নামটুকুই রাজত্বের ইঙ্গিতবাহী, বাকি বৃত্তান্ত নেহাতই আটপৌরে। ঝলসানো রূপ নেই, মারকাটারি চেহারা নেই, সুললিত কণ্ঠ নেই, সেই সঙ্গে মিডিয়ায় অকারণ হইচই আগেও ছিল না, হালফিলের সোশ্যাল মিডিয়াতেও নেই, একাগ্র হয়ে শুধু নিজের লক্ষ্যপূরণের শিখরে পৌঁছতে একের পর এক ধাপ পার হওয়া। হ্যাঁ, বাঙালি কন্যের বলিউড বিজয় এভাবেই ঘটেছিল। আবার এরই পাশাপাশি বাকি পাঁচটা সাধারণ মেয়ের মতো প্রেমে পড়া, প্রেমকে দৃঢ়তার সঙ্গে পরিণতি দেওয়া এবং বিয়ের পর গুছিয়ে ঘর-সংসার করা, মা হওয়া ও তারপর সন্তানকে জীবনের সমস্ত কাজ থেকে অধিক প্রায়োরিটি দেওয়া— এই হল রানি। আর এতকিছুর পর ‘বান্টি অউর বাবলি টু’-এর ট্রেলার কিংবা প্রোমশনাল গানের সঙ্গে নাচ দেখে বোঝার উপায় নেই রানি মুখার্জি ইন্ডাস্ট্রিতে ২৫ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন! এক কথায় অনবদ্য। চূড়ান্ত ফোকাসড না হলে নিজেকে এভাবে এক রাখা যায় না। আজ দর্শক হলমুখী হবেন মূলত তাঁর জন্যই। কারণ তাঁদের স্মৃতিতে আজও টাটকা ‘ভিম্মি সালুজা’ ওরফে ‘বাবলি’র কীর্তিকলাপ। রানি মুখার্জি অভিনীত জনপ্রিয় চরিত্রগুলির অন্যতম।
‘বান্টি অউর বাবলি’র গল্প যেখানে শেষ হয়েছিল, সেখান থেকেই শুরু হচ্ছে এই সিকোয়েলের কাহিনি। তাই দর্শক-মনে রেশ থেকে যাবে এমনিতেই। তবে রাকেশ ত্রিবেদীর চরিত্রে অভিষেক বচ্চনের জায়গায় এবার সইফ আলি খান। যে চাকরি নিয়ে বাবার সঙ্গে মনান্তরের ফলে বাড়িছাড়া হয়েছিল রাকেশ, বর্তমানে বাবার মতোই সে সেই টিকিট কালেক্টরের চাকরি করে আর ভিম্মি তার মিস ইন্ডিয়া হওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে এখন ফ্যাশন ডিজাইনার। দুজনে সংসারী হয়েছে। তবে রাকেশকে বিয়ে করে ভিম্মি ওর পৈতৃক গ্রাম ফুরসতগঞ্জে এসে সংসার পাতলেও নিপাট গৃহবধু হিসাবে দিন কাটানোর কথা ও এখনও ভাবতে পারে না, তাই মাথা খাটিয়ে বেছে নিয়েছে এই পেশা। রাকেশের কোনও আপত্তি নেই এতে, কারণ স্বপ্ন দেখতে তো ও-ও ভালোবাসে, শুধু ভাগ্য সাথ দেয়নি বলে পাকেচক্রে আজ নিজের স্বপ্ন সাকার করতে পারেনি। তাই ভিম্মির ফ্যাশনের ধরন-ধারণ নিয়ে ওর মনে প্রশ্ন থাকলেও নিরুৎসাহিত করে না। কারণ মনে মনে নিজেদের উত্তেজনাপূর্ণ জীবন দুজনেই লালন করে, দুজনেই মিস করে। এই সময়েই দেখা হয়ে যায় নতুন ‘বান্টি-বাবলি’ জুটির সঙ্গে। অর্থাৎ এবার দর্শক দেখতে পাবেন এক জোড়া বান্টি-বাবলিকে। এই চরিত্র দুটি করছেন, ‘গাল্লি বয়’খ্যাত সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী ও নবাগতা শর্বরী ওয়াঘ। কীভাবে এই দু-জোড়া জুটি তাদের খেল দেখায় তা দেখার জন্যই আজ হলে যেতে হবে দর্শকদের।
আরও পড়ুন: Chief Minister Mamata Banerjee : দাবি আদায়ে দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
ছবির বড় অংশের শুটিং হয়েছে আবু ধাবিতে। ওখানকার এমিরেটস প্যালেসে। বাবা-মায়ের সঙ্গে ছবির আউটডোর শ্যুটিংয়ে হাজির ছিল রানি-কন্যা আদিরাও। মা এ ছবির নায়িকা, বাবা প্রোডিউসার। ফলে পাঁচ বছরের আদিরাও খুব মজা করেছে। জ্ঞান হওয়ার পর এই প্রথম সে মাকে নতুন ছবিতে পর্দায় দেখবে। এ জন্য রানি নিজেও খুব উত্তেজিত। ছবি দেখে মেয়ের মতামত জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। ‘বান্টি অউর বাবলি’র গল্প আদিত্য চোপড়া নিজে লিখলেও দ্বিতীয়ভাগে সে দায়িত্ব নেননি। পরিচালক বরুণ ভি শর্মাই এই ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন। আর খোদ অমিতাভ বচ্চনের জায়গায় এবার পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় পঙ্কজ ত্রিপাঠী।
রানি নিজে সইফের সঙ্গে জুড়ি বেঁধে দারুণ খুশি। একসঙ্গে এর আগে একাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। দুজনের বোঝাপড়া ও রসায়ন নিয়ে কোনও প্রশ্নই নেই তাই। দর্শক এই জুটিকে অলরেডি মার্কস দিয়ে রেখেছেন। আর সইফের কমিক টাইমিং রানি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেন। সইফ নিজেও জানিয়েছেন, এ ছবি করতে গিয়ে কত মজা করেছেন। রানির সঙ্গে কাজ করা যে সব সময়েই দারুণ উপভোগ্য তা-ও বলেছেন আর যে কথা নায়ক-নায়িকা দুজনেই বলেছেন, যে, তাঁদের দুজনের জুটি এতটাই মজাদার আর এতই দুর্দান্ত দেখতে লাগে পর্দায়, দুজনকে জুটি করে আরও বেশি ছবির কথা ভাবা উচিত সকলের!
বাকি যে কারণটিতে রানি নিজে খুব খুশি, তা হল, অনেকদিন পর মনের শখ মিটিয়ে সাজতে পেরেছেন, ইচ্ছেমতো ড্রেস পরতে পরেছেন আর পেরেছেন চুটিয়ে নাচতে। কারণ গত কয়েক বছরে ছবি করা রানি একেবারেই কমিয়ে দিয়েছেন। ‘মর্দানি’ সিরিজ ও ‘হিচকি’ এগুলিতেই অভিনয় করেছেন। প্রত্যেকটি ছবি দর্শক দারুণ পছন্দ করেছেন, ছবি হিট। কিন্তু হলে কী হবে চরিত্রগুলি এতই অন্য ধরনের যে সাজগোজ বা নাচ-গানের সুযোগ ছিল না। এ ছবিতে সে শখ মিটিয়ে নিয়েছেন। নিজেকে কমার্শিয়াল বা মেনস্ট্রিম ছবির হিরোইন বলতে দ্বিধা করেন না কোনওদিনই। তাই অনেকদিন পর পুরোদস্তুর কমেডি ছবিতে অভিনয় করতে পেরে খুব খুশি নিজে। আপাদমস্তক পারিবারিক এই ছবি যে সব বয়সের সব রকম দর্শক উপভোগ করবেন এ ব্যাপারে নিশ্চিত রানি।