কফি ও চা বাগানে ঘেরা চিরসবুজ পাহাড়ি অঞ্চল কুর্গ (Coorg)। নির্জন, নিরিবিলি পরিবেশ। পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটকের এই জায়গাটির সঙ্গে প্রকৃতিগতভাবে স্কটল্যান্ডের আশ্চর্য মিল। তাই কুর্গকে বলা হয় ভারতের স্কটল্যান্ড। পর্যটকরা দেশে বসেই পেতে পারেন বিদেশের স্বাদ।
জানা যায়, ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত কুর্গ (Coorg) ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তত্ত্বাবধানে। পরে তৎকালীন মাইসোর স্টেটের সঙ্গে যুক্ত হয়। সমুদ্র থেকে ৩৫০০ ফুট উঁচুতে কুর্গের অবস্থান। এই উচ্চতা, ঢালা পাহাড়, চারপাশের জঙ্গলের আলোকালো পরিবেশ কফি চাষের জন্য উপযুক্ত। কুর্গের কফি বাগান দুই রকম কফির জন্যে বিখ্যাত। অরেবিকা এবং রবাস্টা। অরেবিকা হল মাইল্ড এবং ভালো ফ্লেবার কফি। দাম স্বাভাবিক ভাবেই বেশি। বাইরে এক্সপোর্ট হয়। রবাস্টা হল স্ট্রং এবং থিক কফি। রবাস্টা কফির চাষ সহজ। পাশাপাশি বেশি দিন থাকে। তাই দাম কম। পাশাপাশি এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরনের মশলাপাতি এবং ওয়াইন।
অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। সবুজ বনাঞ্চলের শরীরে মিশে যায় ভাসমান মেঘ। দিনেরবেলায় আলো ঝলমলে পরিবেশ। সন্ধের পর নেমে আসে গভীর নির্জনতা।
কুর্গেরর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ আব্বি জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাতের টানে ছুটে আসেন বহু মানুষ। জলপ্রপাতটি কুর্গ থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে। মাদিকেরি শহর থেকেও ৫ কিলোমিটার দূরে। একটা জায়গা পর্যন্ত গাড়ি যায়। তারপর হাঁটা। কফি বাগানের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে যেতে মন্দ লাগবে না।
এর পাশাপাশি আছে আছে মন্দিকেরি দুর্গ। এই দুর্গ কুর্গেটর একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। আছে ব্রক্ষ্মগিরি হিলস। সুউচ্চ পাহাড় থেকে দেখা যায় প্রায় সমগ্র কুর্গ অঞ্চলকে। কুর্গের আছে অভয়ারণ্য দুবারে। সবুজ বনাঞ্চলে ঘুড়ে বেড়ায় হাতির দল।
ব্রহ্মগিরি পাহাড়ের তালাকাভেরি। কাবেরী নদীর উৎসস্থল। জায়গাটি মাদিকেরি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে একটি মন্দির আর পবিত্র কুণ্ড আছে। কাবেরী নদী এই কুণ্ড থেকেই বেরোয়। কুর্গ থেকে খুব বেশি দূরে নয়। তালাকাভেরিতে প্রতি বছর বহু মানুষ ভিড় জমান।তালকাভেরি যাবার পথে আছে ভাগ্মণ্ডল। এটা একটা পবিত্র স্থান বলে মনে করা হয়। অঞ্চলটি কাবেরী, কণিকা এবং সুয্যথী নদীর সংগম স্থল। মন্দির থেকে ৪০৭টি খাড়া সিড়ি চড়ে পাহাড়ের উপরে পৌঁছনো যায়। ওপরে উঠে দেখা যায় আশেপাশের পাহাড়ের পুরো রেঞ্জটা। সারা বছর পরিস্কার। তবে চারিদিক মেঘাচ্ছন্ন থাকে বর্ষাকালে।
রাজাস সিট আর একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখান থেকে দেখা যায় সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত। দিনের দুটি সময় বহু মানুষ ভিড় জমান।
আরও পড়ুন: বিলকিস বানো-কাণ্ড: মুখোশ খুলে বেরিয়ে এল মুখ
কুর্গের (Coorg) আর একটি দর্শনীয় স্থান ওমকারেশ্বর মন্দির। জানা যায়, ১৮২০ সালে তৈরি হয়েছে অসামান্য কারুকার্যে শোভিত মন্দিরটি। এখানে দেখা যায় বহু পর্যটকের ভিড়।
ঘুরে আসা যায় বাইল কুপ্পে থেকে। মাদিকেরি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। এই অঞ্চলটিকে ছোট তিব্বত বলা যেতে পারে। কারণ এখানে আছে তিব্বতিদের বসতি। দেখা যায় বেশ কয়েকটি তিব্বতি মনাস্ট্রি এবং ইউনিভার্সিটি। আছে রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স। বুদ্ধের স্বর্ণ মন্দির এই অঞ্চলের এক বিশেষ আকর্ষণ। মন্দির কমপ্লেক্সে আছে তিব্বতি মঁকদের থাকার জায়গা এবং একটি সুন্দর বাগান। মন্দিরের ভিতরে দেখা যায় ৪০ ফুট উঁচু বুদ্ধ মূর্তি। বহু মানুষ আসেন।
জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত কাবেরী নিসর্গধাম। কাবেরী নদীকে ঘিরে ৬৪ একর এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে অঞ্চলটি। এছাড়াও আছে আরও অনেকগুলো বেড়ানোর জায়গা।
আপনি যদি প্রকৃত পর্বতপ্রেমী হন এবং পাহাড়ের চূড়া থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাহলে কুর্গ আপনার জন্য আদর্শ জায়গা হতে পারে। ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হবে অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে। পুজোর সময় প্রকৃতি সেজে ওঠে অপরূপ সাজে। কী ভাবছেন, এবারের পুজোর ছুটিতে বেরিয়ে পড়বেন? তাহলে নিতে শুরু করুন প্রস্তুতি।
কীভাবে যাবেন?
কুর্গ-এ নেই কোনও বিমানবন্দর বা রেল স্টেশন। যে কোনও বড় শহর থেকে ট্রেনে অথবা ফ্লাইটে যেতে হবে বেঙ্গালুরু। ওখান থেকে বাস, ট্যাক্সি করে মাদিকেরি। বেঙ্গালুরু থেকে মাদিকেরি ২৬০ কিলোমিটার দূর। ভলভো বাস সার্ভিস ৬ ঘন্টায় পৌঁছে দেয়। মাদিকেরি থেকে যেতে হবে কুর্গ।
মাদিকেরির কাছাকাছি বড় রেলওয়ে স্টেশন মাইসোর জংশন। মাইসোর থেকে মাদিকেরির দূরত্ব ১১৭ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া করে যেতে হবে। সময় লাগে আড়াই ঘণ্টার মতো।
কোথায় থাকবেন?
কুর্গ এবং মাদিকেরিতে আছে ছোটবড় বেশ কয়েকটি হোটেল, রেস্ট হাউস। যাওয়ার আগে যোগাযোগ করে গেলেই ভাল হয়।