অরিওল পাওলো পরিচালিত স্প্যানিশ ছবি ‘মিরাজ’-এর অফিসিয়াল রিমেক হল ‘দো বারা’ (Dobaaraa)। অরিজিনাল ছবিটিই যথেষ্ট জটিল অনেকগুলো উপাদান নিয়ে। অনুরাগ নিজের মতো করে সেসব উপাদানের অনুপাত বাড়িয়ে-কমিয়ে নিলেও বলিউডি প্রেক্ষিতে এ ছবিও খুব সোজা-সাপটা নয়। অর্থাৎ মাথা হালকা করে মুভি দেখার মজা নিতে গেলে মুশকিলে পড়বেন। কারণ ছবির শুরু থেকে শেষ, মাথা বন্দি থাকবে পর্দায়। কী থেকে কেন, কীভাবে, টানটান এসব ভাবতে ভাবতেই কখন ছবি শেষ তা দর্শক বুঝতে পারবেন না। কিন্তু মাথা ঝিমঝিম করবেই, গলা শুকিয়ে আসবেই। কারণ সাই-ফাই অর্থাৎ টাইম ট্রাভেল, রোম্যান্টিক কমেডি এবং থ্রিলার তিন ধরনের ঘরানাকে একত্রিত করে গল্প সাজানো হয়েছে ‘মিরাজ’-এ এবং ‘দো বারা’তেও। তবে সরাসরি ‘মিরাজ’-এর বাংলা ‘মরীচিকা’ না রেখে ছবির নাম কেন ‘দো বারা’ রাখা হয়েছে তা-ও বোঝা যাবে ছবি দেখলেই। ইদানীং বলিউডে ফ্লপ ছবির তালিকা যখন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে, বিগ বাজেট, মেগাস্টার কোনও ফ্যাক্টরই যখন কার্যকরী হচ্ছে না, তখন এই এক্সপেরিমেন্টাল ছবি, রিলিজের শুরু থেকেই যে দর্শক মনে ছাপ ফেলেছে তার কৃতিত্ব যতটা অনুরাগের, ততটাই তাপসীর। কারণ যেটুকু খামতি চিত্রনাট্যে ছিল তার পুরোটাই নিজের অভিনয়ের মাধ্যমে পুষিয়ে দিয়েছেন তাপসী। পর্দা থেকে চোখ সরাতেই দেননি তিনি। শিরদাঁড়া সোজা করে দর্শক বসে থাকতে বাধ্য হয়েছে। আর পয়সা উসুল সেখানেই।
ছবির (Dobaaraa) প্রচারে শহরে এসেছিলেন অনুরাগ, তাপসী, ছবির নায়ক পাভেল গুলাটি ও অন্যতম প্রযোজক একতা কাপুর। প্রত্যেকের কথায় যে আত্মবিশ্বাসের ছাপ ছিল তারই প্রতিফলন পাওয়া গেছে পর্দায়। একটাই আবেদন ছিল তাঁদের, ছবিটা দেখতে হল-এ আসুন আর দর্শক সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে ঠকেননি। যদিও অনুরাগ বরাবরের মতোই এবারও স্পষ্টবক্তা ছিলেন, “কয়েকশো কোটি টাকার ছবি আমি কোনওদিনই বানাই না, তাই ছবি মুখথুবড়ে পড়লে পথে বসার আতঙ্ক আমার কোনওদিনই থাকে না। আমি আমার মতো করে দর্শকদের একটা সিনেমা এক্সপিরিয়েন্স করাতে চাই। কিছু সময় সফল হই, কিছু ক্ষেত্রে ব্যর্থ। তাই অনিশ্চয়তা থাকেই কিন্তু আতঙ্ক নয়।” এ ছবি রিমেক হলেও তাই অনুরাগ স্প্যানিশ ছবিটির ফ্লেভার অক্ষুণ্ণ রেখেও স্বকীয়তার ছাপ রেখে চলেছেন।
আরও পড়ুন: বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পত্তির মামলা দায়ের
ছবির প্রাথমিক টাইম লাইন ১৯৯৬ থেকে ২০২১। অনুরাগ পাক্কা হিন্দি ছবির মেজাজ দিয়েই শুরু করেন। প্রথমেই শোনা যায় কিশোরকুমারের কণ্ঠে ‘আনেওলা পল জানেওয়ালা হ্যায়’-এর মতো কালজয়ী গান। বলা যায় টাইম ট্রাভেলের প্রিলিউড এটা! টাইটেল কার্ড দেখানোর আগেই একটা খুন হয়ে যায়। গল্প এরপর সরলরেখায় এগোলেও সময়ের খেলা শুরু হয়ে যায় আর সমানে বদলাতে থাকে স্থান-কাল-পাত্র। এক ভীষণ বজ্র-বিদ্যুৎ-ঝড়-বৃষ্টির দিনে অন্তরা (তাপসী) এবং বিকাশ (রাহুল), তাদের একমাত্র মেয়ে অবন্তীকে সঙ্গে করে পুনে শহরে নতুন বাড়িতে ভাড়ায় আসে। স্থানীয় এক হাসপাতালে নার্সের কাজ করে অন্তরা আর বিকাশ পাঁচতারা হোটেলে নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান। দুজনের সম্পর্ক প্রায় তলানিতে। মেয়ের দিকে তাকিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার চেষ্টা উভয় তরফেই চলে। একটি পার্টিতে অন্তরার বন্ধু অভিষেক গল্প করে, যে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছে অন্তরা সেখানে ২৫ বছর আগে একটা ঘটনা ঘটে। অনয় বলে একটি বাচ্চা, যে তখন অভিষেকের সঙ্গেই এক স্কুলে পড়ত, সে তার প্রতিবেশী রাজা ঘোষকে তার স্ত্রীকে খুন করা অবস্থায় দেখে ফেলে এবং ফলশ্রুতিতে রাজার তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ির ধাক্কায় মারা যায়। ঘটনাটা শোনার পর অন্তরার মনে এক গভীর প্রভাব পড়ে আর এরপরেই অদ্ভুত এক সূত্র ধরে অন্তরার সঙ্গে অনয়ের যোগাযোগ স্থাপিত হয়। না, ভৌতিক কোনও উপস্থিতি নয়, এখানেই টাইম-ট্রাভেলের খেলা শুরু হয়। শুরু হয় বাস্তব- কল্পনা-স্বপ্ন-ধাঁধার টানটান জার্নি। কারণ পরদিন থেকেই অন্তরা টের পায় তার জীবনটা কয়েক বছর পিছিয়ে গেছে। তার মেয়ের খোঁজ নেই, তার স্বামী তাকে চেনে না, এমনকী তার স্ত্রীও অন্য কেউ, হাসপাতালে তাকে সবাই ডক্টর বলে ডাকে। এরকম একটা ভয়ানক ক্রাইসিসে পুলিশ অফিসার চন্দন তার পাশে দাঁড়ায়। পুরো ছবিতে একাধিক বাস্তবের উপস্থিতি। দর্শক কোনটা গ্রহণ করবেন এটা একান্তই আলাদা আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি। টাইম ট্রাভেলের ঘরানাই হচ্ছে গুলিয়ে দেওয়া, অনুরাগ সেখানে সফল।
ছবিতে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় আছেন রাজা ঘোষের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে। তাপসীর সঙ্গে দৃশ্য না থাকলেও চরিত্রের পরিসর দীর্ঘ। শাশ্বত করেছেনও দুর্দান্ত। যদিও ছবির টিম প্রমোশনে শহরে আসার সময় কেন তাঁকে সেখানে দেখা গেল না, তা অনেককেই অবাক করেছে। ক্লাইম্যাক্সে সামান্য তাল কাটলেও নিহিত ভাবে-র লেখা চিত্রনাট্য টানটান। অনুরাগের কাল্ট ছবিগুলির সমকক্ষ না হলেও, ‘দো বারা’ (Dobaaraa) তাঁর সফল ছবির একটি বলা যেতেই পারে।