দুই নায়কের দৌড়

গতকাল মুক্তি পেয়েছে হেভিওয়েট দুই নায়ক অক্ষয়কুমার ও আমির খানের দুই ছবি ‘রক্ষাবন্ধন’ ও ‘লাল সিং চাড্ডা’। ঠিক এর আগের ছবিগুলি দুজনেরই সেভাবে চলেনি। তাই স্নায়ুর চাপে দুই সুপারস্টারই। মুখে যদিও চাপের কথা না বলে আশার কথাই শুনিয়েছেন দুজন। বাকিটা ছেড়ে রেখেছেন দর্শকের ওপর। ছবি দুটি সম্পর্কে জানালেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

তিন খানের দাপটে বরাবরই তিনি যেন পরের সারিতে। যদিও অঙ্ক বলে তিনি প্রোডিউসারের চোখ বুজে ভরসা রাখার হিট-মেশিন। কিন্তু কোভিডোত্তর বলিউডে তিনিও ফেল। মুক্তিপ্রাপ্ত শেষ দুটি ছবি ‘বচ্চন পাণ্ডে’ ও ‘সম্রাট পৃথ্বীরাজ’ মোটেই আশানুরূপ ব্যবসা দিতে পারেনি। তাই এবার ভরসা রেখেছেন পুরোপুরি ফ্যামিলি ড্রামার উপরে। গতকাল মুক্তি পেয়েছে অক্ষয়কুমার-ভূমি পেডনেকর অভিনীত ‘রক্ষাবন্ধন’ (Raksha Bandhan- Lal Singh Chaddha)। ‘টয়লেট— এক প্রেম কথা’র পর দুজনে ফের একসঙ্গে। যদিও ছবির গল্প বোনা হয়েছে ভাই-বোনের সম্পর্ককে কেন্দ্র করেই।

চার বোনের একমাত্র দাদার চরিত্রে অক্ষয়। বোনেদের বিয়ের দায়িত্বও স্বাভাবিকভাবে দাদার কাঁধে। এবং সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে চার বোনের বিয়ে দেওয়া কতটা কঠিন, সেই সঙ্গে যদি বিয়ের জন্য পাত্রপক্ষের দাবি পূরণ করতে হয় তবে সেই পরিবারকে কী অসহায়তার মধ্যে পড়তে হয় তাই দেখানো হয়েছে ছবি জুড়ে। সংসারের গুরুদায়িত্ব পালনে নিজের ভালবাসার মানুষকেও কতটা সময় দূরে সরিয়ে রাখতে হয় সেই আবেগঘন টানাপোড়েনও আছে ছবির গল্পে। সব মিলিয়ে লার্জার দ্যান লাইফ ছবির ফ্রেম থেকে সরে এসে অক্ষয় ফের ঘরমুখী!

“এ ছবির ক্রাইসিস মাটির কাছাকাছি। সাধারণ জনগণের তাই ‘কানেক্ট’ করতে অসুবিধে হবে না বরং একাত্ম ফিল করবে,” ছবির প্রচারে শহরে এসে এমনটাই জানালেন পরিচালক আনন্দ এল রাই। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আজকাল সব ছবিকেই দর্শকের চুলচেরা বিচারের মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এ ছবিও ব্যতিক্রম নয়। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, ‘রক্ষাবন্ধন’ পণ-প্রথার পক্ষে কথা বলেছে। এ প্রসঙ্গে স্বয়ং অক্ষয়কুমার জানালেন, “সব ছবির পিছনেই প্রচুর টাকা লগ্নি করা হয়। জড়িয়ে থাকে অনেক মানুষের ঘাম-ঝরা পরিশ্রম, আশা, স্বপ্ন। তাই ছবি বয়কটের ডাক না দিয়ে ছবি দেখুন। ব্যক্তিগত মতামত তো থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা নিশ্চিত, কারও আবেগে ঘা দেওয়ার মতো কাজ করিনি।’’ ‘খিলাড়ি’ সুপারস্টারও প্রচারে এসে দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মল-এ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। অক্ষয়ের চার বোনের ভূমিকায় আছেন দীপিকা খান্না, সাদিয়া খাটিব, স্মৃতি শ্রীকান্ত, শাহেজমিন কৌর। ঝটিকা সফরে সঙ্গে এসেছিলেন তাঁরাও। ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন হিমাংশু শর্মা ও কণিকা ধীলন।

আরও পড়ুন: অর্থপাচার রোখার আইন অপব্যবহার অব্যাহত

‘পৃথ্বীরাজ’ সুপারফ্লপ হওয়ার পর অক্ষয়ের আশা একটা সুপার হিটের। কিন্তু যেহেতু এবার খোলা ময়দান পাচ্ছেন না, একই দিনে মুক্তি পাচ্ছে সুপারস্টার আমির খানের বহু প্রতীক্ষিত ‘লাল সিং চাড্ডা’ (Raksha Bandhan- Lal Singh Chaddha) তাই সংশয় একটা রয়েই গেছে। দর্শক ভাগ হওয়ার আশঙ্কা শুধু নয়, আমির খানের ক্যারিশমাও কারণ। তার প্রমাণ ছবি মুক্তির আগেই মিলেছে। আমিরের ছবি ঘিরে দ্বিগুণ বিতর্ক সত্ত্বেও অ্যাডভানস বুকিং-এ এগিয়ে ছিল হলিউড কাল্ট ‘ফরেস্ট গাম্প’ অনুপ্রাণিত ছবি ‘লাল সিং চাড্ডা’ই। টুইটারে অনেকদিন হল ট্রেন্ডিং, বয়কট ‘লাল সিং চাড্ডা’। কিন্তু পাশাপাশি চর্চিত ছবির খুঁটিনাটিও! এমনিতেই আমির-করিনা জুটিকে দর্শক দেখবেন বহুদিন পর। ‘থ্রি ইডিয়টস’ ও ‘তালাশ’-এ ওঁদের কেমিস্ট্রি আজও টাটকা সবার মনে। সেই সঙ্গে টম হ্যাংক্স অভিনীত ছবিটিতে ছিল একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্য। তার কতটা আমির রেখেছেন, কীভাবে রেখেছেন তা নিয়ে চর্চা। একইরকম আলোচিত ছবির টেকনিক্যাল স্টান্টও। ছবির একটি গানের একটি শট নাকি দীর্ঘতম শটগুলির অন্যতম। এ-ছাড়া শুরু থেকেই ছবিটি প্রচারে। কলকাতা, কেরল, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান, গোয়া, লাদাখ-সহ ১০০টি লোকেশনে শুটিং হয়েছে ছবিটির। তামিল ও তেলুগুতেও এই ছবি দেখানো হবে।
উইনস্টন গ্রুমের লেখা ‘ফরেস্ট গাম্প’ উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে ১৯৯৪-এ রবার্ট জেমেকিসের পরিচালনায় তৈরি হয়েছিল ‘ফরেস্ট গাম্প’ ছবিটি। প্যারামাউন্ট পিকচার্স-এর কাছ থেকে ছটি অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও একাধিক পুরস্কারজয়ী ছবিটির স্বত্ব পেতেই দশ বছর সময় লাগে। আমিরের এই ছবিটি করতে রাজি হওয়া নিয়েও দীর্ঘ টালবাহানা ছিল। অনুকরণ ছবি করতে আপত্তি ছিল মিঃ পারফেকশনিস্ট-এর। শেষে দফায় দফায় অনুরোধের পর রাজি হন অতুল কুলকার্নির চিত্রনাট্য শুনতে। ফরেস্ট-এর চরিত্রটির নাম বদলে রাখা হয় ‘লাল সিং চাড্ডা’। ফরেস্ট-এর বান্ধবীর যে চরিত্রে ছিলেন রবিন রাইট, করিনা অভিনয় করেছেন তাতে এবং ফরেস্টের প্রিয় বন্ধু ‘বাব্বার’-এর যে চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন মাইকেটি উইলিয়ামসন, সেটি করেছেন তেলুগু অভিনেতা নাগা চৈতন্য। চরিত্রটির নাম রাখা হয়েছে বালারাজু। একটি ক্যামিও চরিত্রে আছেন স্বয়ং শাহরুখ খান। সব মিলিয়ে ছবির কাস্টিং থেকে শুটিং, প্রচার— কোথাও খামতি রাখা হয়নি। অক্ষয়ের মতো আমিরও মরিয়া একটা সুপারহিটের জন্য। ২০১৮-তে ‘থাগস অব হিন্দুস্তানি’ বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ার চার বছর পর আমিরের এই ছবি।
কাজেই কোভিড-পরবর্তী সময়ে যেখানে দক্ষিণি ছবির কাছে ক্রমশ কোণঠাসা বলিউড সেখানে এই জোড়া ছবি হিন্দি ইন্ডাস্ট্রির ভাগ্য কতটা ফেরাতে পারে আগামী এক সপ্তাহে সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে সবাই।

Latest article