ত পরিবেশকে উপলব্ধি করবেন তাঁরা।
উদ্যোগী মেয়েদের মধ্যে অন্যতম প্রতিমা টুডু, পূর্ণিমা সিং সর্দার বলেন, এখন চা তেলেভাজা, বিস্কুট দিয়ে শুরু করা হল। ভবিষ্যতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে এই দোকানে আমরা পর্যটকদের দুপুরের খাবারও দেব।
আরও পড়ুন: উত্তর মেরুর শেষ বরফেও ফাটল, বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা
কাশিপুরের বিডিও সুপ্রিম দাস সবসময় মহিলাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া। এদিন তিনি বলেন, অযোধ্যা পাহাড়েও স্বনির্ভর দলগুলির হাত ধরে পর্যটন শিল্পে লক্ষীলাভ হবে। তার জন্যও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।অযোধ্যা পাহাড়েও শতাধিক স্বনির্ভর দল রয়েছে। কিছুদিন আগে তৃণমূল নেতৃত্ব জেলা মহিলা তৃণমূলের সভানেত্রী করেছে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ নমিতা সিং মুড়াকে। এদিন তিনি বলেন, পাহাড়পুরের মতো অযোধ্যার বিভিন্ন গ্ৰামেও স্বনির্ভর দলগুলি হোম স্টে করবে। সরকার ও দল তাদের পাশে রয়েছে। তিনি জানান, ইতিপূর্বে মুখ্যমন্ত্রী পথসাথী গুলি পরিচালনার ভার স্বনির্ভর দলের হাতে দিয়েছেন।তাতে সাফল্য এসেছে। একদিকে সবুজায়ন ,জলধারনের জন্য পুকুর খনন, অন্যদিকে পর্যটন -দুটি ক্ষেত্রেই মহিলা স্বনির্ভর দলগুলি যুক্ত হলে পর্যটনেও গ্ৰাম্য ছোঁওয়া লাগবে। নতুন আকর্ষণ হবে গ্ৰামীণ পরিবেশে থাকা।
জেলাশাসক বলেন, “মাটির সৃষ্টি ” প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু সবুজায়ন করা হচ্ছে তা নয়, বন্ধ্যা জমিতে সেচের ব্যবস্থা করে সেখানে সবজি ও ফল চাষেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। তার ফলে এই প্রকল্প থেকে নিয়মিত আয়ের সুযোগ পেয়েছেন মানুষ। এর পাশাপাশি অরন্য পর্যটনের বিস্তারও ঘটবে যা আগামীদিনে সমগ্র পুরুলিয়া জেলার পর্যটন মানচিত্রকেই বদলে দেবে।